ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকায় দুই দেশের সচিব পর্যায়ে বৈঠক

ভারত থেকে আরও ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৫ মে ২০১৫

ভারত থেকে আরও ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারত থেকে আরও ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে আগামী ডিসেম্বরে ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট এবং ২০১৭ সালের মধ্যে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত দেশটির বেসরকারী খাত থেকে আমদানি করা হবে। বিদ্যুত খাতে সহায়তা সম্প্রসারণে ঢাকায় দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বৃহস্পতিবার এ কথা জানানো হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির বাংলাদেশ সফর সামনে রেখে স্টিয়ারিং কমিটির এই বৈঠক বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। বিদ্যুত বিষয়ক ভারত বাংলাদেশ যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে ভারতের বিদ্যুত সচিব প্রদীপ কুমার সিনহার (পিকে সিনহা) নেতৃত্বে আট সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার ঢাকায় আসে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রামপাল বিদ্যুত প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে চলমান অন্যান্য ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। ভারতের পক্ষে দেশটির বিদ্যুত সচিব পিকে সিনহা এবং বাংলাদেশের পক্ষে বিদ্যুত বিভাগের মনোয়ার ইসলাম বৈঠকে নেতৃত্ব দেন। আজ শুক্রবার প্রতিনিধি দল ঢাকা ত্যাগ করবে। বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয় বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুযায়ী ২০১৭ সালের মধ্যে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত দিতে তারা সম্মত রয়েছে। দেশটির বেসরকারী খাত থেকে দরপত্রের মাধ্যমে এই বিদ্যুত কিনে আনতে হবে। ভেড়ামারায় এ জন্য আরও একটি ৫০০ মেগাওয়াটের ব্যাক টু ব্যাক সাবস্টেশন বসাতে হবে। তবে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে না। এখন ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনটি এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত পরিবহন করতে পারে। বৈঠকে জানানো হয় ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসবে। এ জন্য রুট নির্ধারণ করে লাইন নির্মাণের কাজ চলছে। বহরমপুর-ভেড়ামারা লাইনের মাধ্যমে ভারতের পাওয়ার মার্কেট থেকে আরও ৩০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে ভারতের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশের মধ্যে আন্তঃসংযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টি টার্মিনাল এইচভিডিসি বাই-পোল সঞ্চালন লাইন নির্মাণ সংক্রান্ত প্রস্তাবনার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এ সময় জানানো হয় ভারত গ্রিড লাইনটির বিষয়ে একটি প্রাথমিক সমীক্ষা করেছে। তবে তাদের আরও বিস্তারিত সমীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। জানানো হয় অরুণাচল থেকে অসমের রাঙ্গিয়া বা রাউটা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে গ্রিড লাইন, জামালপুর থেকে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া হয়ে ভারতের বিহারের বরাকপুরে গ্রিড লাইনটি পৌঁছবে। ভারত এই গ্রিড লাইন দিয়ে অরুণাচল প্রদেশ থেকে জলবিদ্যুত পশ্চিমবঙ্গে পরিবহন করবে। জামালপুর বা বড়পুকুরিয়ার সাবস্টেশন দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে কিছু বিদ্যুত দেবে। অরুণাচলে প্রায় ৫৩ হাজার মেগাওয়াটের জল বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশে ইতোমধ্যে ভারত জলবিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণ শুরু করেছে। আগামী ২০১৭ সালে এসব বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আসতে শুরু করবে। ২০২১ এর মধ্যে তিন হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুত পাওয়া যাবে এখান থেকে। ভারত এই এলাকায় বেসরকারী কোম্পানিকে বিদ্যুত কেন্দ্র করার অনুমতি দিয়েছে। বৈঠকে বলা হয় অরুণাচলে কবে নাগাদ কি পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন হবে তা থেকে কি পরিমাণ কোন্ দিকে সঞ্চালন করতে হবে তার ওপর নির্ভর করে এই লাইন নির্মাণ করা হবে। সভায় রামপালে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির বাস্তবায়নাধীন ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থারমাল প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। স্টিয়ারিং কমিটি এ সকল কাজের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। রামপাল-১৩২০ মেগাওয়াট প্রকল্পের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে ২০১৮ এর ডিসেম্বরের মধ্যে। এ লক্ষ্যে উভয় দেশ কাজ করছে। রামপাল প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রকল্পটিকে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভারত এবং বাংলাদেশ প্রকল্পটিতে ৩০ ভাগ অর্থ বিনিয়োগ করবে। বাকি ৭০ ভাগ অর্থ ঋণ নেয়া হবে। ভারত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। এ ছাড়াও সভায় নেপাল ও ভুটান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুত আমদানি ও ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি কর্তৃক বাংলাদেশের বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগের আগ্রহের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যুত খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট ওয়ার্কি গ্রুপের ৯ম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
×