ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিরপুর টেস্ট ॥ প্রথম বলেই ইনজুরিতে শাহাদাত, খেলা অনিশ্চিত

শুরুটা ভাল করেও প্রথম দিনেই চাপে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৭ মে ২০১৫

শুরুটা ভাল করেও প্রথম দিনেই চাপে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন শেষে আজহার আলীর অপরাজিত ১২৭ ও ইউনুস খানের ১৪৮ রানে পাকিস্তান যে ৩ উইকেটে ৩২৩ রান করল, তাতে চাপে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। শুধু রানের চাপেই নয়, নানাবিধ চাপেই পড়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে দিনের প্রথম বলেই পেসার শাহাদাত হোসেন রাজীব ইনজুরিতে পড়লেন। আর মাঠ ছাড়লেন দ্বিতীয় বল করে। যাও মাঠে নামলেন, মধ্যাহ্ন বিরতিতে অনুশীলন করার সময় আবার ডান হাঁটুর ব্যথায় মাঠে লুটিয়ে পড়লেন, স্ট্রেচারে করে তাকে মাঠ থেকে বের করা হলো; আর মাঠেই ফিরলেন না। এ বোলার আর বল করতে পারবেন না। এমনিতেই দলে বোলারের সংখ্যা কম। পেস আক্রমণে মোহাম্মদ শহীদের সঙ্গে ছিলেন শাহাদাত। আর স্পিন আক্রমণে তাইজুল ইসলামের সঙ্গে সাকিব আল হাসান। এর মধ্যে মিরপুর টেস্টে আর বলই করতে পারবেন না শাহাদাত। বোলিং থেকে একজন কমে গেল। বোঝাই যাচ্ছে, পাকিস্তানের ২০ উইকেট তুলে নেয়ার স্বপ্ন শুরুতেই শেষ হয়ে গেছে। তামিম আর মুশফিক ছাড়া যে দলের ৯ জনই বল করলেন প্রথমদিন, তাতেও কোন লাভ হলো না। বোলিং দিয়ে পাকিস্তানকে আটকানো যাবে না, সেই চাপে শুরু থেকেই ভুগতে থাকল বাংলাদেশ। সেই চাপ এতটাই তীব্র হলো যে ৫৮ রানে শুরুতে মোহাম্মদ হাফিজ (৮) ও সামি আসলামের (১৯) উইকেটটি তুলে নেয়া গেলেও তৃতীয় উইকেট শিকার করতেই বাংলাদেশ বোলারদের অপেক্ষা করতে হলো ৩০৮ রান পর্যন্ত! শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের ২৯তম শতক তোলা ইউনুস খানকে (১৯৫ বলে ১১ চার ও ৩ ছক্কায় ১৪৮ রান) আউট করলেন দিনটিতে দ্বিতীয় উইকেট নেয়া শহীদ। যিনি পেস আক্রমণের একমাত্র ভরসা হয়ে থাকলেন। দিনের শেষ বেলায় ৫ ওভারের মতো বাকি থাকতে ইউনুসকে আউট করে তৃতীয় উইকেট শিকার করা গেল। কিন্তু তাতে চাপ থেকে মুক্ত হতে পারল না বাংলাদেশ। আরেকজন তো এখনও ব্যাটিং করেই চলেছেন। হাফিজ আউট হওয়ার পর থেকে যে ব্যাট হাতে নামলেন, দিন শেষ করেই মাঠ ছাড়লেন। ২৫৮ বলে ১৩ চারে ১২৭ রান করে ব্যাট করছেন। সঙ্গে ব্যক্তিগত ৩০০০ রানের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন। আবার ইউনুসের সঙ্গে বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে ২৫০ রানের রেকর্ড জুটিই গড়েছেন। ইউনুস ও আজহারকে আউট করতে যে কত চেষ্টা ছিল বাংলাদেশ বোলারদের! ইউনুস আউট হতেই নেমেছেন আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মিসবাহ উল হক। যিনি ৯ রানে ব্যাট করছেন। আজ দ্বিতীয় দিনে আজহারকে নিয়ে রানের পাহাড় গড়ার চেষ্টাও করবেন। রানের চাপের সঙ্গে বাংলাদেশ এরই মধ্যে প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ১০ উইকেট তুলে নিতে পারবে কিনা, সেই চাপেই পড়ে গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আবার মুশফিকের খানিক ডান হাতের অনামিকায় ব্যথা পাওয়ার বিষয়টিও। ইউনুস যখন আউট হলেন ৮৪.