ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতির হোতা গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৬ মে ২০১৫

আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতির হোতা গ্রেফতার

শংকর কুমার দে ॥ আন্তজার্তিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদার পর এবার মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আরেক দুর্ধর্ষ জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) যোগসূত্র পাওয়া গেল বাংলাদেশে। আইএসের জন্য ল্যাপটপের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির দুই সদস্যকে। আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ডাকাতির মূলহোতা জসিমউদ্দিন ওরফে আসাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকায় সফররত ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ-এর তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলটি মঙ্গলবার পুলিশ সদর দফতরে বৈঠক করে বর্ধমান খাগড়াগড়ের জেএমবির বোমা বিস্ফোরণসহ জঙ্গী তৎপরতার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। পাকিস্তান থেকে আল কায়েদা জঙ্গী সংগঠনটি বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিত রায় হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে ভিডিও বার্তা প্রচার করেছে বলে মনে করছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্র জানান, ভারতে জাতীয় তদন্ত সংস্থার তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলটি এনআইএ মঙ্গলবার পুলিশ সদর দফতরে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। তারা মূলত বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠন জেএমবির যেসব জঙ্গীরা জড়িত এবং পলাতক তাদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার মামলাটির চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে এবং এ মামলায় অন্তত ৪ জন বাংলাদেশের জেএমবির সদস্য চার্জশীটভুক্ত ও পলাতক আছে। কলকাতার বিচারিক আদালতে জঙ্গী সম্পর্কিত তথ্যাদি উত্থাপনের জন্য তথ্য সংগ্রহ ও জঙ্গী তৎপরতার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। বুধবার তারা র‌্যাবের সদর দফতরে র‌্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা রয়েছে। সঞ্জিত সিং-এর নেতৃত্বে এনআইএ প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের ভেতরে আল কায়েদা, আইএস, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জামা’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) তৎপরতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানা গেছে। আইএস সন্দেহে দুই জেএমবির জঙ্গীর রিমান্ড মঞ্জুর ॥ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গী সন্দেহে গ্রেফতার মোতাকাব্বির ওরফে সনি ও আশরাফুল ওরফে রনি নামের দুই জেএমবির জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্যকে। তাদের ৪ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। আদালতে রিমান্ডের আবেদনে জানানো হয় যে, এই দু’জন জেএমবি গোষ্ঠীর জঙ্গী সদস্য। ল্যাপটপের মাধ্যমে আইএসের জন্য সদস্য সংগ্রহ করছিল তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক একেএম কামরুল আহসান দুই জঙ্গী সদস্যকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায়। মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট উৎপল ভট্টাচার্য দুই জঙ্গী সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ডিবির ইন্সপেক্টর একেএম কামরুল আহসান দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, এ দুই জেএমবির জঙ্গী তৎপরতায় গ্রেফতার হয় রাজশাহীর নাচোলে। তাদের শ্যোন এ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। যেহেতু আইএসের জঙ্গী সদস্য এর আগেও গ্রেফতার করা হয়েছে, সেজন্য তাদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আশুলিয়ার ব্যাংক ডাকাতির হোতা গ্রেফতার ॥ আশুলিয়ার কমার্স ব্যাংকের ডাকাতির ঘটনায় মূলহোতা জসিমউদ্দিন ওরফে আসাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার রাতে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসাদ নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে পুলিশের দাবি। মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, মূলহোতাকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে অবশেষে আশুলিয়ায় সাম্প্রতিক দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাতির একটা কিনারা হলো। তিনি বলেন, আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতির রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের জঙ্গী সংগঠন চালানোর অর্থ সংগ্রহের জন্যই এ ডাকাতি করেছে। মূলহোতাই ব্যাংকের ম্যানেজারকে হত্যা করেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, জসিমসহ ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ২১ এপ্রিল দুপুরে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজার শাখায় দুর্ধর্ষ ডাকাতি করে সশস্ত্র ডাকাতদল। তাদের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত, গুলি ও বোমা হামলায় ঘটনাস্থলেই ব্যাংক ম্যানেজারসহ সাতজন ও পরবর্তীতে আরও দুই জনসহ নয় জন মারা যান। ডাকাতি করে পালানোর সময় গণপিটুনিতে এক ডাকাত নিহত হয় এবং তিন ডাকাত জনতার হাতে ধরা পড়ে। ধরা পড়া ডাকাত দলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরও চার ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে জঙ্গী তৎপরতা সম্পর্কিত জিহাদী বইসহ আলামত উদ্ধার করা হয়। পাকিস্তান থেকে ভিডিও বার্তাটি প্রচার করা হয় ॥ বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিত রায় হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে প্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা পাকিস্তান থেকে বাংলায় ভিডিও বার্তা প্রচার করেছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। এর আগে আল কায়েদা জঙ্গী সংগঠনটি হত্যার দায় শিকার আরবী, উর্দু ও ইংরেজীতে ভিডিও বার্তা প্রচার করে। তিন ভাষায় প্রচারিত ভিডিও বার্তার পাশাপাশি বাংলা অনুবাদজুড়ে দেয়া হয়। ভিডিও বার্তা প্রচারের পর বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিষয়টি তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দরা তদন্ত করে দেখতে পেয়েছে, এই ভিডিও বার্তা পাকিস্তান থেকে আপলোড করা হয়েছে। বাংলা অনুবাদ প্রচার করার পেছনে বাংলাদেশের কেউ জড়িত থাকতে পারে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সাধারণত আল কায়েদার অনুসারী। বাংলাদেশের আল কায়েদার তৎপরতার প্রমাণ নেই অভিমত ॥ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আল কায়েদা জঙ্গী সংগঠনটি বাংলাদেশের আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে কিনাÑ এমন কোন তথ্য পায়নি গোয়েন্দারা। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠন হিসেবে অভিজিতকে হত্যা করেছে বলে তদন্তে পাওয়া গেছে। হত্যাকারীদের আড়াল করতে কিংবা কেউ এটি থেকে সুবিধা নিতে আল-কায়েদার নামে ভিডিও বার্তা প্রচার করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সারাবিশ্বে আল কায়েদার নির্দেশে কোন ব্লগার খুনের ঘটনা ঘটেনি। ব্লগারের বিষয়টি বাংলাদেশে সম্প্রতি হলেও বিশ্বে অনেক পুরনো। ভারত, পাকিস্তান এমনকি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কোন দেশে আল কায়েদার হাতে কোন ব্লগার খুনের ঘটনা ঘটেনি। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ড. অভিজিত রায়ের মতো একজন ব্লগারকে আল কায়েদা কেনই বা খুন করতে যাবে এ প্রশ্ন ওঠে এসেছে গোয়েন্দা তদন্তে। যুক্তরাষ্ট্রও নিশ্চিত করতে পারেনি ॥ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিত রায়কে হত্যার সঙ্গে আল কায়েদার জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ ধরনের তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদনে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক কর্মকর্তা রয়েটার্সকে বলেন, বাংলাদেশী-আমেরিকান লেখক অভিজিত রায়ের হত্যার বিষয়ে আল কায়েদার স্বীকার সম্পর্কে আমরা সচেতন। তবে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না বেপরোয়া ওই জঙ্গী হামলাটি করেছে কিনা? অভিজিত হত্যকা-ের প্রাথমিক তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও বলেছেন, বাংলাদেশে আল কায়েদার অস্তিত্বের কোনও প্রমাণ নেই। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদস্যরা এখন পর্যন্ত দেশে আল কায়েদার অস্তিত্ব এবং এর নেটওয়ার্কের সুনির্দিষ্ট কোনও প্রমাণ পায়নি। গত শনিবার জিহাদিস্ট ফোরাম নামের একটি মনিটরিং ওয়েবসাইটে ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে অভিজিত রায় হত্যার দায় স্বীকার করেছে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার প্রধান আসিম উমর। একইসঙ্গে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, রাজীব হায়দার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক একেএম শফিউল ইসলাম হত্যারও দায় স্বীকার করেছে আল কায়েদা জঙ্গী সংগঠনটি।
×