ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভাসমান অভিবাসীদের বাঁচাতে সমন্বিত চেষ্টা চালানোর আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ;###;৭ ট্রানজিট শিবিরে রয়েছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা-বাংলাদেশী

সাগরে আহাজারি

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৬ মে ২০১৫

সাগরে আহাজারি

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেমিয়ার সাগর ও উপকূল অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে মানব ঢল। চলছে নিজেদের রক্ষা ও বেঁচে থাকার জন্য আহাজারি। এ যেন মানবিক বিপর্যয়। দিন যতই যাচ্ছে ততই স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়াগামী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক ও বাংলাদেশী হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর অপমৃত্যু, সাগরে অনাহারে-অর্ধাহারে ভেসে থাকা, বন্দীশিবিরে আটকে থাকা, গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ এবং গণকবরে লোমহর্ষক চিত্র বেরিয়ে আসছে। সর্বশেষ মালয়েশিয়ার উপকূল এলাকা থেকে আরও দুই ইঞ্জিনবোট বোঝাই অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার আচেহ দ্বীপের উপকূলে ডুবেছে দুটি বোট। এ ঘটনা থেকে এ পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৮ শতাধিক। এদিকে, থাইল্যান্ড উপকূলের আন্দামান সাগরে মৃত্যুকে হাতে নিয়ে ভাসমান অবস্থায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী নাগরিকদের বাঁচাতে সমন্বিত চেষ্টা চালানোর আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। অপরদিকে, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার যে ১১৬ জনকে সাগর থেকে উদ্ধার করে টেকনাফ থানায় সোপর্দ করা হয়; তাদেরকে আত্মীয়স্বজনের জিম্মায় প্রদান করেছে কক্সবাজার আদালত। অপরদিকে, মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ অভিবাসীর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ায় সাগরে থাকা পাচারকৃতরা একের পর এক ইন্দোনেশিয়া অভিমুখী হচ্ছে। দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে ট্রলারবোঝাই মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী নাগরিকরা ইন্দোনেশিয়ার জলসীমানায় পৌঁছার পর বৃহস্পতিবার ট্রলারটি ডুবে যাচ্ছে দেখে স্থানীয় জেলেরা তাদের উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসে। পরে ইন্দোনেশিয়ার প্রশাসন তাদের লাংসা নামক একটি স্থানে নিয়ে যায়। এদের মধ্যে শতাধিক বাংলাদেশী রয়েছে বলে প্রাপ্ত সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, উদ্ধার হওয়া অভিবাসীকে মালয়েশিয়ান নৌবাহিনী সেদেশে ভিড়তে না দিয়ে ইন্দোনেশিয়ার জলসীমার দিকে তাড়িয়ে দেয়। এদিকে মালয়েশিয়ার তীরবর্তী এলাকায় ৭০টি ট্রানজিট শিবির রয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। তার মধ্যে সেদেশের কুলিং বাসস্ট্যান্ডের অদূরে রয়েছে ২০টি ট্রানজিট শিবির তথা রিসিভ রুম। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে অসংখ্য বন্দীশিবিরে লোক বেশি হয়ে গেলে এবং যাদের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা আদায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের মালয়েশিয়ার রিসিভ রুমে নিয়ে রাখা হয়। সেখানে বিভিন্ন মালিকের কাছ থেকে বহু ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেগুলোকে ট্রানজিট শিবির তথা রিসিভ রুম বানানো হয়েছে। ওই সব ট্রানজিট শিবিরে এখনও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা-বাংলাদেশী বন্দী রয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। ওই সব ট্রানজিট শিবিরের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে মিয়ানমারের বাসিন্দা ও মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী আলী ও রাজ্জাক নামে দুই সহোদর। তাদের রয়েছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এলাকায় একাধিক ব্যাংক এ্যাকাউন্ট এবং বহু সহায়সস্পত্তি। উখিয়ার সোনারপাড়ার হুমায়ুন রশিদ বাপ্পু প্রকাশ দালাল বাপ্পু, রুবেল ও কায়ছার নামে তিন সহোদর ঐ বর্মী আলী-রাজ্জাকের হয়ে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ভাড়া বাসায় সৃষ্ট ৭০টি ট্রানজিট শিবির পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশন বিভাগের লোকজন একাধিক ট্রানজিট শিবিরের সন্ধান লাভ ও বন্দীদের উদ্ধার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের জবানবন্দীতে বাপ্পু ও রুবেল দালালের নাম উল্লেখ হওয়ায় তারা কৌশলে পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। যুক্তরাষ্ট্রের জরুরী আহবান ॥ এদিকে, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে এবং আন্দামান সাগরে ছোটবড় বিভিন্ন ইঞ্জিনচালিত বোটে ভাসমান অবস্থায় থাকা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক ও বাংলাদেশীদের বাঁচাতে সমন্বিত প্রচেষ্টার উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস উইংয়ের পরিচালক জেফ রাথকি বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ ঘটনায় মানবিক দিকটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। জেফ রাথকি বলেন, এ পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বিগ্ন। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী সাগরে ইঞ্জিনবোটে মানবেতর অবস্থায় থাকা মানুষকে উদ্ধারে আঞ্চলিক পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ২৯ মে সংশ্লিষ্ট দেশকে নিয়ে একটি সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেফ রাথকি বলেন, এখন সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে আটকেপড়া লোকজনদের জীবন বাঁচানো। তিনি আরও জানান, আমরা এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারেরর সঙ্গেও আলোচনা অব্যাহত রাখব। কেননা, রাখাইন রাজ্যের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের যে অঙ্গীকার সে দেশের সরকার করেছে তা প্রতিপালনে তাদের জরুরীভাবে সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। এদিকে টেকনাফ সমুদ্র উপকূল দিয়ে মালেশিয়ায় মানব পাচারের ঘটনায় প্রশাসন চিরুনি অভিযান শুরু করায় ক্ষিপ্ত হয়ে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা গোপনে থেকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকৃত ও তাদের স্বজনদের। অপরদিকে, কেউ পুত্র শোকে, কেউ স্বামীর অনুপস্থিতিতে সন্তানদের নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত, কেউ আবার ছেলের সন্ধান পেতে প্রায় উন্মাদ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আবার থাইল্যান্ডের জঙ্গল নতুবা মালয়েশিয়ার কথিত রিসিভ রুম থেকে স্বজনদের মুক্ত করতে দালালদের হাতে তুলে দেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে মাথার ঘাম পায়ে পড়ছে অনেকের। এ অবস্থায় হিংস্র মানব পাচারকারীদের দেয়া প্রাণনাশের হুমকিতে তটস্থ স্বজনহারা বহু পরিবার। মানব পাচারকারী গডফাদারের অনেকে আত্মরক্ষার্থে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। অঢেল টাকার মিশন নিয়ে স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক নেতার মাধ্যমে তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। চিহ্নিত দালালদের খপ্পরে পড়ে কক্সবাজার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের শত শত লোক মালয়েশিয়া পাড়ি দেয়ার পর এখন পর্যন্ত অনেকের খোঁজ নেই। তন্মধ্যে হোয়াইক্যং, হ্নীলা, উখিয়া, রামু, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া ও জেলা সদরের প্রায় সহস্রাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে। অনেকেই দালালের অত্যাচারে বোটে, থাইল্যান্ডের জঙ্গলে ও মালয়েশিয়ার দালালদের কথিত রিসিভ রুমে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। আবার পাচার হওয়া অনেকে ট্রলারে এখনও সাগরে ভাসছে। এক গ্রামের শাতাধিক নিখোঁজ ॥ টেকনাফের লম্বাবিলের এজাহার মিয়ার পুত্র নুরুল ইসলাম, সুলতান আহমদের পুত্র ছৈয়দ মিয়া, নুর মোহাম্মদের পুত্র লালু, ফরিদের পুত্র আজিজুল হক, নজুমিয়ার পুত্র জাফর আলম, ছৈয়দুর রহমানের পুত্র ছৈয়দ আলম, নয়াপাড়ার জকির আহমদের পুত্র মোঃ হেলাল, আবুল কাসেমের পুত্র ফয়াজ উদ্দিন, গোরামিয়ার পুত্র সিরাজ, মিয়া হোছনের পুত্র শফিক, আলী আহমদের পুত্র এরশাদ, লম্বাবিল কোরবান আলীর পুত্র নুরুল কবির, রাজু মিয়ার পুত্র মোঃ হেলাল, উনছিপ্রাং এলাকার মৃত আবু ছৈয়দের পুত্র নুরুল কবির, নুরুল বশরের পুত্র ইসমাইল, অলি আহমদের পুত্র মোঃ আলীসহ একটি ইউপি এলাকা থেকে পাচার হওয়া শতাধিক ব্যক্তি এ পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে দালালচক্রের নানান নির্যাতনে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেছে হোয়াইক্যং কাটাখালী, হারাইঙ্গাঘোনা, উনছিপ্রাং, কানজরপাড়া, আমতলী, ঝিমংখালী এলাকার ৮ ব্যক্তি। নিখোঁজ হেলালের মা আসমা খাতুন জানান, তার সন্তান দালাল নুরুল কবিরের হাত ধরে দুই মাস চৌদ্দদিন পূর্বে চলে যায়। কিন্তু এতদিনেও হতভাগ্য পুত্র থাইল্যান্ড পৌঁছেনি। দালালরা পনেরো দিন পূর্বেইও ট্রলারে ভাসমান অবস্থায় তার পুত্রের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার সুযোগ দিয়েছিল। ওই সময় আমার অঝোরে কেঁদে তাকে কষ্টকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে তাড়াতাড়ি টাকা দিতে বলেছিল। পুত্রের ক্রন্দনে হালের গরু, গয়না বিক্রি ও ঋণ নিয়ে দালালের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু টাকা দেয়ার পর হতে অদ্যাবধি আর কোন ধরনের যোগাযোগ করতে পারিনি। দালাল নুরুল কবির আত্মগোপনে চলে গেছে। এ রকম দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ থাকায় অনেকের পরিবারে স্ত্রী ও মা-বাবার আহাজারি থামছে না। সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগর থেকে ১১৬ মালয়েশিয়াগামী যাত্রী উদ্ধারের ঘটনায় কোস্টগার্ড সেন্টমার্টিন স্টেশনের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার ফিরোজ আহমদ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করেছে। এতে টেকনাফ কচুবনিয়ার মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে শীর্ষ মানব পাচারকারী গুরা মিয়াকে প্রধান আসামি করা ৪০ দালালের বিরুদ্ধে এজাহার দেয়া হয়েছে। এছাড়া টেকনাফ, উখিয়া, রামু, নয়াপাড়া ও লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প, পাবনা, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার দালালরাও এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। তবে গত দুই দিনেও এ মামলায় এ পর্যন্ত কোন আসামি গ্রেফতার হয়নি। এদিকে থাইল্যান্ড জঙ্গলে গণকবরের সংবাদ ও বাংলাদেশী উদ্ধারের পর থেকে জেলার শীর্ষ মানব পাচারকারী নুরুল কবির, রেজিয়া আকতার রেবি প্রকাশ ম্যাডাম, একরাম, ছৈয়দ করিম, ছৈয়দ হোছন, শামসুল আলম, শাহজালাল, মুসলেহ উদ্দিন, জমির আহমদ প্রকাশ কালা জমির ও আব্দুল্লাহ বিদ্যুৎসহ শীর্ষ গডফাদাররা আত্মগোপনে থেকে প্রশাসনের গতিবিধির খোঁজ রাখছে এবং বিভিন্নভাবে তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানান, ১১৬ জন উদ্ধারের ঘটনায় মামলা রেকর্ড হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামিদের ধরার চেষ্টা চলছে। মানব পাচার চিরতরে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। মানব পাচারের বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা ‘জিরো টলারেন্স।’ কোন দালালের ছাড় নেই। সম্পৃক্ত সকলকেই শাস্তির আওতায় আনা হবে। ১১৬ জনকে আত্মীয়ের জিম্মায় ॥ সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ধার ১১৬ মালয়েশিয়াগামী ব্যক্তির জবানবন্দী শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা জবানবন্দী দেন। তাদের জবানবন্দী রেকর্ড করেন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিন মুরাদ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিশাদুজ্জামান ও অরুণ পাল এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শফিউদ্দিন। এদের মধ্যে ৭০ জনকে স্বজনের কাছে বাকিদের নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কক্সবাজারের বাইরের জেলার বাসিন্দাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পুলিশ সহায়তা করেছে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ। আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে তারা দালালদের বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ও