৫ ওভারের সময়, তার আগের বলেই শহীদের বলে মুশফিক ক্যাচ ফেলেছেন। এ ক্যাচ ধরতে গিয়ে মুশফিক আবারও খুলনা টেস্টের মতো ডান হাতের অনামিকায় ব্যথা পেয়েছেন। এখানেও চাপ তৈরি হচ্ছে। মুশফিক এখন ব্যাট করতে পারলেও কতটা ভাল ব্যাটিং করবেন, তা নিয়ে সংশয় থাকতেই পারে। আবার বল করতে না পারলেও শাহাদাত ব্যাট করতেও পারেন। তাতেও কী লাভ? শাহাদাত কি বড় কোন স্কোর গড়ে দিতে পারবেন? হাঁটুর ব্যথা নিয়ে তো ব্যাটিংয়ে আরও অসুবিধা হওয়ার কথা শাহাদাতের। বোঝাই যাচ্ছে, ১০ জন ধরেই বাংলাদেশকে খেলতে হবে। রানের চাপ, মুশফিককে নিয়ে চাপ, শাহাদাতকে নিয়ে চাপ; শুধুই চাপ আর চাপ। এর সঙ্গে ‘নো’ বলে ১৮ রানে থাকা আজহার ও ৭৮ রানে থাকা ইউনুসকে আউট করা যায়নি। বোলারদের জন্য এখন ‘ওভার স্টেপ’ দেখে বল করার চাপও রয়েছে। তাতে কি আর ভাল বল করা যাবে? সঙ্গে ক্যাচ মিস তো আছেই। তাতে কী দাঁড়াচ্ছে? যা করার আবারও ব্যাটসম্যানদেরই করতে হবে। খুলনা টেস্টে যেমন দল ৮ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলেছে, মিরপুর টেস্টেও তাই করেছে। তাহলে কি আবারও ‘মুখে জয়, অন্তরে ড্র’র সম্ভাবনা নিয়েই নেমেছে বাংলাদেশ? সেই প্রশ্ন এবারও উঠতে পারে। এবারও আবার হারের চেয়ে ড্র ভাল হিসেবই চলে আসছে। তাহলে যে ওয়ানডেতে টানা তিন ম্যাচ জিতে একমাত্র টি২০’তে জেতার পর টেস্ট সিরিজেও হার হবে না বাংলাদেশের। প্রথম টেস্ট ড্রর পর দ্বিতীয় টেস্টও যদি ড্র হয়, তাহলে বাংলাদেশই বাজিমাত করবে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে এসে খালি হাতে দেশে ফিরবে পাকিস্তান। প্রথমদিন দ্যুতি ছড়ানো একমাত্র বোলার মোহাম্মদ শহীদ। ২ উইকেট তুলে নিয়েছেন। তিনি এখনও ভীষণ আশাবাদী। বলেছেন, ‘এ উইকেটে ঘাস আছে। এখন তিনজন বোলার আছে। আশা করছি উইকেটে ভাল স্পিন ধরবে। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই অলআউট করে দেয়ার লক্ষ্য আছে। শাহাদাত থাকলে ভাল হতো। এমন কন্ডিশনে বল করা সবসময়ই চ্যালেঞ্জ। এখন ‘নো’ বল দেখে বল করতে হবে। ব্যাটসম্যানদের এ উইকেটে ব্যাটিং করা কঠিন। তবে যদি ব্যাটসম্যান বল দেখে খেলতে পারে, তাহলে রান করা সম্ভব। আমাদের ব্যাটসম্যানরা আশা করি রান করবে।’ শহীদ ভীষণ আশাবাদী। খুলনা টেস্টে তামিম-ইমরুল যে ৩১২ রানের জুটি গড়েছেন, তাতে পাকিস্তান যত রানই করুক; বাংলাদেশকে নিয়ে প্রত্যাশা থাকবেই। ইউনুস খান যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তাতে বোঝাই যাচ্ছে বলতে চাচ্ছেন, ‘যত বেশি রান করা যায় ততই ভাল। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা অনেক রান করতে সক্ষম।’ তবে প্রথমদিন শেষেই যে ইউনুস বলেছেন, ‘আমাদের খুব ভাল সুযোগ আছে ম্যাচ জেতার।’ ইউনুসের এ কথাটিই পাকিস্তান প্রথমদিনে ভাল খেলায় বলতে পারছে। এ কথাটি প্রথমদিন শেষে অযৌক্তিকও কি? শাহাদাতকে হারিয়ে বাংলাদেশের বোলিং ‘ভোঁতা’ হয়ে গেছে। তাতে পাকিস্তান বড় স্কোর গড়ে ফেলল? সেই চাপ থাকছে। বল করতে গেলে ‘ওভার স্টেপিং’য়ের চিন্তা থাকবে। থাকছে চাপও। মুশফিক ব্যথা পেলেন। সেই ব্যথায় যদি ঠিকমতো ব্যাটিং করতে না পারেন, সেই চাপ থাকছে। সবচেয়ে বড় বিষয় টস জিতে মুশফিক যে ফিল্ডিং নিয়ে একরকম ক্রিকেটীয় ‘জুয়া’ খেললেন, তাতে পাকিস্তান যে প্রথমদিনেই বিশাল রান করে ফেলেছে, সেই রানের চাপেই পড়ে গেছে বাংলাদেশ।
×