ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন ভার্সিটির আড়াই শ’ অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে ল্যাপটপ দিলেন জয়

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৪ মে ২০১৫

তিন ভার্সিটির আড়াই শ’ অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে ল্যাপটপ দিলেন জয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘কম্পিউটার বিষয়ে আগ্রহ ছিল কলেজ থেকেই। বিশ্ব¦বিদ্যালয়ে ভর্তির পর বন্ধুদের ল্যাপটপ দেখে আমার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। কিন্তু ল্যাপটপ কিনে দেয়ার সামর্থ্য আমার পরিবারের নেই। আজ ল্যাপটপ পেয়ে আমি ভীষণ খুশি। এখন থেকে ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয় কাজ ঘরে বসেই সারতে পারব, সাইবার ক্যাফেতে যেতে হবে না।’ উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিনা আক্তার। একটু আগেই তানজিনার হাতে বিনামূল্যে ডেল ব্র্যান্ডের একটি ল্যাপটপ, টেলিটকের থ্রিজি মোডেম এবং পেনড্রাইভ তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তানজিনার ল্যাপটপের এ স্বপ্ন পূরণ করেছে সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ। শুধু তানজিনাই নয়, ‘ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান ল্যাপটপ’ প্রকল্পের আওতায় ল্যাপটপ পেয়েছেন দেশের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়াইশ অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থী। পেয়েছেন বিনামূল্যের থ্রিজি মোডেম এবং একটি পেনড্রাইভও। দেশের তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে যাতায়াতের পথ আরও সুগম করতে রবিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ভবন মিলনায়তনে শিক্ষার্থীদের হাতে ল্যাপটপ তুলে দেয়ার এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব¦বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ৫০০টি ল্যাপটপ তুলে দেয়া হবে। রবিবার প্রথম ধাপে তিন বিশ্ব¦বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে ২৫০টি ল্যাপটপ তুলে দেন জয়। শুরুতে ঋণের মাধ্যমে কিস্তি পরিশোধের শর্তে ল্যাপটপ দেয়ার কথা থাকলেও বেসরকারী এক্সিম ব্যাংকের সহায়তায় সরকার তা বিনামূল্যেই দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশের তরুণদের নিয়ে নিজের স্বপ্ন ও আশার কথা তুলে ধরেন আইসিটি বিশেষজ্ঞ জয়। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন আছে, এদেশে আইটি পার্ক, আইটি ওয়ার্ক ফোর্স গড়ে তোলার। মার্ক জাকারবার্গ ১৯ বছর বয়সে ফেসবুক বানিয়েছিলেন। আমার আশা আছে, তোমাদের মধ্য থেকেও কেউ কেউ ভবিষ্যতের ফেসবুক বা গুগল তৈরি করবে। বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে উল্লেখ করে জয় বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই দেশের শিক্ষার্থীদের হাতে ৩৩ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ শুরু করে। আজ থেকে ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে ল্যাপটপ বিতরণও শুরু করল আওয়ামী লীগ সরকার। আর এটা কেবল আরম্ভ। পাঁচশ ল্যাপটপ দিয়ে আমরা কেবল শুরু করছি। সরকারের সমালোচকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জয় বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প যখন হাতে নেয়া হয়, অনেকে বলেছিল এদেশের মানুষ গরিব, তারা কম্পিউটার কিনবে কীভাবে, ইন্টারনেটই কিনবে কীভাবে। তখন আমরা বলেছিলাম, আওয়ামী লীগ সরকার এর ব্যবস্থা করবে। আমরা সেই কথা রাখতে পারছি। দেশের সকল স্কুলে ছাত্রীদের আমরা বিনামূল্যে বই দিয়েছি। আজ আমি শিক্ষার্থীদের হাতে ল্যাপটপ দিয়ে যাচ্ছি। সাড়ে ৩ বছরে সরকার পাঁচ হাজার ‘ডিজিটাল সেন্টার’ তৈরি করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, এখন দেশে এমন কোন ইউনিয়ন নেই যেখানে কম্পিউটার ল্যাব বা ডিজিটাল সেন্টার নেই। আমরা দেশের ১১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়কে ফাইবার অপটিক কেবল দিয়ে সংযুক্ত করতে কাজ করছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফ্রি ওয়াইফাই জোন করার কাজও দ্রুতগতিতে চলছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের টেলিটকের পক্ষ থেকে একটি করে ইন্টারনেট মোডেম ও কম্পিউটার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে একটি করে পেনড্রাইভ দেয়া হয়। এছাড়া প্রকল্পের বাইরে শিক্ষার্থীদের মাঝে আরও দুই হাজার ল্যাপটপ বিনামূল্যে দেয়ার অঙ্গীকার করে এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, বর্তমান প্রকল্পের আওতায় ৫০০ ল্যাপটপের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ জন, বুয়েটের ২০০ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ১০০ জন শিক্ষার্থী এই ল্যাপটপ পাচ্ছেন। দ্বিতীয় ধাপে ২৫০ ল্যাপটপ দ্রুত প্রদান করা হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্যপ্রযুক্তি সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর খালেদা একরাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস, এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ফাইজুর রহমান প্রমুখ। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অবকাঠামো উন্নয়ন। সেক্ষেত্রে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। সারাদেশে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রায় সবগুলো অফিসে ফাইবার অপটিক কেবল সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া সচিবালয় ফ্রি ওয়াইফাইয়ের আওতায় আনা হয়েছে। ড. আতিউর রহমান বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা পেলে শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ কেনার জন্য চার শতাংশ হার সুদে ঋণ বিতরণ করা সম্ভব। ব্যাংকিং খাতের সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সিএসআর’র এক-তৃতীংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার নয়, সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।
×