সময় তাদের মুখে উঠে আসে ১১৬ বাংলাদেশীর মরণযাত্রার করুণ কাহিনী। অকপটে বর্ণনা দিতে থাকে তাদের দুঃসহ কাহিনী। সেন্টমার্টিনে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের ভাষ্যমতে, ১২ মে দুপুর ১২টার দিকে পাচারকারীরা ১১৬ যাত্রীকে থাইল্যান্ডের মালিকানাধীন একটি ট্রলারে তুলে দিয়ে চালক ও মাঝি নেমে যায়। সাগরের অচেনা পথ হাতড়ে দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা ট্রলার চালিয়ে রিপন নামের একজন ট্রলারটি নিয়ে আসে সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি। এ সময় কোস্টগার্ড গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। রিপন বলেন, প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা ট্রলার চালিয়ে ফেরার সময় আরও ৫টি ট্রলার সাগরে ভাসতে দেখেছি। শুনেছি মানুষের আর্তনাদ। এ সময় অপর একটি ট্রলার থেকে কয়েকজনকে আমরা তুলে নিই। ইন্দোনেশিয়ায় উদ্ধার ৭৯৪ ॥ মালয়েশিয়া থেকে ফিরিয়ে দেয়ার পর ইন্দোনেশিয়ার আচেহ উপকূলে প্রায় ডুবন্ত অবস্থায় একটি ইঞ্জিনবোট থেকে ৭৯৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরা সকলেই বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বলে জানানো হয়েছে। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে সে দেশের সুমাত্রা দ্বীপে উপকূলের জেলেরা এদের উদ্ধার করে তীরে নিয়ে যায়। উদ্ধারের পর এদের আচেহর লাংসা শহরের একটি ওয়্যারহাউসে রাখা হয়েছে। জানা গেছে উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৩৯৫ বাংলাদেশী। অবশিষ্টরা মিয়ানমার থেকে গেছে। ইন্দোনেশিয়া পুলিশ জানায়, এ ইঞ্জিনবোটের গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়া। কিন্তু সাগর পথে সে দেশের নৌবাহিনী বোটটিকে ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় ধাওয়া দেয়। ধাওয়া খেয়ে আচেহ উপকূলে পৌঁছানোর পর বোটটি আকস্মিকভাবে ডুবতে শুরু করে। এক পর্যায়ে স্থানীয় জেলেরা এদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এ ধরনের আরও একটি ইঞ্জিনবোট মালয়েশিয়া নৌবাহিনীর ধাওয়া খেয়ে ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় ঢুকেছে। কিন্তু তারা কোন পথে অবস্থান নিয়েছে তা জানা যায়নি। অপরদিকে, এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে থাইল্যান্ড উপকূলেও। প্রায় তিন শ’ রোহিঙ্গাসহ একটি বোটের ইঞ্জিন নষ্ট করে দিয়ে পাচারকারীরা পালিয়েছে। থাই নৌবাহিনীর সদস্যরা বোটটি সচল করে প্রয়োজনীয় খাবার ও পানি দিয়ে আবার সেটিকে গভীর সমুদ্রে ফিরিয়ে দিয়েছে। উল্লেখ্য, পাচারকারী চক্র মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে একশ্রেণীর হতদরিদ্র লোকজনকে মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশে প্রথমে নিয়ে যাচ্ছে থাইল্যান্ডে। সেখানে আটকে রেখে প্রয়োজনীয় মুক্তিপণ আদায় করার পর মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার উপকূল অঞ্চলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, এখনও হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসী অসুস্থ ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় থেকে উদ্ধারের অপেক্ষায় আছে। এ সংখ্যা ৮ সহস্রাধিক বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাগরে আহাজারি ইন্দোনেশীয় উপকূলে ৭০০ অভিবাসী উদ্ধার ॥ বাসস জানায়, ইন্দোনেশিয়ায় শুক্রবার প্রায় ৭০০ রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী অভিবাসীকে ডুবন্ত নৌকা থেকে উদ্ধার করে লাংসা নামের একটি স্থানে আনা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের উপকূলে তাদের নৌকাটি ডুবে গেলে বেশ কয়েকটি মাছ ধরার নৌকা তাদের উদ্ধার করে। লাংসা নগরীর পুলিশ প্রধান সুনারিয়া বলেন, আমরা তাদের কাছ থেকে যে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি তাতে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার নৌবাহিনী তাদের ইন্দোনেশিয়ার জলসীমার দিকে তাড়িয়ে দেয়। ইন্দোনেশিয়ার জলসীমানায় পৌঁছার পর নৌকাটি ডুবে যায়। স্থানীয় জেলেরা দেখতে পেয়ে তাদের তীরে নিয়ে আসে।
×