ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উলফা ॥ সন্ত্রাসেই সর্বনাশ

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৫ মে ২০১৫

উলফা ॥ সন্ত্রাসেই সর্বনাশ

গত শতাব্দীর শেষ দিকে ভারতের আসাম রাজ্যের উলফা নামের সংগঠনটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে রীতিমতো কুখ্যাতি অর্জন করে। বাংলাদেশেও পাকিস্তানের আইএসআই-এর সহযোগিতায় তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত ছিল। বর্তমান সরকারের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় তা অনেকাংশে দমন করা সম্ভব হয়েছে। ১৪ মে’র পর আজ পড়ুন এর শেষাংশ... ওই সময় বাংলাদেশে বসবাসকারী নাগাল্যান্ডের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড (এনএসসিএন)-এর চেয়ারম্যান ইসাক সু ও অন্য আরেক নেতা এন্থনি শিমরাইর বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের তথ্য জানা যায়। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মনিপুর ও অরুণাচলের দেড় ডজনেরও বেশি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। উলফার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন বেশকিছু সংগঠনকে বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়ে ভারতবিরোধী তৎপরতা চালাতে দেয়া হয়। এসব সংগঠনের নেতাদের তখন বাংলাদেশে বসবাসের সুযোগও করে দেয়া হয়। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে আশ্রয় পাওয়া সংগঠন এবং এসব সংগঠনের নেতারা হলেন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অব বোরোল্যান্ড (এনডিএফবি) এর চেয়ারম্যান রঞ্জন দাহমারী, কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও) ও এর চেয়ারম্যান জীবন সিংহ, ন্যাশনাল লিবারেশন অব ত্রিপুরা (এনএলএফটি) ও এর চেয়ারম্যান বিশ্বমোহন দেব বর্মা, অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স (এটিটিএফ) ও এর চেয়ারম্যান রণজিৎ দেব বর্মাসহ আরও কিছু সংগঠন এবং এর নেতৃবৃন্দ। এদিকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সহায়তায় পাকিস্তানের আফগান সীমান্তবর্তী এলাকায় উলফার সদস্যদের নিয়মিত সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। আইএসআইয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন জইশে মোহাম্মদ, লস্করই তৈয়াবা, হিজবুত তাহরীর, হরকাতুল জিহাদের মতো উগ্র ধর্মান্ধ জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এছাড়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠনগুলোসহ শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগারদের সঙ্গেও। এই সংগঠনটির সঙ্গে উলফার সম্পর্কের গভীরতার প্রমাণ পাওয়া যায় বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে কক্সবাজারে আকস্মিকভাবে ধরা পড়া অস্ত্রের বিশাল চালানটি দেখে। উলফাকে দেয়ার জন্য তামিল টাইগারদের নিয়ে আসা ওই চালানে ৫০০টি ছিল একে-৪৭, ৫০টি রকেট লঞ্চার এবং ২ হাজার পিস্তল। তখন কয়েক তামিল টাইগার সদস্যকেও আটক করা হয়েছিল। এছাড়া অজ্ঞাত সূত্র থেকে আনা বগুড়ায় এক ট্রাক অস্ত্রসহ আরও অনেক ছোট ছোট অস্ত্রের চালান ধরা পড়লেও, আকস্মিকভাবে ধরা পড়া চালানের মধ্যে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালানটি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের জুন মাসে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ির গহীন অরণ্যের ৯টি পরিত্যক্ত বাঙ্কার থেকে রকেট লঞ্চার, মেশিনগান, বিভিন্ন ধরনের ভারি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করে র‌্যাব। একসময় সাতছড়ির টিলাসমৃদ্ধ গহীন অরণ্য ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন ত্রিপুরা পিপলস ডেমোক্র্যাটি ফ্রন্ট (টিপিডিএফ), ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (এনএলএফটি), ইউনাইটেড লিবারেশন অব অসম (আলফা), অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স (এটিটিএফ), ট্রাইবাল ফোর্স ত্রিপুরা কিংডম (টিএফটিকে), পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ), মনিপুর