ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাল রবীন্দ্রজয়ন্তী, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

উদয় দিগন্তে ওই শুভ্র শঙ্খ বাজে, মোর চিত্ত মাঝে...

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৭ মে ২০১৫

উদয় দিগন্তে ওই শুভ্র শঙ্খ বাজে, মোর চিত্ত মাঝে...

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উদয় দিগন্তে ওই শুভ্র শঙ্খ বাজে/মোর চিত্ত-মাঝে/ চির নূতনেরে দিল ডাক/ পঁচিশে বৈশাখ। চির নূতন কবি, নূতনের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী কাল শুক্রবার। প্রতিবছরের মতো এবারও প্রাণের আবেগ ভালবাসা আর শ্রদ্ধায় বাঙালী উদ্যাপন করবে দিবসটি। রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে বরাবরের মতোই থাকছে বর্ণাঢ্য সব আয়োজন। সে লক্ষ্যে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। টেলিভিশনগুলোর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে আরও আগে। পত্রিকাগুলোতে চলছে বিশেষ সংখ্যার প্রস্তুতি। সব মিলিয়ে রবীন্দ্রজয়ন্তী উদ্যাপনের চমৎকার একটি আবহ এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। এবার সরকারীভাবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সভ্যতার সঙ্কট ও রবীন্দ্রনাথ।’ বিশেষ এই থিম সামনে রেখে জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ বছর কবিগুরুর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে। শুক্রবার শাহজাদপুরে বহু কাক্সিক্ষত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টায় শাহজাদপুরের পাইলট হাইস্কুল মাঠে আয়োজন করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র স্মারক বক্তব্য প্রদান করবেন এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, নওগাঁর পতিসর ও খুলনায় দক্ষিণডিহিতে ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন করা হবে। এ উপলক্ষে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হবে। তবে রাজধানী ঢাকায় এরই মাঝে শুরু হয়ে গেছে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা। কবি সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার আয়োজনে চলছে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব। মঙ্গলবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। উৎসবের সেøাগানÑ হও মৃত্যুতোরণ উত্তীর্ণ,/ যাক, যাক ভেঙে যাক যাহা জীর্ণ। এই সেøাগানে এখন মুখরিত মিলনায়তন। রবীন্দ্রজয়ন্তীর পরদিন শনিবার পর্যন্ত এখানে উৎসব চলবে। প্রতিদিনই গানে গানে কবিগুরুকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাবেন শিল্পীরা। শুক্রবার ছায়ানট আয়োজন করবে দুইদিনের রবীন্দ্র উৎসব। রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে উৎসবের উদ্বোধন করবেন অধ্যাপক সোমেন বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্র-চিত্রকলা নিয়ে দৃষ্টান্তসহ বক্তৃতা করবেন তিনি। থাকবে অতিথি এবং ছায়ানটের শিল্পীদের একক গান, আবৃত্তি। পাঠের পাশাপাশি থাকবে সুরের ধারার রবীন্দ্র-নাটকের গান। দ্বিতীয় দিন শনিবারও অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা ছয়টায়। এদিন পরিবেশিত হবে রবীন্দ্রনাথের গান থেকে কবিতা, কবিতা থেকে গান নিয়ে সন্দা খাতুনের গ্রন্থনা ‘রূপে রূপে অপরূপ’। থাকবে সুরতীর্থর মূল গান ও তা থেকে ভাঙ্গা রবীন্দ্রসঙ্গীতের উপস্থাপন, নৃত্যদল জাগো আর্ট সেন্টার ও ভাবনার পরিবেশনা। পাশাপাশি থাকবে অতিথি এবং ছায়ানট শিল্পীদের একক গান, আবৃত্তি ও পাঠ। সব মিলিয়ে মানসম্পন্ন একটি উৎসব আয়োজনের আশা করছে ছায়ানট। পঁচিশে বৈশাখ বিকেল থেকে পরবর্তী তিনদিন রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবির চিত্রশিল্প নিয়ে আয়োজিত হবে বিশেষ প্রদর্শনী। কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে ২৬ বৈশাখ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বাংলা একাডেমি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে পঁচিশে বৈশাখ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে ‘এবি ব্যাংক চ্যানেল আই রবীন্দ্রমেলা।’ কার্যালয়ের সামনে খোলা মঞ্চে থাকবে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল দশটায়। থাকবে রবীন্দ্রসঙ্গীত, রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য, শিশুনৃত্য, রবীন্দ্র কবিতা থেকে আবৃত্তি, রবীন্দ্র রচনাবলী থেকে পাঠ, রবীন্দ্র বিষয়ক ছবি আঁকাসহ নানা আয়োজন। আয়োজকরা জানান, রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি ও ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে মেলায়। মেলায় আরও থাকবে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৫ স্টল। মেলায় রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ, বরেণ্যশিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাহিত্যিকরা উপস্থিত থাকবেন। রবীন্দ্রমেলায় এবার সম্মাননা জানানো হবে নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমানকে। মেলা সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল আই। ১৫৪তম রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে শুক্রবার বিশেষ আয়োজন থাকছে ঢাকার নাট্যমঞ্চে। এদিন রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রাঙ্গদা’র বিশেষ মঞ্চায়ন করবে স্বপ্নদল। শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা সাতটায় এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিরায়ত সৃষ্টি ‘চিত্রাঙ্গদা’-র গবেষণাগার নাট্যরীতিতে নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। রবীন্দ্রনাথ মহাভারতের চিত্রাঙ্গদা-উপাখ্যান অবলম্বনে কিছু রূপান্তরসহ দুই ভিন্ন সময়ে এবং দুটি আলাদা আঙ্গিকে ‘চিত্রাঙ্গদা’ রচনা করেছিলেন। ১৮৯২-এ তাঁর একত্রি শ’ বছর বয়সে রচনা করেন কাব্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’ এবং এর প্রায় চুয়াল্লিশ বছর পরে ১৯৩৬-এ পঁচাত্তর বছর বয়সে রচনা করেন নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’। নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’ সুপরিচিত এবং এটি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন দলের মাধ্যমে অসংখ্যবার মঞ্চায়িত হয়েছে। স্বপ্নদলের প্রযোজনাটি নির্মিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের কাব্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’ পা-ুলিপিটি অবলম্বনে। ‘চিত্রাঙ্গদা’ প্রযোজনার গ্রন্থিকরা হলেনÑ সুকন্যা, মিতা, মোস্তাফিজ, রেজাউল, শিশির, সামাদ, মাধূরী, শাহীন, জেবু, নাবলু, হিটলার, তানভীর, রিমু, তানিয়া, আলী, জুয়েনা, বিপুল, সাইদ, উজ্জ্বল প্রমুখ। পরদিন শনিবার শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হবে প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদলের ‘শ্যামাপ্রেম’ নাটকের ৫০তম প্রদর্শনী। নাটকটির নাট্যরূপ দিয়েছেন শ্রী চিত্তরঞ্জন ঘোষ ও নির্দেশনা দিয়েছেন অনন্ত হিরা। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন নূনা আফরোজ, অনন্ত হিরা, রামিজ রাজু, ইউসুফ পলাশ, নিজাম লিটন, শুভেচ্ছা, আশা, আবু হায়ত জসিম, রিগ্যান রতœ, জসিম, সুজন, সুজয়সহ অনেকে। ‘শ্যামাপ্রেম’ নাটকটির মূল উপজীব্য ভালবাসা, স্বাধীনতা ও মানবতার চিরায়ত আকাক্সক্ষা। এছাড়াও দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিবসটি যথাযোগ্যভাবে উদ্যাপন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ এ উপলক্ষে কর্মসূচী গ্রহণ করবে। টেলিভিশনগুলোকে প্রস্তুতি সারতে হয় অনেক আগেভাগেই। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে থাকছে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। বিনোদন প্রধান টেলিভিশনগুলোতে থাকছে কবিগুরু রচিত নাটক। এক পর্বের একাধিক নাটক রাখা হচ্ছে অনুষ্ঠানমালায়। থাকছে নৃত্যনাট্য, আবৃত্তি, আলোচনাসহ নানা আয়োজন। সংবাদনির্ভর টিভি চ্যানেলগুলোও বিশেষ পরিকল্পনা সাজিয়েছে। এভাবে রবীন্দ্রজয়ন্তীর আগেই সরব হয়ে উঠেছে সংস্কৃতি অঙ্গন। ২৫ বৈশাখ নিয়ে বাঙালীর এমন আবেগ ও উচ্ছ্বাস সম্পর্কে বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী তপন মাহমুদ বলেন, বাঙালীর প্রাণস্পন্দনের নাম রবীন্দ্রনাথ। আমাদের অনুপ্রেরণার অনন্ত উৎস তিনি। এই মহামানবের মাঝে আমরা আমাদের স্বরূপের সন্ধান করে চলেছি। তিনি চিরকালের। তাঁকে ছাড়া একটি মুহূর্তও কল্পনা করতে পারে না বাঙালী। বিশেষ দিবসগুলোতে এই আবেগ উচ্ছ্বাস প্রকাশিত হয়। দৃশ্যমান হয়। তবে শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, রবীন্দ্রনাথকে জানার আত্মস্থ করার ওপর জোর দেন বিশিষ্ট এই শিল্পী।
×