ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মধুমেলা ২১৫

সরিষা লিচু ধনিয়া কালজিরা ফুল থেকে খাঁটি মধু

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৪ মে ২০১৫

সরিষা লিচু ধনিয়া কালজিরা ফুল থেকে খাঁটি মধু

মোরসালিন মিজান ॥ কথা গান বলা চলা- সব মধুর হওয়া চাই। মধুর হওয়াটাই কাম্য। আর মধু থেকেই মধুর। তবে ভেজাল হলে চলবে না। প্রয়োজন খাঁটি মধু। এ চাহিদা পূরণে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন বিসিক। সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিতভাবে মৌচাষের উপর প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। ফলাফল- অসংখ্য সফল উদ্যোক্তা। হ্যাঁ, তাঁদের উৎপাদিত মধু নিয়েই বিসিক ভবনে এখন চলছে মধু মেলা ২০১৫। পাঁচ দিনব্যাপী মেলা থেকে মধু সংগ্রহ করছেন আগ্রহী ক্রেতারা। বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের সামনের খোলা জায়গায় স্টল সাজিয়েছেন চাষীরা। ২০টির মতো স্টল। সবকটি স্টলের সামনে মধুভর্তি বৈয়াম। ছোট বড় মাঝারি বৈয়ামে বিভিন্ন ফুল থেকে মৌমাছির সাহায্যে আহরণ করা মধু। সরিষার ফুল, লিচুর ফুল, ধনিয়ার ফুল, কালোজিরার ফুল। অনেকে হয়ত এসব ফুল চোখেও দেখেননি। অথচ চাষীরা ঠিকই খুঁজে নিচ্ছেন। মধু সংগ্রহ করছেন। সুন্দরবন এবং আশপাশের এলাকা থেকে সংগ্রহ করা মধুও আছে। জহিরুল ইসলাম নামের এক প্রবীণ মৌচাষটা বেশ বুঝে গেছেন বলেই মনে হয়। ১২ বছরের অভিজ্ঞতা তাঁর। বললেন, দেশের যেখানেই ফুল আমরা সেখানে ছুটে যাই। প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার আলোকে মধু সংগ্রহ করি। আমাদের সব মধুই খাঁটি এবং খুব মিষ্টি। ফুল ভেদে মধুর স্বাদের তারতম্য হয়। যার যেটি ভাল লাগে, কিনে নেন। সালেহা খাতুন নামের এক উদ্যোক্তা জানান, প্রচলিত ফুলের বাইরে সাজনা ফুল জাম্বুরা ফুলের মধুও সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা। লিচু ফুলের মধুর সঙ্গে এইসব ফুলের মধু মিশে স্বাদ আরও বেরেছে বলে জানান তিনি। দেশের কোন কোন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয় এসব মধু? জানতে চাইলে আব্দুল আলী নামের এক চাষী জানান, সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করা হয় মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ কয়েকটি এলাকা থেকে। লিচুর জন্য বিখ্যাত রাজশাহী, দিনাজপুর থেকে সংগ্রহ করা হয় লিচু ফুলের মধু। একই মধু আসে গাজীপুর, পাবনাসহ আরও কিছু জেলা থেকেও। ধনিয়া ও কালোজিরার ফুল থেকে যে মধু, সংগ্রহ করা হয় মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর এলাকা থেকে। তবে মধুর বড় উৎস সুন্দরবন। বনের আশপাশের গ্রামগুলোতে উড়ে আসা মৌমাছি থেকে চাষীরা এ মধু সংগ্রহ করেন। তবে সব মৌমাছি মধু সংগ্রহে সমানভাবে পারদর্শী নয়। ভাই ভাই মৌ খামারের মালিক বজলুর রহমান জানান, দেশীয় মৌমাছি হিংস্র আর ভবঘুরে স্বভাবের হয়। মানুষের গায়ে হুল ফোটাতে খুব পারে। সে তুলনায় মধু দেয় সামান্যই। সেরেনা নামের দেশীয় জাতটি তাই এড়িয়ে চলেন চাষীরা। মধু উৎপাদনের জন্য বেছে নেন মেলিফেরা নামের বিদেশী জাত। এই জাতের মৌমাছি বাক্সে ভরে লালন পালন করেন তাঁরা। যেখানে ফুল সেখানে বাক্স রেখে আসেন। মেলিফেরা জাতের মৌমাছি ছেড়ে দিয়ে আসেন। পরে চলে প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। এভাবে কয়েকগুণ বেশি মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, উৎপাদন তত বাড়ছে। চাহিদাও বেশ। মেলায় আসা আবুল হাশেম নামের এক ক্রেতা বললেন, ঢাকার বাজারে সারা বছর যেসব মধু পাওয়া যায় সেগুলোর বেশির ভাগই ভেজাল। বিভিন্ন কেমিকেল দেয়া থাকে। চিনি মেশানো থাকে। এ ক্ষেত্রে বিসিকের মেলা ব্যতিক্রম। এখানে যতবার মেলা আয়োজন করা হয় ততবারই তিনি মধু কিনতে আসেন বলে জানান তিনি। মেলা প্রসঙ্গে বিসিক চেয়ারম্যান আহমদ হোসেন খান বলেন, মৌচাষ একটি কৃষিভিত্তিক কুটির শিল্প। আমরা ‘আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মৌচাষ উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছি। বিসিক ইতোমধ্যে দেশব্যাপী ১৮ হাজার নারী ও পুরুষকে আধুনকি পদ্ধতিতে মৌচাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাঁদেরই একটি অংশ মেলায় যোগ দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মৌচাষীদের উৎপাদিত মধুর বাজার সৃষ্টি, মধু ব্যবহার বাড়ানো, পণ্যের পরিচিতি এবং ক্রেতাসাধারণের সঙ্গে উৎপাদকদের সরাসরি যোগাযোগ সৃষ্টি এ মেলার উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি। রবিবার শুরু হওয়া মেলা আজ বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে। চলবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
×