ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টিউলিপসহ ৩ বাঙালী কন্যার জয়ে বাংলাদেশেও আনন্দের ঢেউ

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১০ মে ২০১৫

টিউলিপসহ ৩ বাঙালী কন্যার জয়ে বাংলাদেশেও আনন্দের ঢেউ

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ ব্রিটেনের নির্বাচন নিয়ে আনন্দ প্রত্যাশার পাশাপাশি চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। রাজনীতির জোয়ার বাংলাদেশ থেকে লন্ডন। বঙ্গবন্ধু থেকে টিউলিপ, আওয়ামী লীগ বিএনপি। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশীরা বিশ্লেষণ করছেন অনেক কিছু। শুক্রবারের ফলাফলে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির বিজয় ও লেবার পার্টি আর লিবডেমের বিশাল পরাজয়ের কারণ নিয়ে সেখানকার বুদ্ধিজীবী মহলে চলছে নানামুখী বিশ্লেষণ। এমন আকাশচুম্বী সফলতার পর প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন শুক্রবার দুপুরে রাণী এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে ঘোষণা দিয়েছেন তাঁর সরকার ব্রিটিশ জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবে। তিনি তাঁর নির্বাচনী ওয়াদা রক্ষা করার জন্য প্রচেষ্টা চালাবেন। তবে দল-মতের উর্ধে উঠে ব্রিটেনকে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরবেন। দু-একদিনের মধ্যেই মন্ত্রিসভা গঠন হবে। বাংলাদেশী তিন কন্যার বিজয় নিয়ে শুধু লন্ডনে নয় আনন্দ উল্লাসের কমতি নেই বাংলাদেশেও। রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক, রূপা হকের বিজয়কে নানানভাবে মূল্যায়ন করছেন বাঙালী কমিউনিটি। কমিউনিটি নেতা মন্টু আলী জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, দেশে-বিদেশে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ৩ জন প্রার্থীর বিজয় ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে হলেও এটা আমাদের জাতীয় সাফল্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে একের পর এক সাফল্য আসছে। সন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াও-এর মাঝে পিছিয়ে নেই উন্নয়ন, অব্যাহত আছে সুসংবাদ। ক্রিকেটে বাংলাদেশী ছেলেদেয় জয়-জয়কার বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছে। একদিকে দীর্ঘ ৪০ বছর পর ছিটমহল সমস্যা সমাধানের সুসংবাদ অপর দিকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ৩ বাংলাদেশীর বিজয় সংবাদ আমাদের জন্য অনেক আনন্দের অনেক গৌরবের। টিউলিপ সিদ্দিকের বিজয় নতুন করে জাগ্রত করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। যোগ্য নেতৃত্বের উত্তরাধিকার টিউলিপ সিদ্দিকের বিজয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া সন্তান শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনায় সফলতার বিষয়টিও আজ আলোচিত হচ্ছে। ব্রিটেন নির্বাচনে আমাদের বাংলাদেশীরা নিজেদের যোগ্যতা দক্ষতা দিয়ে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছেন। বঙ্গবন্ধু নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক ও তাঁর যোগ্যতার যথেষ্ট স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর মেধা-যোগ্যতায় তিনি লেবার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। সেখানে বিএনপি আওয়ামী লীগ নেই। নোংরা রাজনীতির খেলা নেই। টিউলিপ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সেখানে নির্বাচন করেননি। তবে কেন তার নিজস্ব রাজনীতি, তার নির্বাচনী মাঠে নোংরা অপপ্রচার চালানো হলো? লন্ডনের বাঙালী সমাজে এটা সমালোচিত হচ্ছে। যে মুহূর্তে এক নেত্রীর বোনের মেয়ে ভোটে বিজয়ী হয়ে ব্রিটেনের পার্লামেন্টে যাচ্ছেন সে মুহূর্তে আরেক নেত্রীর ছেলে একাধিক মামলার আসামি হিসেবে ব্রিটেনে পালিয়ে আত্মরক্ষার জীবন যাপন করছে। ব্রিটেনে নোংরা রাজনীতির সুযোগ নেই। ৯৯% মানুষ কর্মব্যস্ত