রাজ্যের পিপলস ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট (পিইউএলএফ), প্রিপাক ও উলফার নিয়ন্ত্রণে। ‘জোর যার মুল্লুক তার’Ñমধ্যযুগীয় এই বর্বর তত্ত্বকে বিংশ শতাব্দীতে আধুনিক মোড়কে ‘বন্দুকের নলই সকল ক্ষমতার উৎস’, মাওবাদীদের উদ্ভাবিত এই অপদর্শনের ধারক, বাহক ও প্রয়োগ উদ্যত মাওবাদী কিংবা অমাওবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর ভাগ্যে অতীতে ও নিকট অতীতে যে করুণ ও নির্মম পরিণতি ঘটেছে, উলফার ভাগ্যেও ঘটেছে তেমন করুণ পরিণতি। তবে সংগঠনটির চতুর নেতারা খুবই সৌভাগ্যবান এই কারণে যে, তারা যে পরিমাণ নৃশংস ও নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ভাগ্যে তেমনটি ঘটেনি। বরং চতুরতার সঙ্গে গ্রেফতারের নাটক সাজিয়ে নেতাদের অনেকেই ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। তবে নিজেদের বাঁচাতে সমর্থ হলেও সংগঠনকে বাঁচাতে পারেননি। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতা গ্রহণের পরই মূলত উলফার মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের ভূখ-ে আশ্রয় নেয়া ও সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ ছাড়া অসমের স্বাধীনতা যুদ্ধ দীর্ঘদিন চালিয়ে যাওয়াও যাওয়া সম্ভব নয়Ñ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তাড়া খেয়ে পালিয়ে বেড়ানো বেশিরভাগ নেতারা বিষয়টি উপলব্ধি করে নিশ্চিত হন। একুশ শতকের বিশ্ব রাজনীতির যে গতিপ্রকৃতি, তাতে করে শেখ হাসিনার মতো গতিশীল আধুনিক রাজনীতিসমৃদ্ধ নেতার কাছ থেকে এ ধরনের সন্ত্রাসের জন্য সমর্থন পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন ও হতাশ নেতারা। এই যুদ্ধ পরিত্যাগ করে অসমের সঙ্কট নিরসনে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে নিঃশর্ত আলোচনার সিদ্ধান্ত নিলেও, স্বদলীয় কট্টরপন্থী যোদ্ধাদের বন্দুকের নলের টার্গেট হওয়ার আশঙ্কায় ভীতসন্ত্রস্ত নেতাদের অনেকেই গ্রেফতারের নামে আত্মসমর্পণ করে ভারত সরকারের নিরাপত্তা হেফাজতে চলে যান। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো, উলফা চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াসহ ৫ কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতার আত্মসমর্পণ। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণকারী অন্য নেতারা হলেন সংগঠনের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শশধর চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক চিত্রবন হাজারিকা, ডেপুটি কমান্ডার ইন চীফ রাজু বড়ুয়া এবং নারী বাহিনীর প্রধান কাবেরি কাছাড়ি। যে ১৬ জনকে নিয়ে উলফার কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত, তাদের ১০ জনই চলে যান ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে। উলফার ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ গগৈ ধরা পড়েছেন অনেক আগেই। সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া গ্রেফতার হয়ে এখন বাংলাদেশের জেলে। উলফার তাত্ত্বিক নেতা ‘ফাদার অব উলফা’ হিসেবে খ্যাত ভীমকান্ত বুড়াগোহাইন মারা গেছেন। আরেক নেতা রামুমেচ সংগঠন ছেড়ে দিয়েছেন। অন্য ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান অশান্ত বাঘফুকান, মেজর রবিন নেওগ ও মেজর বেনিং রাভা ভুটানে উলফাবিরোধী শিবিরের দায়িত্বে থাকাকালীন সে দেশের সরকারী বাহিনীর উলফাবিরোধী অভিযানে শিবির ধ্বংসের পর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। উলফার শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে এখন শুধু কট্টরপন্থী নেতা পরেশ বড়ুয়া সক্রিয়। উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে যখন অসমের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর সাইকিয়া উলফার কিছু নেতাকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে যান, তখনই সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বে মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ওই