ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শাস্তি দাবি করে ওই তালিকা জমা দেয়ার পর থেকেই টার্গেট হচ্ছে ব্লগাররা

মুক্তমনা ৮৪ ব্লগারের তালিকা দেয় হেফাজতে ইসলাম

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৫ মে ২০১৫

মুক্তমনা ৮৪ ব্লগারের তালিকা দেয় হেফাজতে ইসলাম

শংকর কুমার দে ॥ দেশের ৮৪ জন মুক্তমনা লেখক ও ব্লগারের নামের তালিকা রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। গত ২ বছরে এই তালিকার মধ্যে এ পর্যন্ত খুন হয়েছেন ৭ জন। এই তালিকাটি গত ২ বছর আগে ’১৩ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। তারা মুক্তমনা লেখক ও ব্লগারদের ইসলাম ও মুহাম্মদকে (স.) কটূক্তিকারী অভিহিত করে নাস্তিক ও কাফির দাবি করে শাস্তি দাবি করেছে। তারপর থেকেই খুন হচ্ছেন মুক্তমনা লেখক ও ব্লগাররা। খুনের পর পর জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ-১ থেকে শুরু করে আনসারুল্লাহ-৮ পর্যন্ত সংগঠনের নামের জঙ্গীরা জড়িত বলে উল্লেখ করে আসছে গোয়েন্দারা। আবার গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করার জন্য খুনের পর দায় স্বীকার করে টুইট করছে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা। প্রকৃতপক্ষে মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার খুনের সঙ্গে জড়িত খুনী কারা তা চিহ্নিত বা শনাক্ত করা সম্ভবপর হচ্ছে না বলেই একের পর এক খুনের ঘটনা অব্যাহত আছে। এ খবর দিয়েছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, দুই বছর আগে যুুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ স্থাপন করে আন্দোলন শুরু করার পরই খুনের টার্গেটের তালিকায় আসে মুক্তমনা লেখক ও ব্লগাররা। তখন তাদের ইসলাম ও মুহাম্মদকে (স.) কটূক্তিকারী হিসাবে আখ্যায়িত করে নাস্তিক ও কাফির অভিহিত করে শাস্তি দাবি করে হেফাজতে ইসলাম। তারা মুক্তমনা লেখক ও ব্লগারদের শাস্তির দাবি করে তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৮৪ জন লেখক ও ব্লগারের তালিকা দেয় হেফাজতে ইসলাম। তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তালিকাভুক্ত লেখক ও ব্লগারদের শাস্তির দাবি করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তখন উত্তরা থেকে আরিফ মহিউদ্দিন নামে একজন লেখক ও ব্লগারকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতার করার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর পর জামিনে মুক্ত হন তিনি। জামিনে মুক্ত হয়ে প্রাণে বাঁচার জন্য দেশত্যাগ করেন আরিফ মহিউদ্দিন। এখান থেকেই মুক্তমনা লেখক ও ব্লগাররা টার্গেটে পরিণত হন প্রথম। তারপর থেকেই গত ২ বছরে অন্তত ৭ জন মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার খুন হন। এ পর্যন্ত যেই ৭ জন মুক্তমনা ব্লগার ও লেখক খুন হয়েছেন তারা হচ্ছেন, মিরপুরে আহাম্মেদ রাজীব হায়দার শোভন, আশুলিয়ায় সান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটির ছাত্র নিয়াজ মোর্শেদ বাবু, ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির ছাত্র এসএম আশরাফুল ইসলাম, বুয়েটের ছাত্র দ্বীপ রায়হান, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, সিলেটের অনন্ত বিজয় দাশ। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, এ পর্যন্ত যেই ৭ জন মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার খুন হয়েছেন তার মধ্যে একমাত্র তেজগাঁওয়ের ওয়াশিকুর রহমান বাবুর খুনীরা হাতেনাতে ধরা পড়েছে। অপর ৬ লেখক ও ব্লগার খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত যারা তারা হাতেনাতে ধরা পড়েনি। ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে খুন করে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে জিকরুল্লাহ ও আরিফ নামে দুই জন চাপাতিসহ ধরা পড়েছে। এই দুই জন পালিয়ে যাওয়ার সময়ে লাবণ্য নামের এক হিজড়া তাদের জাপটে ধরে। স্থানীয় লোকজন এসে তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এই দুই খুনীকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে তাদের সঙ্গে আরেক খুনী তাহের ছিল, যে ঘটনার সময়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আর খুনের পরিকল্পনায় ছিল মাছুম নামের একজন।
×