ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৯৬ শতাংশই ভূমির অধিকার ও প্রকৃত মালিকানা থেকে বঞ্চিত ॥ সেমিনারে অভিমত

ঢাকার ৮৫ শতাংশ ফ্ল্যাট বাড়ির মালিক নারী!

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৫ মে ২০১৫

ঢাকার ৮৫ শতাংশ ফ্ল্যাট বাড়ির মালিক নারী!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের মোট জনসংখ্যার ৫০ ভাগ নারী। অথচ তাদের ৯৬ শতাংশই ভূমির অধিকার ও প্রকৃত মালিকানা থেকে বঞ্চিত। আবার রাজধানী ঢাকার ৮৫ শতাংশ ফ্ল্যাটবাড়ির মালিকানা নারীর (শাশুড়ি) নামে। তবে এই মালিকানাও কেবল কাগজসর্বস্ব। মূলত করফাঁকির উদ্দেশে ফ্ল্যাটবাড়ির দলিলে নারীর নাম ব্যবহার করা হয় মাত্র। সংবিধানের একাধিক অনুচ্ছেদে সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ও ধর্মীয় আইনের অপব্যবহারের কারণে স্বীকৃত ন্যূনতম ভূমির অধিকারটুকুও নারী পাচ্ছে না। বৈষম্যমূলক এই অবস্থা নিরসনে অভিন্ন পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইন প্রয়োজন। সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নারীর ভূমির অধিকার ও বঞ্চনা: প্রেক্ষিত উত্তরাধিকার আইন’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য ও বক্তব্য তুলে ধরেন। বেসরকারী সংস্থা এ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এই সেমিনারের আয়োজন করে। এএলআরডির চেয়ারপার্সন খুশি কবিরের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত। প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাবির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সীমা জামান, সাবেক তথ্য কমিশনার ড. সাদেকা হালিম ও সাংবাদিক আবু সাঈদ খান। গবেষণা প্রবন্ধে আবুল বারকাত দাবি করেন, দেশের মোট ভূমি সম্পত্তিতে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে ৫ শতাংশেরও কম নারীর কার্যকর মালিকানা রয়েছে। ভূমির কার্যকর মালিকানা বলতে আইনগত দলিল থাকা, এর ব্যবহার, বিক্রি এবং ভূমি হতে আহৃত আয়ের ব্যবহার বিষয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে বোঝায়। প্রতিদিন ৯২ ধরনের অর্থপূর্ণ কাজে নারী এককভাবে সম্পৃক্ত। তবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে তার স্বীকৃতি নেই। সরকারী হিসেবে কম দেখালেও দেশের ৮৩ শতাংশ মানুষ (জনসংখ্যা ১৫ কোটি ধরে ১২ কোটি ৪৩ লাখ) এখনও গরিব। এর মধ্যে নারী দুইবার গরিব: নারী হিসেবে এবং গরিব হিসেবে। দারিদ্র্য যে হারে বাড়ছে, তার চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে বৈষম্য। দেশের মাত্র ৪১ লাখ মানুষ ধনী। আর মধ্যবিত্তের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ১৬ লাখ। সংবিধানে বর্ণিত খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার প্রাপ্তির ভিত্তিতে ধনী-গরিবের হিসাব করা হয়েছে। বারকাত বলেন, সংবিধানে নারী-পুরুষ সমঅধিকারের কথা একাধিকবার বলা হলেও ভূমি অধিকার বিষয়ে কোন সমন্বিত আইন নেই। ধর্মীয় আইন অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টন হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কৌশলে নারীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী ভূমিতে নারীর অধিকার পুরুষের অর্ধেক। এ হিসেবে ভূমিতে উত্তরাধিকারসূত্রে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ মুসলিম নারীর কার্যকর মালিকানা থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে এ হার ৫ শতাংশেরও কম। দেশে হিন্দু নারী ভূমি অধিকার থেকে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে মাতৃতান্ত্রিক গারো সম্প্রদায়ের অবস্থা তুলনামূলক ভাল বলেও জানান তিনি। বারকাত জানান, দেশের সাত বিভাগের ১০ জেলার ৪০২ মুসলিম, হিন্দু, চাকমা, গারো ও সাঁওতাল নারী-পুরুষের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়। এতে অংশগ্রহণকারী নারীরা বলেছেন, ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এটা তারা বোঝেন। তাই তারা উত্তরাধিকার আইনের পরিবর্তন চান। অন্যদিকে অংশগ্রহণকারী পুরুষের মত হলো, উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তনের কোন দরকার নেই।
×