ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১১ মে ২০১৫

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি ধরে রাখার লক্ষ্যে শান্তিনিকেতনের আদলে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরে স্থাপন করা হচ্ছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। এটি হবে দেশের ৩৮তম সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। পঁচিশে বৈশাখ কবিগুরুর জন্মবার্ষিকীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই প্রতিষ্ঠানে রবীন্দ্র গবেষণা ও চর্চার পাশাপাশি সাহিত্য, সঙ্গীত, নাট্যকলা, নৃত্য ও চারুকলা, সামাজিক বিজ্ঞান, কৃষি, সমবায়, জীববিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা দেয়া হবে। আমাদের প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বব্যাপী বাঙালী সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান মিলনকেন্দ্র হয়ে উঠুক। আমাদের দেশে জনসংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি উচ্চশিক্ষা লাভে আগ্রহী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। একটি জাতির সম্মান ও সমৃদ্ধি সে জাতির শিক্ষার মানের ওপরেই নির্ভরশীল। সত্যিকারের শিক্ষিত নাগরিকরাই দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনেন, সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। শিক্ষা প্রদানে ফাঁক ও গলদ থেকে গেলে সনদ প্রাপ্তি হয়ত সম্ভব; কিন্তু অসম্ভব হয়ে ওঠে প্রকৃত জ্ঞানলাভের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত মানুষ হওয়ার বিষয়টি। কথায় বলে, ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়।’ কর্মক্ষেত্রে সেবার ধরন ও মান দেখে কর্মজীবীর শিক্ষার ধরন ও মান সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। সে কারণেই অভিভাবকরা সুনাম অর্জনকারী বিদ্যাপীঠেই তাঁদের সন্তানদের ভর্তি করাতে চান। এককালের সুনাম অর্জনকারী বিদ্যাপীঠ চিরকাল সে সুনাম বজায় রাখতে সক্ষম হবে এমনটা স্বতঃসিদ্ধ নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক সময়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে সুখ্যাতি লাভ করেছিল। সেই সুনাম কি আজও বিদ্যমান? প্রায় দেড় বছর আগে সরকারী-বেসরকারী ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে ‘কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স সেল (কিউএসি)’ গঠন করা হয়েছিল। এজন্য বরাদ্দ ছিল ৪৫ কোটি টাকা। ওই ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে মান কতখানি নিশ্চিত হয়েছে সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখার পাশাপাশি গবেষণা অত্যন্ত জরুরী। সমকালীন বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার দিকটি কেন বিকাশ লাভ করছে না সে ব্যাপারে গবেষণার সময় বোধহয় চলে এসেছে। প্রাথমিক হোক বা বিশ্ববিদ্যালয় হোক, যে কোন শিক্ষালয়ের হৃদয় ও চালিকাশক্তি হচ্ছেন তার শিক্ষকম-লী। শিক্ষাকাশে একেকজন শিক্ষক একেকটি সূর্যের মতো। সেই সূর্যের পরশমণির ছোঁয়াতেই আলোকিত হয়ে ওঠে নতুন সময়ের গ্রহ-তারকারা। তাই শিক্ষালয়ের জন্য চাই সুযোগ্য শিক্ষক। এক সময়ে এদেশে সেরা শিক্ষার্থীরাই আসতেন শিক্ষকতায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকারীদের অফার দেয়া হতো ওই বিভাগে তরুণ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়ার। অবস্থা অনেকটাই বদলেছে। শিক্ষক নিয়োগেও দুর্নীতির প্রসার ঘটেছে। শিক্ষক হওয়ার মানদ- পরীক্ষায় মেধাদীপ্ত ফললাভ নয়, তার পরিবর্তে হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক পরিচয়। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে না বলে আমরা আশা করতে পারি। রবীন্দ্রনাথকে আমরা জাতিগতভাবে অনেক উঁচুতে স্থান দিয়েছি। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে উচ্চমান বজায় রাখার ব্যাপারে যেন এতটুকু কার্পণ্য কিংবা আপোস না করা হয়। যেহেতু রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিকল্পিত হয়েছে, তাই দেশের বাইরে থেকেও শিক্ষক আনার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন এটা প্রত্যাশিত। আরও একটি কথা বলা দরকার। প্রকৃত প্রতিভাবান ও মেধাবী ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হলে শিক্ষকদের আর্থিক প্রাপ্তির বিষয়টিও বিশেষ বিবেচনায় নিতে হবে। জীবনধারণের জন্য অর্থ সংগ্রহের চিন্তার জালে বন্দী কোন শিক্ষকের কাছ থেকে শতভাগ শিক্ষাসেবা পাওয়া সম্ভব কি?
×