ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্কটল্যান্ডে রাজনৈতিক ভূমিকম্প

প্রকাশিত: ০৭:০১, ৯ মে ২০১৫

স্কটল্যান্ডে রাজনৈতিক  ভূমিকম্প

যুক্তরাজ্যের ২০১৫ সালের নির্বাচনী ফলাফলে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) অবিশ্বাস্য সাফল্য এবং স্কটিশ স্বাধীনতার পক্ষে দ্বিতীয় গণভোট আহ্বানের হুমকি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালানকালে ডেভিড ক্যামেরনের প্রথম বড় ধরনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ১৯১৮-তে সিন ফেইন আয়ারল্যান্ডের স্বরাজকামী দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার পর এটি ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে বৃহত্তম নির্বাচন বিপ্লব এবং স্কটিশকদের এই বিজয়বার্তা যুক্তরাজ্যের অস্তিত্বের জন্য একটি আসন্ন বিপদের লক্ষণ হয়ে দেখা দিতে পারে। ভাষ্যকাররা বলেছেন, ক্যামেরন এখন স্কটল্যান্ডকে পূর্ণআর্থিক স্বায়ত্তশাসন দিতে বাধ্য হতে পারেন। এর আওতায় কনজারভেটিভদের তৈরি রানীর ভাষণের প্রতি এসএনপির সমর্থনের বিনিময়ে ব্রিটেন স্কটিশদের উচ্চতর পেনশনও আনুষঙ্গিক সুবিধা দেবে। ব্রিটেনের এই নির্বাচনী ফলাফল স্কটর‌্যান্ডে একটি ভূমিকম্পসম রাজনৈতিক পালাবদলের সূচনা করেছে, ব্রিটিশ রাজনীতির অবয়বকে যা বদলিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা ঘোষণার গণভোটে পরাস্ত হওয়ার ঠিক ৮ মাস পরে এসএনপি এ পর্যন্ত ৫৯ আসনের মধ্যে ৫৬টিতে বিপুলভাবে জয়ী হয়েছে। খবর ওয়াশিংটন পোস্টও গার্ডিয়ান ও ডেইলি মেইলের। গত সেপ্টেম্বরের গণভোটে পরাজয়ের পর বসন্তকালীন এই নির্বাচনে এসএনপির এই উত্তাল বিজয় বিরাট চমকের সৃষ্টি করেছে। তাদের এই সাফল্য লেবার পার্টির ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে। স্কটল্যান্ড এতদিন তাদের ঐতিহ্যবাহী শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। এসএনপির সাফল্যের জোয়ার এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, তাতে লেবারের ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রচার প্রধান ডগলাস আলেকজান্ডারও তাতে ভেসে গেছেন। তিনি ২০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী মাইরি ব্ল্যাকের কাছে হেরে গেছেন। পরাজয় স্বীকার করে আলেকজান্ডার বলেছেন, এখন লেবারের দায়িত্ব ‘আস্থা পুনরুদ্ধার করা’Ñ যা দৃশ্যত হারিয়ে গেছে। পরে স্কটল্যান্ডে লেবার পার্টির নেতা জিমমারফিও এসএনপির কাছে তার আসনটি হারান এসএনপির পক্ষে অবিশ্বাস্য রকম ৩৫ শতাংশ সমর্থন বৃদ্ধির ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন তার দীর্ঘদিন ধরে রাখা কার্ককালডিও কাউডেনবিথের আসনটি হারিয়েছেন। ব্রাউন রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঘটনা প্রবাহ স্কটল্যান্ড ও লেবার পার্টিকে বর্তমান অবস্থানে টেনে এনেছে। এ জন্য পার্টির (লেবার) মধ্যকার দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাবলী যেমন আছে তেমনি আছে গণভোটের প্রচারাভিযানে স্কটল্যান্ডে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া। স্বাধীনতার ভোটে হেরে যাওয়ার পরেও সঙ্কুচিত না হয়ে এসএনপি আরও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। দলে সদস্য সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তমনি উৎসাহ-উদ্দীপনাও বহুগুণে বেড়ে গেছেÑ লেবার পার্টিতে যা দেখা যায়নি। স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য গণভোট উপলক্ষে প্রচারকালে লেবার যুক্তরাজ্যের অখ-তা রক্ষা এবং দেশ ভাঙ্গার আন্দোলনকে পরাস্ত করার সর্বদলীয় প্রচেষ্টায় কনজারভেটিভ ও অন্যদের সঙ্গে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে লেবারকে দিতে হয় চড়া মাশুল। যেসব ভোটার চেয়েছিল লেবার স্কটল্যান্ডের প্রতি একনিষ্ঠ থাকবে তারা এই সিদ্ধান্তকে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল বলে গণ্য করে। তাদের কাছে মনে হয় লেবারের লন্ডনের সঙ্গে যোগসাজশ আছে এবং তারা নির্ভরযোগ্যভারে স্কটিশ নয়। এ প্রসঙ্গে লন্ডনভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর গবর্নমেন্টের পরিচালক পিটার রিডেল বলেন। ‘স্কটল্যান্ডে এই মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছিল যে, তারা আমাদের বিক্রি করে দিয়েছে।’
×