ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যেসব বেসরকারী ভার্সিটি শর্ত পূরণে ব্যর্থ তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৩ মে ২০১৫

যেসব বেসরকারী ভার্সিটি শর্ত পূরণে ব্যর্থ তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যেসব বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের শর্ত না মেনে যারা শিক্ষার নামে ব্যবসা করছে তাঁদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেছেন, এভাবে তাঁরা আর বেশিদিন চলতে পারবে না। যাঁরা মুনাফার লক্ষ্য নিয়ে চলতে চান, তাঁদের জন্য আমরা সময় বেঁধে দিয়েছি। আইন অনুযায়ী তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে না পারলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। শনিবার দেশের অন্যতম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) ১৮তম সমাবর্তনে চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে দেয়া বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী সরকারের এ কঠোর অবস্থানের কথা জানান। শিক্ষামন্ত্রী নর্থ সাউথের মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে সন্তোষ প্রকাশ করে অন্যান্য বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি উদ্বেগের সঙ্গে তুলে ধরেন। বলেন, নর্থ সাউথ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রসার ও উন্নয়নের মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক আধুনিক সমাজ, সুশৃঙ্খল মানবসম্পদ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে, যা ইতোমধ্যেই সকল মহলের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে। বসুন্ধরার নিজস্ব^ ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে সমাবর্তনে নর্থ সাউথের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্সে দুই হাজার ৩৮ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রী প্রদান করা হয়। এ বছর দশ মেধাবী শিক্ষার্থীকে দেয়া হয় চ্যান্সেলর ও ভাইস চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক। যেখানে এবার ছাত্রীদের সাফল্য নজর কেড়েছে সকলের। স্বর্ণপদক প্রাপ্ত ১০ মেধাবীর ৯ জনই ছাত্রী হওয়ায় ঘটনাকে দেশের নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রার চিত্র হিসেবেও অভিহিত করেন অনুষ্ঠানে আসা শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশী-বিদেশী অতিথিরা। কৃতী শিক্ষার্থী হিসেবে আচার্যের স্বর্ণপদকপ্রাপ্তদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্নাতকে ইশমাম নাওয়াার, আহনাফ আহমেদ ও কারামা কবির মাইশা এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রিয়াাঙ্কা মেহরিন মুসা, তনিমা আহমেদ ও খোজাইমা ফতেহ আলী জিয়াউদ্দিন। নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশাল এ আয়োজন দেশের যে কোন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই একটি চ্যালেঞ্জ। সমাবর্তনের অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারী টেলিভিশন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথওয়েস্টার্ন ওকলাহামা ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক র‌্যান্ডি বাটলার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বেনজীর আহমেদ ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিন ইউ সরকার। ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যান্য সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক এবং ডিগ্রী অর্জনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা। আরও ছিলেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যবৃন্দ। শিক্ষামন্ত্রী তঁর বক্তব্যে নর্থ সাউথের অগ্রযাত্রায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, নর্থ সাউথ স্বল্প সময়ে অনকে অগ্রসর হয়েছে। শুরু থেকেই নিজস্ব জমিতে ক্যাম্পাস স্থানান্তর করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাই আমি আশা করি নর্থ সাউথের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পরিচালনায় যাঁরা আছেন তাঁরা আরও অনেকদূর অগ্রসর হবেন। নর্থ সাউথ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। তাই কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে আপনাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, আমরা সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না। তারা সবাই আমাদের সন্তান ও জাতির ভবিষ্যত। শিক্ষার্থীদের জন্যই আমরা মানসম্মত শিক্ষা ও সব সুযোগ নিশ্চিত করতে চাই। তবে কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এখনও তাদের ন্যূনতম শর্তপূরণ করতে পারেনি। এভাবে তারা বেশিদিন চলতে পারবে না। সরকার আইনী ব্যবস্থা নেবে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সংখ্যা অনেক বেশি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি। আমাদের কাজ ও সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে এই সম্ভাবনাকে আরও অগ্রসর করা। শিক্ষাক্ষেত্রে মুনাফার জন্য নয়, শিক্ষায় অবদান রাখার জন্য আমরা সব স্তরে আরও বেসরকারী বিনিয়োগ চাই। আজ আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি করা। এজন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষক। বিষয়টি আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। ডিগ্রীপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ হলো, কিন্তু আরেকটি অধ্যায় কর্মজীবন শুরু হতে যাচ্ছে।
×