ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ;###;আজ রাজ্যসভায় পাস হবে ;###;বৃহস্পতিবার লোকসভায় যাবে বিলটি ;###;১৯৭৪ সালের চুক্তি ও ২১১ সালের প্রটোকল হুবহু পাস হতে যাচ্ছে ;###;চুক্তির আওতা থেকে অসমকে বাদ রাখা হচ্ছে না

সীমান্ত বিল অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৬ মে ২০১৫

সীমান্ত বিল অনুমোদন

তৌহিদুর রহমান ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহুল আলোচিত স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত। অসমকে রেখেই দুই দেশের ছিটমহল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে মঙ্গলবার ভারতের মন্ত্রিসভায় সীমান্ত বিল অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের দুঃখ-যন্ত্রণার অবসান হবে। ছিটমহলে বসবাসকারী নাগরিকরা তাদের অবরুদ্ধ জীবন থেকে পাবেন মুক্তি। তাদের পরিচয় সঙ্কটও ঘুচবে। আজ বুধবার দেশটির রাজ্যসভায় বিলটি পাস হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর সব কিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার লোকসভায় চূড়ান্তভাবে স্থল সীমান্ত বিল পাস হবে। এদিকে ভারতের মন্ত্রিসভায় সীমান্ত বিল অনুমোদনের খবরে ছিট মহলের অধিবাসীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। ভারতের চলতি লোকসভা অধিবেশন চলছে। এই অধিবেশন শেষ হবে আগামী ৮ মে। আজ বুধবার রাজ্যসভায় বিলটি পাস হলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পাস হবে বহুল আলোচিত সীমান্ত চুক্তি। আর এই চুক্তির ফলেই দুই দেশের ছিটমহলবাসীর সমস্যার সমাধান হবে। অসমকে বাদ রেখে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। অসমকে রেখেই সীমান্ত বিলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে ভারতের মন্ত্রিসভায়। প্রধানমন্ত্রী মোদির সভাপতিত্বে ভারতের মন্ত্রিসভায় সীমান্ত বিল অনুমোদনের লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ে ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তি ও ২০১১ সালে স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রটোকল ভারতের লোকসভায় বৃহস্পতিবার অনুমোদন দেয়া হবে। ভারতের লোকসভার অধিবেশনে সংবিধান সংশোধনের জন্য ‘দি কন্সটিটিউশন (ওয়ান হান্ড্রেড এ্যান্ড নাইনটিনথ এ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৫’ উত্থাপিত হচ্ছে। এই বিল পাস হলে বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের দুঃখ ও যন্ত্রণার অবসান ঘটবে। ১৯৭৪ সালে ঢাকা ও দিল্লী সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশ সেই বছরই চুক্তিটি অনুস্বাক্ষর করে। এরপর ২০১১ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রটোকল স্বাক্ষর করা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ভারত কোনটিতেই অনুস্বাক্ষর করতে পারেনি। বিগত কংগ্রেস আমলে বিরোধীদল বিজেপি ও অসম গণপরিষদ এই বিলের বিরোধিতা করে বলেছিল, ছিটমহল বিনিময় হলে যে পরিমাণ জমি হাতবদল হবে, তাতে ভারত প্রায় সাত হাজার একর বেশি জমি হারাবে। এরপর নানা তৎপরতায় বিজেপি শেষ পর্যন্ত নরম হলেও অসম গণপরিষদের সঙ্গে যোগ দেয় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। বাংলাদেশের সঙ্গে ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি এবং ২০১১ সালে স্বাক্ষরিত প্রটোকল বাস্তবায়নে ভারতের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন। সে হিসাবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ভারতের পার্লামেন্টে ওঠে স্থলসীমান্ত চুক্তি। বিলটি উত্থাপন করতে গিয়ে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদ বিরোধিতার মুখে পড়েন। এর আগে সে বছরের মে ও আগস্ট মাসে আরও দুই দফা এই বিলটি উত্থাপনের চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন তিনি। সে সময় তিনি বিরোধীদের তোপের মুখেও পড়েন। সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ভারত সফরের সময় সেদেশের সরকারী দল বিজেপি এবং বিরোধী দল কংগ্রেসের একাধিক নেতার সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আলোচনা করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদকে জানান রাজ্যসভায় স্থায়ী কমিটির সাবেক মন্ত্রী শশী থারুরের নেতৃত্বে পুনর্গঠন করা হয়। কমিটিতে তিন মাস ধরে আলোচনার পর সীমান্ত বিল চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, বিলটি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে এক বৈঠকে কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম নবী আজাদও জানিয়েছিলেন, তাঁর দল বিলটি পাসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাঁরা বিলটি বিবেচনা করবে। সীমান্ত বিলে থাকছে অসম ॥ সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অসমকে বাদ রেখে বিলটি লোকসভায় অনুমোদনের উদ্যোগ নিয়েছিল ভারত। তবে শেষ পর্যন্ত অসমকে রেখেই স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে ভারতের মন্ত্রিসভা। অসম বিজেপির পক্ষ থেকে স্থল সীমান্ত চুক্তির বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতার মুখে চুক্তি থেকে অসমের ছিটমহলগুলো বাদ দেয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিবেচনা করেছিলেন। তবে স্থল সীমান্ত চুক্তি থেকে অসমকে বাদ না দিতে মোদিকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। অসমকে বাদ দিলে রাজ্যসভায় এ বিল পাসে সমর্থন দেয়া হবে না বলে ইঙ্গিত দেয় প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। শেষ পর্যন্ত সোমবার রাতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের বাসভবনে এক বৈঠকে অসমকে রেখেই প্রস্তাবটি পাসের জন্য সিদ্ধান্ত হয়। অসম বিজেপির সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্যসহ দলের সাংসদরাও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী মোদির সভাপতিত্বে মঙ্গলবার ভারতের মন্ত্রিসভা সংবিধান সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন করে। নেহেরু-নুন থেকে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি ॥ ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরে বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর ও কোচবিহারের সীমানা নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় ছিটমহলের উদ্ভব হয়। সমস্যা সমাধানে ১৯৫৮ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুনের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল। যেটা নেহেরু-নুন চুক্তি হিসেবে পরিচিতি পায়। পরবর্তীতে এই চুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এরপর ১৯৭৪ সালে ছিটমহল বিনিময়, অমীমাংসিত সীমান্ত ও অপদখলীয় জমি নিয়ে সমস্যা সমাধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যেটা মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি নামে পরিচিত। তখন এই চুক্তি বাংলাদেশের পার্লামেন্টে অনুমোদিত হলেও ভারতের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়ায় দেশটির পার্লামেন্টে চুক্তিটি অনুমোদন করা হয়নি। ফলে এই চুক্তি বাস্তবায়ন আটকা পড়ে যায়। এরপর কেটে গেছে আরও ৪০ বছর, তবে এই চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে সীমান্ত বিল পাসের বিরুদ্ধে প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিরোধিতা করলেও মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তিনি তাঁর আগের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে সীমান্ত বিলের পক্ষে অবস্থান নেন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত আইনগত স্বীকৃতি পাবে ॥ সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত আইনগতভাবে স্বীকৃতি পাবে। বর্তমানে দুই দেশ সীমান্ত রেখা মেনে নিলেও এর আইনগত স্বীকৃতি নেই। এ ছাড়া আইনের বাস্তবায়নের ফলে দুই দেশে অবস্থিত ছিটমহল বিনিময় এবং অপদখলীয় জমি হস্তান্তর করাও সম্ভব হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মোট ছিটমহলের সংখ্যা ১৬২টি। এর মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতের ছিটমহলের সংখ্যা ১১১। আর ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের ছিটমহল ৫১টি। চুক্তি বাস্তবায়নের পর ভারতের ১১১টি ছিটমহল যার জমির পরিমাণ ১৭ হাজার একর