আলোচনাকে কেন্দ্র করেই উলফার অভ্যন্তরে কট্টরপন্থী ও আলোচনাপন্থী বিভাজন শুরু হয়। কট্টরপন্থীদের চাপে আলোচনাপন্থীরা এতটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন যে, তাদের অনেকে দেশ ত্যাগসহ আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। অসমের রাজ্য সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা ও পুনর্বাসনের অঙ্গীকারে তখন প্রায় ৫ হাজার উলফা সদস্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। কিন্তু এক সময়ে তাদের সহযোদ্ধা কমরেডদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে সরকার সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করে। মূলত ওই সময়ই সংগঠন চলে যায় কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত কমান্ডার ইন চীফ পরেশ বড়ুয়ার মুঠোয়। আর এখন পরেশ বড়ুয়াই কোণঠাসা। পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে। কখনও চীনে, কখনও মিয়ানমারের জঙ্গলে। তবে চীন-ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশের দুর্গম ও গহীন অরণ্যে নাগাল্যান্ডের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড (এনএসসিএন)-এর শিবির হচ্ছে পরেশ বড়ুয়ার গোপন আশ্রয়স্থল। তবে তার সঙ্গে উলফা কেন্দ্রীয় কমিটির কোন সদস্যই নেই। পরেশ বড়ুয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন উলফার ২০ নম্বর ব্যাটালিয়নের ‘বি’ গ্রুপের দুই কমান্ডার অন্তু সাউদাং ও পার্থ গগৈয়ের মতো কয়েকজন সঙ্গী রয়েছেন তার সঙ্গে। এমনকি ২০ নম্বর ব্যাটালিয়নও পুরোপুরি তার সঙ্গে নেই। ওই ব্যাটালিয়নের ‘এ’ ও ‘সি’ গ্রুপ দুটি রয়েছে চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়ার সঙ্গে। মৃণাল হাজারিকার নেতৃত্বাধীন অসমের সমস্যা সমাধানে আলোচনায় বিশ্বাসী উলফার কথিত ‘সেনাবাহিনীর’ ওই অংশ বহু আগেই যুদ্ধ পরিত্যাগ করেছে। শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা শ্রেণীশত্রু খতম করে শ্রেণীহীন সাম্যবাদী রাষ্ট্র অথবা জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন, আবার কখনও স্বদেশী স্বৈরশাসক উৎখাত অথবা ঔপনিবেশিক দখলদারদের তাড়িয়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে মাওবাদী দর্শনে দীক্ষিত বহু সশস্ত্র সংগঠন গড়ে ওঠে এবং শুরু করে জনযুদ্ধ। জনযুদ্ধ বলা হলেও জনবিচ্ছিন্ন এসব সশস্ত্র সংগঠনের কর্মকা- ছিল মূলত সন্ত্রাস সৃষ্টি করা। এক সময় সংগঠনের সদস্যরা নেতৃত্ব দখল বা ব্যক্তিগত ও বৈষয়িক স্বার্থ কিংবা আদর্শিক নানা ধরনের দ্বন্দ্বে পরস্পর জড়িয়ে দলে, উপদলে, গ্রুপে খ--বিখ-িত হয়ে নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়ত। শেষ পর্যন্ত ছোট ছোট এসব গ্রুপ পরিণত হতো ভয়ঙ্কর খুনী ও লুটেরার দলে। জনযুদ্ধের নামে এসব সংগঠন যে নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে, পরিণামে এর চেয়েও বহুগুণ বেশি নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতার মধ্য দিয়ে এরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এর প্রামাণ্য সাক্ষ্য হিসেবে ইতিহাসবদ্ধ হয়ে আছে অনেক দেশের অসংখ্য সশস্ত্র সংগঠনের নাম। সাম্প্রতিককালের পবিত্র কোরআনের অপব্যাখ্যাকারী খেলাফত প্রতিষ্ঠায় স্বনিয়োজিত, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে হিংস্র ও ভয়ঙ্কর খুনী মানবতাবিরোধী হরেক নামের স্বঘোষিত জিহাদী আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্যও অপেক্ষা করছে ভয়ঙ্কর পরিণতি। আদর্শ যত মানবিক হোক আর লক্ষ্য যত মহৎই হোক, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন এবং ব্যাপক অংশগ্রহণ ছাড়া অস্ত্রনির্ভর কোন পথ ও পদ্ধতি দিয়ে আদর্শ প্রতিষ্ঠা কিংবা লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য তো আসেই না, বরং অসংখ্য নিরীহ-নির্দোষ সাধারণ মানুষের প্রাণ এবং সম্পদহানি ঘটনা ঘটিয়ে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ধ্বংস হয়ে যায় অস্ত্রবাজ ও সন্ত্রাসীরা। অতঃপর সন্ত্রাসেই সর্বনাশ ঘটে অস্ত্রবাজ উলফার।
×