এবং শান্তিতে বিশ্বাসী। রাজনীতি নিয়ে তাদের অধিকাংশেরই মাথা ব্যথা নেই। সেখানকার অধিবাসী বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রেও তাই। ভোটের মাঠে প্রকাশ্যে কয়েক দলে বিভক্ত হয়ে বিএনপি জামায়াত কর্মীরা টিউলিপ বিরোধী প্রচারণায় নামে। কন্যা টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন টিউলিপের মা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা। ভোট গ্রহণের শুরু থেকে ভোর পর্যন্ত মেয়ের নির্বাচনী এলাকাতেই ছিলেন তিনি। খালাত বোনের নির্বাচনের সময় পাশে থাকতে শেখ রেহানার পাশে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও। কিন্তু টিউলিপ নির্বাচনে জয়ী হলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য তা রাজনৈতিকভাবে ইতিবাচক হবে, এমন বিবেচনায় ভোটের আগ থেকেই টিউলিপ বিরোধী প্রচারণা চালান যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতারা। ভোটের দিনেও কিলবার্ন ও হ্যামস্টেড নির্বাচনী এলাকায় যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এম এ মালেকের নেতৃত্বে মহড়া দিতে দেখা যায় বিএনপির কিছু নেতাকর্মীদের। ঠিক সে সময়েই চ্যানেল আই ইউরোপের রিপোর্টার আব্দুর রশীদের সঙ্গে কথা বলেন শেখ রেহানা। তিনি এসব ব্যাপারে কোন মন্তব্য না করে দোয়া চান মেয়ের জন্য। শেখ রেহানা বলেন, ‘নির্বাচনে টিউলিপ তো জিতেই গেছে। কে বিরোধিতা করেছে সেসব নিয়ে আর বিভাজনের কী দরকার?’ শেখ রেহানা এক্ষেত্রে উদারতা দেখালেও বিষয়টি শেষ হয়ে যাচ্ছে না। এই চর্র্চা আগামী দিনের জন্য আরও অশুভ হবে। ব্রিটেনের বাঙালীরা নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠীর এই অপতৎপরতা ঘৃণার চোখে দেখছেন। তারেক রহমান সেখানে বসে কলকাঠি নাড়ছেন বলেও অভিযোগ উঠছে। জয় পরাজয়ের কারণ নিয়ে চলছে নানামুখী বিশ্লেষণ ॥ ব্রিটেনের এবারের নির্বাচন ছিল আনপ্রেডিক্টেবল, তবে কিছুটা এগিয়ে থাকবেন ক্যামেরন এমনটিই ছিল ব্রিটেনের গণমাধ্যম, জরিপকারী বিভিন্ন সংস্থার মতামত আর খবরে। কিন্তু শুক্রবারের ফলাফলে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির বিজয়, লেবার পার্টি আর লিবডেমের বিশাল পরাজয়ের কারণ নিয়ে চলছে নানামুখী বিশ্লেষণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্যামেরনের হাত ধরেই এই বিশাল বিজয় পেয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠে দেশটিকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে আসা, বেকারত্বের হার কমিয়ে আনার পাশাপাশি ইউরোপে ব্রিটেনের থাকা না থাকার প্রশ্নে গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে ক্যামেরন ভোটারদের মন জয় করতে পেরেছেন। এছাড়া শেষ সময়ে কোয়েশ্চন টাইমে অংশ নিয়ে ক্যামেরন কর্মরত মানুষের ওভারটাইমে কাজ করার ক্ষেত্রে ট্যাক্স কমানোর প্রতিশ্রুতি দেন। সার্বিক বিচারে এক মেয়াদে সরকার চালানোর সময়ে মানুষের প্রত্যাশাকে মাথায় রেখে কাজ করায় কুশলী নেতৃত্বের ক্যামেরনে উপর ভর করেই এমন জয় পেয়েছে কনজারভেটিভ। সিলেটে আনন্দ ॥ ব্রিটেনে লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ‘হাউজ অব কমন্সে’ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্বনাথ উপজেলার মেয়ে রুশনারা আলী বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ায় বিশ্বনাথে বইছে আনন্দের বন্যা। রুশনারা আলীর বিজয়ে জন্মভূমি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ভুরকী গ্রামে পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মিষ্টি বিতরণ করেন রুশনারা আলীর সমর্থকবৃন্দ। বিশ্বনাথ উপজেলার একটি অজপাড়া গ্রাম ভুরকি। কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকলেও ভুরকি গ্রামটি এখনও নানান সমস্যায় জর্জড়িত। ২০১০ সালে রুশনারা আলী ব্রিটেনের প্রথম বাঙালী এমপি নির্বাচিত হওয়ায় পর তার জন্মভূমি ভুরকি গ্রামও পরিচিতি পায়।
×