ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাড়ে ৯৬ হাজার কোটি টাকার নতুন এডিপি আসছে এবার

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৯ মে ২০১৫

সাড়ে ৯৬ হাজার কোটি টাকার নতুন এডিপি আসছে এবার

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আগামী অর্থবছরের (২০১৫-১৬) জন্য মোট ৯৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আসছে। ইতোমধ্যেই এর খসড়া তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এটি হবে এ যাবত কালের সর্বোচ্চ এডিপি। পরিবহন এবং বিদ্যুত খাতে দেয়া হচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। আগামী ১৪ মে বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এটি উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, শেষ পর্যন্ত এনইসিতে প্রতিবছরের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী কিছু বরাদ্দ বাড়াতেও পারেন। কেননা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দাবির পরিমাণ বেশি। অন্যদিকে সে অনুযায়ী আমরা বরাদ্দ দিতে পারিনি। একক প্রকল্প হিসেবে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্প। এটির অনুকূলে বরাদ্দ থাকছে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব শফিকুল আজম জনকণ্ঠকে জানান, এখনও বলা যাবে না যে, এডিপির আকার চূড়ান্ত হয়েছে। কোননা, প্রতিনিয়ত সংযোজন-বিয়োজন করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করছি আগামী অর্থবছরে এডিপির বাস্তবায়ন বাড়বে। কেননা মানুষের অভিজ্ঞতা দিন দিন বাড়ছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এডিপি বাস্তবায়নের অতিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে বলে মনে করছি। সূত্র জানায়, মোট এডিপির মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৯২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫৮ হাজার কোটি টাকা ও বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৩৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। তবে এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, মেগা প্রকল্পে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। এ জন্য এডিপির আকার প্রায় এক লাখ কোটি টাকা হবে। নতুন এডিপিতে বৈদেশিক অংশে বরাদ্দের ৩৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, আর অনুদানের আকার ধরা হচ্ছে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে খাতভিত্তিক এ বরাদ্দ চূড়ান্ত করেছে ইআরডি। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন। পদ¥া সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় অঙ্কের অর্থের চাহিদার প্রেক্ষিতে সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে এ খাতে, যা মূল এডিপির ২১ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে বিদ্যুত খাত। এ খাতের জন্য মোট এডিপির ১৬ শতাংশ বারদ্দ দেয়া হচ্ছে। যা অর্থের পরিমাণে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা ১০ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাত। মোট এডিপির ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ বরাদ্দ পেয়ে এ খাতটির অবস্থান তৃতীয়তে। এছাড়া অন্য খাতের মধ্যে শিক্ষা ও ধর্ম ১০ হাজার ৩৬ কোটি, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান ৮ হাজার ৪৩৬ কোটি এবং স্বাস্থ্য খাতে ৬ হাজার ৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। এছাড়া কৃষিতে ৪ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্প দৃশ্যমান করতে চায় সরকার। অগ্রাধিকারে থাকা পদ্মা সেতু নির্মাণে চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে নতুন অর্থবছরে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। যা আগামী অর্থবছরের বাজেটে একক প্রকল্পে সর্বোচ্চ বরাদ্দ। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তা কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে ৭ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা করা হয়। সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনে উন্নীতকরণ, মেট্রোরেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পেও বড় অঙ্কের বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আওতায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব প্রকল্পের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্থ সঙ্কট আছে। তবে পদ্মা সেতুতে অর্থ সঙ্কটের কারণে কোন সমস্যা না হয় সে জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের প্রতিশ্রুত বড় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পেও পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে যাতে কোন ধরনের অর্থ সঙ্কট সৃষ্টি না হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান। তিনি বলেন, আগামী কয়েক বছর পদ্মা সেতু প্রকল্পে বড় অঙ্কের বরাদ্দ দেয়া হবে। একক কোন প্রকল্পে এখন পর্যন্ত যা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে সেটি সর্বোচ্চ, এতে কোন সন্দেহ নেই। পদ্মা প্রকল্পে চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। যাতে অর্থ সঙ্কটের কারণে অগ্রাধিকারের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোন সমস্যা না হয়। একইভাবে সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা বড় প্রকল্পেও বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে কয়েকগুণ। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণে ৯১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটিতে ৭০০ কোটি টাকা দেয় পরিকল্পনা কমিশন। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ১ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, এ প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে ৬৯৬ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা, গোমতী সেতু নির্মাণে এবং বিদ্যমান সেতুর পুনর্বাসনে ৮১৬ কোটি টাকা, এ অর্থবছরে প্রকল্পটির বিপরীতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩০ কোটি টাকা, মেট্রোরেল নির্মাণে ৩৮৬ কোটি টাকা, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটে ১১৫ কোটি টাকা এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক উন্নয়নে ২৭৩ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ৮৬ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে মূল এডিপি হচ্ছে ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। মূল এডিপির মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫২ হাজার ৬১৫ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। নতুন এডিপিতে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে পরিবহন খাত। পরবর্তীতে তা সংশোধন করে কমিয়ে আনা হয় ৭৫ হাজার কোটি টাকায়।
×