ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোগীর সংখ্যা ৮২২

চাঁপাইয়ে আর্সেনিক আতঙ্ক ॥ ঝুঁকিতে ১৬ লাখ মানুষ

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৮ মে ২০১৫

চাঁপাইয়ে আর্সেনিক আতঙ্ক ॥ ঝুঁকিতে ১৬ লাখ মানুষ

ডি. এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ জেলাজুড়ে এখন আর্সেনিক আতঙ্ক। ১৯৯৩ সালে প্রথম জেলার সদর থানার চামাগ্রামে পানিতে আর্সেনিক ধরা পড়ে। তারপর থেকে আর্সেনিক মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এক কথায় ভয়াবহ আর্সেনিক ঝুঁকিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৬ লাখ মানুষ। আর্সেনিক রোগীর সংখ্যা ৮২২। তবে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হতে পারে। গত ২৫ বছরে জেলাজুড়ে আর্সেনিক রোগীর সংখ্যা লক্ষাধিক। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ২০১১ সালের একটি রিপোর্টে দেখা যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩০.৪৮, শিবগঞ্জে ১৯.০২, গোমস্তাপুরে ১১.০৬, নাচোলে ২.৬৬ ও ভোলাহাট উপজেলায় ৪.০৯ শতাংশ নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে। তারপর গড়িয়েছে আরও চার বছর। কিন্তু আর্সেনিক প্রতিরোধে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ কার্যকর ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় আর্সেনিক ভয়াবহ রূপ নেয়ার কারণে অধিকাংশ টিওবয়েল বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ করা হয়েছে একাধিক ডিপ টিওবয়েল। নতুন করে যে খানেই ডিপ বসাতে যাচ্ছে সেখানেই আর্সেনিকের উপস্থিতির কারণে পৌর কর্তৃপক্ষ পিছিয়ে আসছে। কিছু কিছু গ্রামের শতকরা ১০০ ভাগ নলকূপের পানিতেও আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। জেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মহারাজপুর ইউনিয়নের অবস্থান। এই ইউপির নিচুধুমি গ্রামে ৫১ সচল নলকূপের প্রতিটিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের দেখা মিলেছে। একই ইউপির মহারাজপুর, মিনটোলা, ডোলপাড়া, নামোপাড়া, টিকরা, তিলক, চাঁদপুর, চৌধুরীপাড়া, গোয়ালটুলি, লালাপাড়া, গোবরাতলা ইউনিয়নের মুন্সেফপুর, বেহুলা ডিহিপাড়া, মুফাপাড়া, বালিয়াডাঙ্গা ইউপির ফকিরপাড়া, নসিপুর, বারঘরিয়া ইউপির নতুনবাজার, হালদারপাড়া, লক্ষ্মীপুর, বকুলপাড়া, চামাগ্রাম, রানীহাটি ইউপির চুনাখালী, দেলপাড়া, চকবহরমসহ ১২ গ্রাম, শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউপির দাদনচকসহ ১৪ গ্রামে, বিনোদপুর ইউপির পাইকড় তলা, জমিনপুরসহ ১৭ গ্রামে আর্সেনিকের উপস্থিতি আতঙ্কজনক। জেলার ১০ ইউপির ১৬০ গ্রামের ৭ হাজার ৩৫১ নলকূপে পরীক্ষা চালিয়ে ৩ হাজার ১৬১টিতে বিপজ্জনক আর্সেনিক, ৫ হাজার ৬৭২টিতে সহনীয় মাত্রার আর্সেনিক পাওয়া গেছে। এক কথায় সর্বত্র আর্সেনিক প্রতিরোধ কোন ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় লোকজনের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। যদিও জেলা প্রশাসন থেকে ইউপি পর্যন্ত আর্সেনিক বিষয়ে কমিটি থাকার কথাও রয়েছে কিন্তু তাদের কোন কার্যক্রম দেখা যায় না। এমনকি এখন পর্যন্ত গ্রাম পর্যায়ে যেসব জরিপ পরিচালিত হয়েছে তাও করেছে, বিভিন্ন এনজিও। তাই আর দেরি না করে গ্রামের মানুষকে বাঁচাতে হলে সরকারী সংস্থাগুলোকে, বিশেষ করে সিভিল সার্জন অফিসকে আরও সক্রিয় হতে হবে। নিশ্চয়তা দিতে হবে সুপেয় পানির জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে। এ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আর্সেনিক বিষয়ে কোন কথা বলতে চাননি।
×