ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুজাহিদের মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৫ মে ২০১৫

মুজাহিদের মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কর্তক মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আল বদর কমান্ডার আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপীল মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানি আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপীল বেঞ্চ সোমবার এ দিন নির্ধারণ করেছেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেনÑ- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এখন শুনানি করছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি করেন মুজাহিদের আইনজীবী এসএম শাহজাহান। তাকে সহায়তা করেন এ্যাডভোকেট শিশির মোঃ মনির। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ, দেশত্যাগে বাধ্য করা ও অগ্নিসংযোগের দায়ে সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২, ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। সাত অভিযোগের পাঁচটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর হত্যা-নিযার্তনের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মুজাহিদের মৃত্যুদ- কার্যকর করার আদেশ প্রদান করেন ট্রাইব্যুনাল। সাতটি অভিযোগের মধ্যে দুটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযোগের দায় থেকে মুজাহিদকে খালাস দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাকে ৩নং অভিযোগ ৫ বছর ও ৫নং অভিযোগ যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করেছে। ৬ ও ৭নং অভিযোগে মুজাহিদকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে। ১নং অভিযোগটি ৬নং অভিযোগের সঙ্গে একীভূত করায় ১নং অভিযোগে পৃথক কোন দ- দেয়া হয়নি। ১ নম্বর অভিযোগে ছিল, শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেন হত্যা ও ৬ নম্বর অভিযোগে ছিল সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতে থাকা নেতা হিসেবে গণহত্যা সংঘটিত করা, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদি। প্রথম অভিযোগে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেন হত্যার ঘটনায়ও তার সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি (উর্ধতন নেতৃত্ব) দায় ছিল বলে উল্লেখ করা হয় রায়ে। ৭ নম্বর অভিযোগে ছিল, ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যার ঘটনা। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ সব অভিযোগ প্রসিকিউশন সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রমাণিত ৫ নম্বর অভিযোগে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরানো এমপি হোস্টেলে শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদসহ কয়েকজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার দায়ে মুজাহিদকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া প্রমাণিত ৩ নম্বর অভিযোগে ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট এলাকার (রথখোলা) মৃত রমেশ চন্দ্রনাথের পুত্র রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে আটক ও নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদ-াদেশ পেয়েছেন মুজাহিদ। অন্যদিকে প্রমাণিত না হওয়া ২ নম্বর অভিযোগে ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন থানায় বিভিন্ন গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও গণহত্যার অভিযোগ এবং ৪ নম্বর অভিযোগে কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট এলাকার মোঃ আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ থেকে খালাস পান জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট খালাস চেয়ে সুপ্রীমকোর্টে আপীল করেন মুজাহিদ। তবে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আপীল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ। ট্রাইব্যুনালের পুরো রায়ের বিরুদ্ধে ১১৫টি যুক্তি নিয়ে আপীল করেন মুজাহিদ। ট্রাইব্যুনাল যেসব কারণে সাজা দিয়েছেন, তার আইনগত ও ঘটনাগত ভিত্তি নেই বলেও দাবি করেন তিনি। মূল আপীল ৯৫ পৃষ্ঠার, এর সঙ্গে ৩ হাজার ৮০০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়েছে।
×