বাংলাদেশের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। অনুরূপভাবে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতে যুক্ত হবে। ৫১টি ছিটমহলে জমির পরিমাণ সাত হাজার একর। এই ছিটমহলগুলোতে প্রায় ৫১ হাজার লোক বাস করে, যারা দুই দেশ থেকে কোন নাগরিক সুবিধা পান না। ছিটমহলগুলো হস্তান্তরের সময় তাদের ইচ্ছার ভিত্তিতে তাদের নাগরিকত্ব নির্ধারিত হবে। সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ যে বাড়তি ১০ হাজার একর জমি পাবে তার জন্য ঢাকাকে কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। দুই চুক্তিতেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত ॥ তিস্তা ও সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই দুই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী দেশটি। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী এমন অভিমত প্রকাশ করেছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী জানিয়েছেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার বড় দু’টি সমস্যা স্থল সীমানা চুক্তি ও তিস্তা চুক্তি। এ বিষয়ে ভারত সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রণব মুখার্জী বলেছেন, বাংলাদেশ এই দু’টি চুক্তির দিকে চেয়ে আছে, আর বিষয়টি ভারতের সরকারেরও জানা। দুই চুক্তি বাস্তবায়নের পাশাপাশি তিনি ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি, জ্বালানি ও বিদ্যুত সহযোগিতা আরও বৃদ্ধির বিষয়ে আশাবাদও প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন ছিটমহলে আনন্দের বন্যা ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল সীমান্ত চুক্তি ভারতের মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের খবরে বিভিন্ন ছিটমহলে আনন্দের বন্যা বইছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার লালমনির হাট থেকে জাহাঙ্গীর আলম শাহীন জানান, সীমান্ত চুক্তি ভারতের মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের খবরে বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে চলছে উৎসব। ছিটমহলবাসী এখন স্বপ্ন দেখছে, এবারে তারা মুক্ত হয়ে যাবে। লালমনিরহাট জেলার ভেতরে থাকা ৩৩টি ছিটমহলের একটি কুলাঘাটের বাঁশ পচাই ছিটমহল। জেলা শহর হতে একটু অদূরে মঙ্গলবার বাঁশ পচাই ছিটমহলে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সমন্বয় কমিটির যুগ্মসম্পাদক দীপ্তমান জানান, ভারতের মন্ত্রিসভায় সীমান্ত বিল অনুমোদনের পর আশা করছি সর্বসম্মতিক্রমে লোকসভায়ও পাস হবে। দুই দেশের ভেতরে থাকা ১৬২টি ছিটমহলের কয়েক হাজার মানুষ বন্দী জীবন হতে মুক্ত হবে। কুড়িগ্রাম থেকে রাজু মুস্তাফিজ জানান, সীমান্ত বিল অনুমোদনের সংবাদ শুনে বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬২টি ছিটমহলের মানুষ আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছে। তারা আশা করছেন এর মাধ্যমে তাদের দীর্ঘদিনের বন্দীদশা ঘুচবে। নাগরিক অধিকার ফিরে পাবার পাশাপাশি উন্নত জীবনের স্বাদ পাবেন তারা। এখন ছিটহলের প্রতিটি বাড়িতে সাজ সাজ রব। তারা দীর্ঘ বন্দী জীবনের পর এখন স্বাধীনতার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। মঙ্গলবার সরেজমিন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহল দাশিয়ার ছড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বাড়ির আঙিনায়, টংঘরে, বাজারে, পথে-ঘাটে মানুষ বিলটি অনুমোদনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। তাদের মধ্যে অনেককে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। ছিটের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, এবার আমরা বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পাব। আমাদের আনন্দ প্রকাশের কোন ভাষা নেই। কৃষক সুরত আলী বলেন, আমরা অতি তাড়াতাড়ি বাংলাদেশের নাগরিক হতে যাচ্ছি। স্কুল ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, এখন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকতে পারব। মিথ্যে পরিচয় দিয়ে স্কুল-কলেজ বা হাসপাতালে যেতে হবে না। বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির নেতারা জানান, বিলটিতে অসম রাজ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। তবে বিলটি পূর্ণাঙ্গরূপে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। তারা আশা করছেন দ্রুততম সময়ে বিলের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ৬৮ বছরে বঞ্চনার অবসান করবে ভারতের সরকার। বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি বাংলাদেশ ইউনিট সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, বিলটি পাসের ব্যাপারে ছিটমহলবাসীর আর কোন সংশয় নেই। তবে কোন জটিলতা সৃষ্টি হলে ছিটমহলবাসীরা আবারও আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ^বাসীর নজর কাড়বে। পঞ্চগড় থেকে এ রহমান মুকুল জানান, ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থল সীমান্ত বিল অনুমোদন হওয়ায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভারতীয় বিভিন্ন ছিটমহলে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ এবং মসজিদে-মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্থল সীমান্ত বিলটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের খবরটি প্রচার হওয়ার পর পরই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলের নাগরিকরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। আবার অনেকে আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়েন। দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় বুকবেঁধে থাকা দু’দেশের ৫১ হাজার অধিবাসীই খুশি। মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরবর্তী ভারত সীমান্ত লাগোয়া গারাতী ছিটমহলে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে ছিটমহলবাসীদের খুশির জোয়ারে ভাসতে দেখা যায়। ছোট শিশু থেকে শুরু করে আবাল-বৃদ্ধ বণিতা সকলেই আনন্দে ভাসছে। তাদের সকলের একটি দাবি, ভারতীয় হলেও জন্মেছি এই মাটিতে, শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছি ছিটমহল সংলগ্ন বাংলাদেশের ধুলোমাটিতে। এ দেশ ছেড়ে ভারতে যেতে চাই না। আমরা বাংলাদেশী হয়ে এ দেশের মাটিতেই মরতে চাই। গারাতী ছিটমহলে বসবাসকারী বৃদ্ধ নুমান আলী (৮৫) বলেন, জীবনের শেষ বেলায় বন্দী জীবন থেকে মুক্ত হতে পারছি এর চেয়ে বেশি আর আনন্দ কি পেতে পারি। তবে, অন্যদের মতো তিনিও বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে যেতে চান না। ওই ছিটমহলের ফয়জুল (৭০) শরিফা খাতুন (৬৫) রহিমা খাতুন (৮০) বলেন, এখানেই বড় হয়েছি, বিয়ে হয়েছে। ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনী হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আত্মীয়-পরিজন রয়েছে। তাদের ছেড়ে কি করে ভারতে যাই আপনারাই বলুন। ছিটমহলের ভেতরে মেঠো পথ ধরে পথ চলতে গিয়ে দেখা হয় স্কুল ছাত্র মিলন (১২) ও স্কুলছাত্রী সুমি আকতার (১৩) এর সঙ্গে। তারাও জানতে পেরেছে যে খুব সত্বরই তারা নাগরিকত্ব ফিরে পাচ্ছে। কথা প্রসঙ্গে সুমি অকপটে বলে ফেলে-প্রকৃত বাবা-মায়ের নাম দিয়ে বাংলাদেশের স্কুলে ভর্তি হওয়া যায় না। তাই মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছে। তার মতো অনেক ছিটমহলে বসবাসকারী ছেলে-মেয়ে মিথ্যা নাম-ঠিকানা দিয়ে বাংলাদেশের স্কুলে ভর্তি হয়েছে। গত কয়েকদিন আগেও নাগরিকত্বের দাবিতে সাইকেল র‌্যালি করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভারতীয় হাইকমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি দেয়া হয়। তাহমিন হক ববি, নীলফামারী থেকে জানান, অতি সত্বরই ছিটমহল বিনিময় হতে যাচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার স্থলসীমান্ত চুক্তি ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদনে উভয় দেশের ছিটমহলে ৬৭ বছরের বন্দী দশার মুক্ত হাওয়ার বাঁশি বেজে উঠেছে । ভারতের মন্ত্রিসভার সদস্যরা মঙ্গলবার সকালে ভূমি হস্তান্তর ও সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিলটির অনুমোদন দিয়েছেন খবরে বাংলাদেশের অভ্যান্তরে নীলফামারীসহ বিভিন্ন ছিটমহলে আনন্দ উৎসবে ফেটে পড়েন। এমন কি ছিটমহলগুলোতে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
×