ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেয়ার্নের কাছে হেরেও ফাইনালে বার্সিলোনা

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৪ মে ২০১৫

বেয়ার্নের কাছে হেরেও ফাইনালে বার্সিলোনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হেরেও উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফুটবলের ফাইনালে নোঙ্গর ফেলেছে বার্সিলোনা। মঙ্গলবার রাতে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে স্বাগতিক জার্মান ক্লাব বেয়ার্ন মিউনিখের কাছে ৩-২ গোলে হার মানে ক্যাটালানরা। মিউনিখের এ্যালিয়েঞ্জ এ্যারানায় বাভারিয়ানদের হয়ে গোলগুলো করেন মেধি বেনাটিয়া, রবার্ট লেভানডোস্কি ও টমাস মুলার। বার্সার হয়ে দুটি গোলই করেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার। এই হারের পরও বার্লিনের ফাইনালের টিকেট পেয়েছে স্প্যানিশ পরাশক্তিরা। কেননা সেমির প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে বার্সা ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বেয়ার্নকে। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৩ গোলে জিতে শিরোপানির্ধারণী ম্যাচের ছাড়পত্র পেয়েছেন মেসি, নেইমার, সুয়ারেজরা। আগামী ৬ জুনের ফাইনাল গত মৌসুমের মতো এবারও অল স্প্যানিশ হতে পারে। যদি বুধবার রাতে জুভেন্টাসকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। ফলাফল কী হয়েছে তা অবশ্য ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে। ২০১১ সালের পর ফাইনালে উঠে বার্সার স্বপ্ন এখন শিরোপা জয়। সেই সঙ্গে লুইস এনরিকের দল মৌসুমে ট্রেবল জয়ের আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। স্প্যানিশ লা লীগার শিরোপার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া বার্সিলোনার সামনে ৩০ মে স্প্যানিশ কাপের শিরোপারও হাতছানি। যেখানে ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ তুলনামূলক দুর্বল দল এ্যাথলেটিক বিলবাও। অন্যদিকে পেপ গার্ডিওলার বেয়ার্ন এ নিয়ে টানা দুই বছর শেষ চারের লড়াই থেকে বিদায় নিয়েছে। সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ১৮ ম্যাচ অপরাজিত ছিল বার্সা। সেই অজেয় দলকে হারানোর পরও ফাইনালের স্বপ্ন পূরণ হয়নি বাভারিয়ানদের। প্রথম লেগে বড় হারের কারণেই বিদায় নিতে হয়েছে সাবেক চ্যাম্পিয়নদের। শেষ চারের প্রথম লেগে ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর কঠিন সমীকরণ নিয়ে মাঠে নেমেছিল স্বাগতিকরা। প্রথমার্ধের সাত মিনিটে মেধি বেনাটিয়ার দুর্দান্ত হেডের গোলে এগিয়েও যায় বেয়ার্ন। কিন্তু লুইস সুয়ারেজের সহায়তায় ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমারের দুই গোলে প্রথমার্ধেই বেয়ার্নের আশা প্রায় শেষ হয়ে যায়। বিরতির পর উজ্জীবিত পারফর্মেন্সে বার্সাকে হারাতে পারলেও তা যথেষ্ট ছিল না গার্ডিওলার দলের। প্রথম লেগে জোড়া গোল করা লিওনেল মেসি এবার গোল না পেলেও অবদান রাখেন দারুণ। নেইমারের প্রথম গোলের কারিগত মূলত তিনিই। গত ১০ ম্যাচে ১১ গোল করা সেলেসাও তারকা নেইমারের দিকেই এখন বার্লিনের সব চোখ আবদ্ধ থাকবে। ম্যাচের সপ্তম মিনিটে নায়ক বনে যান বেয়ার্নের ২৮ বছর বয়সী মরোক্কান ডিফেন্ডার বেনাটিয়া। জাবি এ্যালানসোর কর্নার থেকে অনেকটা ফাঁকায় দাঁড়ানো বেনাটিয়া জোরালো হেডে গোল করেন। এর মধ্য দিয়ে গত সাত ম্যাচে একটিও গোল হজম না করা বার্সিলোনার ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়। কিন্তু ১১ বারের মতো ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি বেয়ার্নের। স্বাগতিক ডিফেন্সের ভুলের সুযোগে মেসির বাড়ানো বল থেকে সুয়ারেজ ডানদিক থেকে দারুণ পাস দেন নেইমারকে। ১৫ মিনিটে অতিথিদের হয়ে সমতা ফেরান নেইমার। এরপর বেয়ার্ন আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয়। টমাস মুলারের হেড বার্সার জার্মান গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগান রক্ষা না করলে ১৯ মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে পারত গার্ডিওলার দল। এরপর উল্টো পিছিয়ে পড়ে বেয়ার্ন। ২৯ মিনিটে আবারও বার্সার হয়ে গোল করেন নেইমার। ডানদিক থেকে সুয়ারেজের পাসে নেইমার জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন। বিরতির পর লুইস এনরিকে সুয়ারেজকে বিশ্রাম দিলে ম্যাচের গতি কিছুটা মন্থর হয়ে যায়। ৫৯ মিনিটে পোলিশ তারকা লেভানডোস্কি গোল করে বেয়ার্নকে সমতায় ফেরান। ফলে চাঙ্গা হয়ে ওঠে স্বাগতিরকা। চাপ ধরে রেখে ম্যাচের ৭৪ মিনিটে শোয়েনস্টেইগারের পাস থেকে মুলার গোল করে বেয়ার্নকে ৩-২ গোলে এগিয়ে নেন। কিন্তু ফাইনালের স্বপ্নপূরণ করতে দলটির অন্ততপক্ষে আরও দুই গোলের প্রয়োজন ছিল। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময়ে যেত ম্যাচ। কিন্তু বাকি সময়ে আর গোল পায়নি দলটি। যে কারণে জিতেও বিদায়ের ব্যথা নিয়ে মাঠ ছাড়ে বেয়ার্ন। আর উল্লাসে মেতে উঠেন বার্সার ফুটবলাররা। ফাইনাল নিশ্চিত করার পর এখন শিরোপার স্বপ্নে বিভোর ক্যাটালানরা। নেইমার ফাইনালের প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবছেন না। তিনি বলেন, ফাইনালে উঠাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কার বিরুদ্ধে খেলব, এটা বিষয় নয়। শিরোপা জিতেই আমরা উদ্যাপন করতে চায়। বার্সা অধিনায়ক আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা বলেন, ফাইনালে উঠা আমাদের লক্ষ্য ছিল। এটা যখন হয়েছে এখন আমাদের প্রতিপক্ষ কে, সেটা কোন ব্যাপার নয়। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ফাইনালে উঠার সন্তুষ্টির কথা বলার পাশাপাশি নিজেদের চাওয়া পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন বার্সা কোচ লুইস এনরিকে। তিনি বলেন, আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়া। তিনটি প্রতিযোগিতাই জিততে একটি করে ম্যাচ জয় দূরে আছি আমরা। এটা আমাদের লক্ষ্য।
×