ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস সমিতির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে আহ্বান

সমাজের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইতিহাস বিকৃতি রোধ করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৬ মে ২০১৫

সমাজের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইতিহাস বিকৃতি রোধ করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে ইতিহাস তুলে ধরা ইতিহাসবিদদের পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে ইতিহাসবিদদের নিষ্ঠার পরিচয় দিতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস চর্চার পাশাপাশি দায়িত্ব পালনে সততার পরিচয় দিতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে ইতিহাস বিকৃতি রোধ করতে হবে। দেশে আর্কাইভাল আইন চালু করার সিদ্ধান্ত হলেও মন্ত্রিপরিষদে অজানা এক কারণে তা অনুমোদন পায়নি। দেশে ঐতিহাসিক দলিল সঠিকভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে না। সরকারী প্রতিষ্ঠানও তাদের গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড সংরক্ষণ করে না। ঐতিহ্যগত বহু স্থাপনা কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে; রক্ষিত হয়নি সেসব স্থাপনার ইতিহাস। কাছারিবাড়ি, জমিদারবাড়ির সমস্ত ইতিহাস ধ্বংস হয়ে গেছে। গ্রামবাংলার স্থানীয় বহু ইতিহাস রক্ষণের উদ্যোগও নেয়নি কেউ। ফলশ্রুতিতে ইতিহাসবিদরা গ্রামীণ বাংলাদেশের পূর্ণ ইতিহাস লিখতে পারবে না, খ-িত ইতিহাস লিখতে হবে। শুক্রবার জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির অষ্টাদশ দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ও প্রবন্ধ পাঠকালে বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে ইতিহাস তুলে ধরা ইতিহাসবিদদের পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে ইতিহাসবিদদের নিষ্ঠার পরিচয় দিতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস চর্চার পাশাপাশি দায়িত্ব পালনে সততার পরিচয় দিতে হবে। সমাজের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইতিহাস বিকৃতি রোধ করতে হবে। অধ্যাপক শরীফ আহমেদ তার ‘ইতিহাসের উৎস: পুরোনো নথিপত্র ও দলিলদস্তাবেজ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠকালে বলেন, ইতিহাস রক্ষা করতে অনেক পন্থা অবলম্বন করতে হয়। অবশ্য তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। ব্রিটিশ আমলে এ দেশে বহু রেকর্ড সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়েছে, আবার ধ্বংসও করা হয়েছে। ইতিহাস রক্ষায় দেশে পুরনো কোন নথিপত্র রাখতে দেবে না, যেন এমন প্রতিযোগিতা চলছে। কাছারিবাড়ি, জমিদারবাড়ির সমস্ত ইতিহাস ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে ইতিহাসবিদরা গ্রামীণ বাংলাদেশের পূর্ণ ইতিহাস লিখতে পারবে না, খ-িত ইতিহাস লিখতে হবে। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ডগুলো আছে, তবে তা বিচ্ছিন্ন। নানা কারণে আর্কাইভস গঠন করা হচ্ছে না। যে রেকর্ডগুলো আছে তা আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ এখন সময়ের দাবি। তবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করার ক্ষেত্রে আমাদের উপাত্ত নেই, চর্চাও নেই। অধ্যাপক আলী আকবর তার ‘ইতিহাস চর্চার মূল উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ- ব্রিটিশ আমল’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠকালে বলেন, ব্রিটিশরা যদি কোন রেকর্ড না রেখে যেত তাহলে আমরা কোন ইতিহাসই পেতাম না। দেশে আর্কাইভাল রেকর্ড সরকারী ও বেসরকারী দুই পর্যায়ে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। সচিবালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত মন্ত্রণালয়সমূহের রেকর্ড সংরক্ষিত হতো সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় রেকর্ডরুমে। তবে এখন ওখানে মাত্র দু’একটি রেকর্ডরুম রয়েছে! সচিবালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্রও সঠিকভাবে রেকর্ড হয় না। ফলে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডও আমরা খুঁজে পাব না। এ বিষয়ে সকলের সচেতন হওয়া দরকার। অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন তার ‘ইসলাম ও ইতিহাস’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠকালে বলেন, ধর্ম ও ইতিহাসের মধ্যে অন্তঃসম্পর্ক আছে কিনা তা নিয়ে নানা মত থাকলেও ধর্মের সঙ্গে ইতিহাস সম্পর্কিত। তবে নিয়তি ও ভবিষ্যত ইতিহাসের বাইরে। আর ইতিহাসের পটভূমি ছাড়া কোন ঘটনা ঘটে না। মোহাম্মদ জাকারিয়া তার ‘জন ইতিহাসের ধারায় স্থানীয় নিম্নস্তর হিসাবে গ্রাম’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠকালে বলেন, গ্রামের ইতিহাস রক্ষা করতে হবে। গ্রামবাংলার ইতিহাসের সঙ্গে সমাজের সম্পর্ক নিবিড়। স্থানীয় পর্যায়েও ইতিহাস সংরক্ষণে মনোনিবেশ করতে হবে। ইতিহাস সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এইচ আহমেদ কামাল সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ইতিহাস প্রেমিক কর্মীর ঐকান্তিক ও নিরলস শ্রমের ফলেই এ আয়োজন সম্ভব হয়েছে। আর্কাইভস সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। এ সম্পর্কে ইতিহাসবিদরা সচেতন থাকলেও যাদের সচেতন হওয়া দরকার তারা সচেতন কিনা সন্দেহ। সম্মেলনের প্রথমদিনে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রায় ৩০০ ইতিহাসবিদ দ্বিবার্ষিক ওই সম্মেলনে অংশ নেন।
×