ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র কোম্পানি আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৫ মে ২০১৫

পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র কোম্পানি আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নীতিমালা অনুসরণ করে ‘পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র আইন, ২০১৫-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠনের জন্য আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনটির অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের এ কথা জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার অনির্ধারিত বৈঠকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। মন্ত্রিসভার সিনিয়র কয়েকজন সদস্য বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেও বিএনপি এতে কালিমা লেপনের চেষ্টা চালিয়েছে। মূলত নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে তারা নির্বাচন বয়কট করেছে। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। নির্বাচনকে বিতর্কিত করে তারা প্রমাণ করতে চেয়েছিল বিগত ৫ জানুয়ারি তাদের দাবি সঠিক ছিল। কিন্তু তাদের এ ষড়যন্ত্রও দেশবাসী ধরে ফেলেছে। মন্ত্রিসভার এক সদস্য তখন বলেন, সকাল ১০টার দিকে তাবিথ বলেছিল, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। তার একটু পরেই হঠাৎ বিএনপি নির্বাচন বয়কট করলো। নির্বাচন বয়কটের পর চট্টগ্রামে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনজুরুল আলম বিরক্ত হয়ে বলেন, আর রাজনীতি করবো না। বৈঠকে শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনে কাজ চলছে। বর্তমানে এটি ভাল পর্যায়ে চলে এসেছে। এ বিষয়ে রাশিয়া সরকার আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতা দেবে। এজন্য রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি ও ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ প্রকল্প অন্য প্রকল্পের মতো নয় জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি একটি উচ্চ প্রযুক্তিঘন প্রকল্প। অন্য চুক্তির জন্য দু’টি পক্ষ থাকলেও এ চুক্তির জন্য তৃতীয় পক্ষ হলো আইএইএ। পরমাণু সংক্রান্ত কোন চুক্তি স্বাক্ষর করতে গেলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নীতিমালা মেনে চলতে হয়। সেফটি ও সিকউরিটির জন্য আইএইএয়ের গাইডলাইন-গুলো অনুসরণ করতে হবে। সে প্রেক্ষাপটে প্রথমে একটি আইন তৈরি করতে হয়। আইনী কাঠামো ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আইনের আওতায় একটি কোম্পানি গঠিত হবে। ইতোমধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে প্রাক্কলিত ব্যয় পাঁচ হাজার ৮৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার এক হাজার ৮৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা এবং রাশিয়া প্রকল্প সহায়তা দেবে চার হাজার কোটি টাকা। ২০১৩ সালের মার্চ থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়িত হবে প্রকল্পটি। ২০২১ সালের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র চালু হবে। বৈঠকে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার জন্য ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি অব বাংলাদেশ’ গঠনের প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য কোম্পানি গঠন আন্তর্জাতিক প্র্যাকটিস উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারী মালিকানায় কোম্পানি গঠন করতে গেলে মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগে। সাধারণত কোম্পানি গঠনের জন্য বিশেষ বিধানের দরকার হয় না। তবে যেহেতু এটি বিশেষ প্রকল্প সেজন্য একটি সুদৃঢ় আইনী কাঠামো দরকার। আলাদা আইনের মাধ্যমে কোম্পানি গঠনের কথা বলা রয়েছে। আইনে কোম্পানি গঠনের বিধান, পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের কতটুকু কর্তৃত্ব, পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র সরবরাহকারী দেশের সহযোগিতা এবং বাস্তবায়নকারী বাংলাদেশের দু’টি সংগঠন গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ্যাটমিক এনার্জি কমিশন হবে ওনার অর্গানাইজেশন, আর প্রস্তাবিত নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি অব বাংলাদেশ হলো অপারেটিং অর্গানাইজেশন। কোম্পানি গঠন, ভেন্ডার কান্ট্রি, দু’টি সংস্থা চিহ্নিতকরণ, পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন, পরিচালনা ও নিরাপত্তার বিধান উল্লেখ রয়েছে আইনে। এর আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে আইনের খসড়া ও কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব তোলা হয়েছিল বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। অন্য আইনের মতো সরকার বিধি প্রণয়ন করতে পারবে বলে উল্লেখ রয়েছে। প্রবিধি তৈরির ক্ষমতা সংস্থা বা কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে। অন্য কোম্পানির মতো পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড থাকবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব। বোর্ডে পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ এ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের চেয়ারম্যান, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ এক কোটি টাকা এবং একশ’ টাকার শেয়ার থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি প্রকল্প হিসেবে কাজ করবে। প্রকল্প পরিপূর্ণ হলে কোম্পানির কাছে চলে যাবে এবং প্রকল্প পরিচালক কোম্পানির প্রথম ম্যানেজিং ডিরেক্টর হবেন।
×