ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জামালের প্রথম হার, এমেকার লাল কার্ড, আবাহনী দ্বিতীয় স্থানে

ওয়াহেদের কাছেই হেরে গেল শেখ জামাল

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৫ মে ২০১৫

ওয়াহেদের কাছেই হেরে গেল শেখ জামাল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জগতে কেউই অপরাজেয় নয়। শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেডও এই সত্যটা নতুনভাবে প্রমাণ করে দিল হেরে। ‘মান্যবর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলে বৃহস্পতিবারের খেলায় তাদের হারিয়ে দিয়েছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। ম্যাচের স্কোরলাইন ছিল ২-০। জয়ী দলের পক্ষে জোড়া গোল করেন ফরোয়ার্ড ওয়াহেদ আহমেদ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচে বিজয়ী দল প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল ১-০ গোলে। গত লীগে হেড টু হেডে উভয় দল মুখোমুখি হয় তিন ম্যাচে। দুই ম্যাচ ড্র হয় গোলশূন্যভাবে। এক ম্যাচে জিতেছিল জামাল (১-০, গোলদাতা ওয়েডসন)। কাজেই জামালকে হারিয়ে বদলাটা ভালমতোই নিল আবাহনী। বলা যায় এক ওয়াহেদের কাছেই এবারের লীগে প্রথম হারের তেতো স্বাদ পেল জামাল। গত চার-পাঁচ বছর ধরেই এককভাবে দৌর্দ- প্রতাপ চালিয়ে যাচ্ছে ‘বেঙ্গল ইয়োলোস’ খ্যাত শেখ জামাল। দল বদলের খরচ ও খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিক প্রদানের ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়েছে এ ক্লাবটি। তারা এবার মৌসুম-সূচক ফেডারেশন কাপ জিতেছে। দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই খেলেন জাতীয় দলে। প্রিমিয়ার লীগে গতবারের চ্যাম্পিয়ন তারা। চলমান লীগেও কোন ম্যাচ না হেরে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ও অপরাজিত থাকার যে গৌরব বয়ে বেড়াচ্ছিল তারা, সেই গৌরব এখন আর নেই ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত আবাহনীর কারণে। দলটি হচ্ছে গত লীগের রানার্সআপ। বৃহস্পতিবারের ম্যাচ জেতে তাদের ‘বৃহস্পতি তুঙ্গে’ হলো। কেননা এ ম্যাচে জিতে মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা ও শেখ রাসেলকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল জর্জ কোটানের শিষ্যরা। আবাহনী খেলেছে ৯ ম্যাচ। ৫ জয়, ২ ড্র ও ২ হারে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান পাঁচ থেকে দুই নম্বরে। সর্বশেষ ম্যাচে ফরাশগঞ্জের সঙ্গে ড্র করায় নিজ দলের সমর্থকদের তীব্র রোষানলের শিকার হতে হয়েছিল আবাহনীর ফুটবলারদের। টানা দুই ম্যাচ জয়বঞ্চিত থাকার পর এ জয়ে নিঃসন্দেহে মনোবল বেড়ে গেল আবাহনীর। পক্ষান্তরে ১০ ম্যাচে এটা জামালের প্রথম হার। তারপরও ২৩ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরেই আছে তারা। উল্লেখ্য, ইনজুরি কারণে এ ম্যাচেও মাঠে নামেননি শেখ জামালের মধ্যমাঠের সেরা ফুটবলার মামুনুল ইসলাম। ‘বিয়ে করার পর আবাহনীর জার্সি গায়ে আজই প্রথম গোল করলাম। গোল দুটি উৎসর্গ করছি আমার মা এবং স্ত্রীকে।’ ম্যাচ শেষে হাস্যোজ্জ্বল ওয়াহেদের প্রতিক্রিয়া। ‘আবাহনী যোগ্যতর দল হিসেবেই জিতেছে। শেষ তিন ম্যাচ আমাদের খেলতে হয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে। ফলে খেলোয়াড়রা দারুণ ক্লান্ত ছিল। তারই ছাপ পড়েছে খেলায় হেরে।’ জামালের কোচ মারুফুল হকের ভাষ্য। আবাহনীর কোচ জর্জ কোটান বলেন, ‘অনেক খুশি ম্যাচে জেতে। এ জয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল। এখন আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য লড়াই করতে পারি।’ ম্যাচের ২০ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে শাহেদুল আলমের ফ্রি কিকে বক্সের মধ্যে উড়ন্ত বলে মাথা ছুঁইয়ে জামালের জালে পাঠান ফরোয়ার্ড ওয়াহেদ আহমেদ (১-০)। ৫৮ মিনিটে আব্দুল বাতেন কোমলের বাড়িয়ে দেয়া বল বক্সে পেয়ে জামালের জালে আবারও বল পাঠান ওয়াহেদ (২-০)। এই গোল দুটি ওয়াহেদের সমালোচকদের মুখে তালা দিতে অনেকদিন বন্ধ রাখতে সহায়তা করবে। কারণ বেশকিছু দিন ধরে গোল না পাওয়ায় অনেক কথা হচ্ছিল এই তরুণ স্ট্রাইকারকে নিয়ে। এমনিতেই দুই গোলে পিছিয়ে। তার ওপর ৬৮ মিনিটে ১০ জনের দলে পরিণত হয় জামাল। এ যেন ‘গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া’! আবাহনীর ডিফেন্ডার ওবম হেনরিকে ফাউল করেন জামালের নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড এমেকা ডার্লিংটন। রেফারি জসিমউদ্দিন দ্বিতীয়বারের মতো হলুদ কার্ড দেখালে মাঠ ত্যাগ করতে হয় এমেকাকে। ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ার সময় আবাহনীর কিছু উগ্র সমর্থক উত্তক্ত্য করতে থাকে এমেকাকে। সেই সঙ্গে ঢিল মারতে থাকে বোতলও। এমেকা মেজাজ হারিয়ে দর্শকদের মারতে গেলে দর্শকরা আরও মারমুখী হয়ে ঢিল ও গালাগালি করতে থাকে। পুলিশ ও জামালের মিডফিল্ডার মামুনুল এমেকাকে জোর করে ড্রেসিংরুমে নিয়ে যান। ওদিকে এমেকাকে হারিয়ে শক্তি হ্রাস পাওয়ায় গোল শোধের চেয়ে গোল বাঁচানোতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় জামালের রক্ষণভাগকে।
×