ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা নেই, ২১ বছরে ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছে মাত্র পাঁচটি

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৬ মে ২০১৫

গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা নেই, ২১ বছরে ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছে মাত্র পাঁচটি

মুহাম্মদ ইব্রাহীম সুজন ॥ ১৯৯৪ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি দলীয় গঠনতন্ত্র মেনে প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর গঠিত হতো। কিন্তু এর পরবর্তী সময়ে গঠনতন্ত্রের এই নিয়ম আর মেনে চলা হয়নি। এই সময়ের পর থেকে প্রতিটি কমিটিই চার-পাঁচ বছর সময় ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গত ২১ বছরে ছাত্রলীগের দশটি কমিটির জায়গায় হয়েছে মাত্র পাঁচটি কমিটি। ফলে এই সময়ের মধ্যে সংগঠন থেকে ১০ জন সভাপতি এবং ১০ জন সাধারণ সম্পাদক কম হয়েছে। সংগঠনের অতীত রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্ব পালন করেন লিয়াকত শিকদার ও নজরুল ইসলাম বাবু। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ছিলেন বাহাদুর ব্যাপারী ও অজয় কর খোকন। ৯৪ থেকে ৯৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন এনামুল হক শামীম এবং ইসহাক আলী খান পান্না। ব্যতিক্রম ছিল কেবল মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী ও ইকবালুর রহিম কমিটি। এরা ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে গঠনতন্ত্র অনুসারে দুই বছরের মাথায় সম্মেলন করে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এরপরে আবারও কমিটি গঠনে কাল বিলম্বের শুরু হয়। সেই প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় সম্মেলন না হওয়ায় বয়সের কারণে আসন্ন ২৮তম সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের যোগ্যতা থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন সক্রিয় ও পরিশ্রমী ছাত্রনেতা। গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে দুই বছরের জায়গায় চার বছর মেয়াদ পার করে গত সাত মে শুক্রবার আগামী ২৫ ও ২৬ জুলাই কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ হিসেবে ঘোষণা করেন বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। গঠনতন্ত্র অনুসারে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার বয়সসীমা সর্বোচ্চ ২৭ নির্ধারিত রয়েছে। ২০০৬ সালের সম্মেলনে সংগঠনটির নেতাদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৯ বছর নির্ধারণ করা হয়। এ নিয়মে বর্তমান কমিটির অন্তত অর্ধশতাধিক নেতা বয়সের কারণে আগামী কমিটিতে কেন্দ্রীয় সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুযোগ হারাবেন। বর্তমান নেতৃত্ব যদি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর আগে কেন্দ্রীয় সম্মেলন দিতেন, তাহলে এই বিপুল সংখ্যক নেতৃত্ব নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পেতেন। সংগঠনের সহ-সভাপতি জয়দেব নন্দী, আব্দুল কাদের মহিউদ্দিন মাহি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির রাহাত, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, হাসানুজ্জামান তারেক, সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান আসাদ, দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ, দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুর রহমান সরকার, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক নূরে আলম, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক অহিদুর রহমান জয়, স্কুল ও ছাত্র বৃত্তি বিষয়ক উপ-সম্পাদক সালমান হোসেনসহ এ রকম আরও অনেকেই আছেন এই তালিকায়। সংগঠন থেকে অছাত্রদের বাদ দিয়ে তরুণ, নিয়মিত ছাত্রদের রাখার জন্যই মূলত সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমা ২৯ বছর করা হয়। কিন্তু সময়মতো সম্মেলন না হওয়াতে সে উদ্দেশ্যটিও ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ম অনুযায়ী উপরের তালিকার এমনও অনেক নেতা আছেন যাদের বয়স সামনের মাসেই শেষ হচ্ছে। অর্থাৎ ২৯-এর বেশি হয়ে যাচ্ছে। যদি অন্তত আরও এক মাস আগে কেন্দ্রীয় সম্মেলন করা সম্ভব হতো, তাহলে অর্ধশতাধিক পরিশ্রমী ও যোগ্য নেতা-কর্মী সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিযোগিতা করতে পারতেন। সংগঠনটির এমন বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে জনকণ্ঠের। তারা অভিযোগ করে বলেছেন, তাদের বাদ দিতেই বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ইচ্ছাকৃতভাবে আগামী ২৫-২৬ জুলাই সম্মেলনের তারিখ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এর ফলে অনেকেই আর কাক্সিক্ষত পদের জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে পারবেন না। আগামী সম্মেলনে সংগঠনের নীতি নির্ধারকদের বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত বলেও মনে করেন তারা। সংগঠনটির ২৭তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনেও এই কারণে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বাদ পড়েন। ২০০৬ সালের শেষের দিকে গঠিত ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন মাহমুদুল হাসান রিপন এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল এবং প্রচার সম্পাদক আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বলসহ আরও বেশ কয়েকজন বয়সের এই ‘জটিলতার’ কারণে বাদ পড়েছিলেন। সংগঠনটির সাবেক কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জনকণ্ঠকে বলেন, নিয়মিত সময়ে সম্মেলনের ব্যবস্থা করা গেলে এই জটিলতা থেকে বের হওয়া সম্ভব। তাহলে পরিশ্রমী বা যোগ্য যাই বলা হোক না কেন সবাই প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পাবে। তবে এসব অভিযোগ ও আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। তিনি জনকণ্ঠকে এ বিষয়ে বলেন, ‘ছাত্রলীগের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা কিংবা তারিখ পেছানোর ক্ষমতাও আমাদের নেই। আমাদের সবকিছুর উপরে রয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যা বলেন, সে অনুযায়ীই সবকিছু হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বয়সের এই জটিলতার বাইরেও আরও অনেক যোগ্য নেতৃত্ব রয়েছেন। যারা যথেষ্ট নেতৃত্বগুণসম্পন্ন এবং পরিশ্রমী। আমাদের কিছুই করার নেই। গত ৬৮ বছরে ছাত্রলীগের ২৮বার সম্মেলন হয়েছে। বিভিন্ন কারণে সম্মেলন হতে একটু বিলম্ব হয়েই থাকে। কিন্তু তাতে সংগঠনের উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। এ বিষয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের মন্তব্য জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
×