ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইনের খসড়া সংসদীয় কমিটিতে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৩ মে ২০১৫

আইনের খসড়া সংসদীয় কমিটিতে

সংসদ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল পাসের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিশংসন বা অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার বিধানটি কার্যকরে নতুন একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে মন্ত্রণালয়। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এ বিলটি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর বিলটি সংসদের আগামী অধিবেশনে উত্থাপন ও পাস হবে বলে আশা করছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। আর নতুন এই আইনটি পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানে থাকা ‘জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খসড়া বিলটি নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটি সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, শামসুল হক টুকু, আবদুল মজিদ খান, তালুকদার মোঃ ইউনুস ও সফুরা বেগম এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এক প্রেসব্রিফিংয়ে বলেন, সংবিধান ষোড়শ সংশোধনী বিল পাসের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরে এসেছে। ওই বিলটি পাসের সময় বলা হয়েছিল বিচারপতিদের অপসারণ কোন পদ্ধতিতে হবে তা নির্ধারণে নতুন আইন করা হবে। সে লক্ষ্যেই ‘বিহেভিয়ার ইনক্যাপাসিটি অব জাজেজ’ শীর্ষক আইনের বিল আগামী বাজেট অধিবেশনেই উত্থাপন করা হবে। তিনি আরও বলেন, এই আইনটি না থাকায় বর্তমানে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অকার্যকর হয়ে রয়েছে। তবে নতুন আইনটি পাস হলে বিচারপতিদের অপসারণে আর কোন বাধা থাকবে না। আগামী অধিবেশনেই বহুল আলোচিত এই বিলটি পাস হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বিচারপতিরাই তাঁদের অসদাচরণ ও অসামর্থ্য প্রমাণ করবে। তাঁরাই ঠিক করবে কোন বিচারপতির আচরণ ভাল বা মন্দ এবং কে কাজ করতে পারবে না (অসমর্থ)। বিচারপতিদের সুপারিশের ভিত্তিতেই অপসারণের বিষয়ে জাতীয় সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে। সেটাই এই আইনের মূল কথা। তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সকল প্রতিষ্ঠানই সংসদের কাছে দায়বদ্ধ। বিচারপতিদের বেলাতেও তাই হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পাস হওয়া সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিলে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন গত ২২ সেপ্টেম্বর। ওই সময় বিলটি পাসের আগে আইন ও বিচার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত নেয়া না হলেও দ্রুত সহায়ক আইন তৈরির কথা জানানো হয়। সর্বশেষ এ সংক্রান্ত খসড়া বিল তৈরি করেছে মন্ত্রণালয়। নতুন এই বিলে বিচারকদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত পদ্ধতি, আত্মপক্ষ সমর্থন, অভিযোগের বিচারপদ্ধতি ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, খসড়া আইনের বিধান অনুযায়ী, বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ বা অযোগ্যতার অভিযোগ উঠলে তা যাচাই-বাছাই করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। যে কমিটিতে বিচার বিভাগের সদস্য তথা আপিল বিভাগের বিচারপতি, আইনজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টদেরকে রাখতে হবে। কমিটি অভিযুক্ত বিচারকের বক্তব্য গ্রহণ করবে। কমিটি সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই রিপোর্ট আকারে সংসদে পাঠাবে। রিপোর্ট অভিযুক্ত বিচারকের বিরুদ্ধে গেলে সংসদ তাঁকে অপসারণের জন্য প্রস্তাব পেশ করবে। দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের ভোটের মাধ্যমে সে প্রস্তাব পাস হলে রাষ্ট্রপতি অভিযুক্ত বিচারককে অপসারণ করবেন। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, খসড়া বিলটিকে চূড়ান্ত করার আগে জ্যেষ্ঠ আইনজ্ঞ, আইন বিশেষজ্ঞ ও আইন প্রণেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে। তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী বিলটি চূড়ান্ত করে সংসদে পাঠানো হবে। এই আইন পাসের মাধ্যমে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিলুপ্ত হবে বলেও তিনি জানান।
×