ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১ মে ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

দীর্ঘদিনের বন্ধ্যত্ব শেষে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। সঙ্গত কারণেই ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। পরিচিত, মুখচেনা, এমনকি অপরিচিত মানুষটিকে বুকে জড়িয়ে ধরা। ভোট চাওয়া। দোয়া চাওয়া। অলিগলিতে সেøাগান। জনপ্রিয় গানের সুরে প্রার্থীর পক্ষে প্রচার। সব মিলিয়ে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছিল রাজধানী ঢাকা। বেশ কিছুদিন এভাবে চলার পর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হলো নির্বাচন। ঢাকার দুই অংশের মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচন করতে ভোট দিয়েছেন নগরবাসী। ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আনিসুল হক ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত তাবিথ আউয়াল পেয়েছেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাঈদ খোকন ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত মির্জা আব্বাস পেয়েছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১ ভোট। তবে একটু এলিট ক্লাসের যাঁরা, ভোট দিতে তেমন যাননি। রাজনীতির প্রতি বিতশ্রদ্ধরাও নির্বাচন এড়িয়ে গেছেন। অলস অংশটি ঘরে বসে কাটিয়েছেন। আর তাই ঢাকা উত্তরে ভোট পড়েছে শতকরা ৩৭.২৯ ভাগ। ঢাকা দক্ষিণে ভোট পড়ে ৪৮.৫৭ ভাগ। অবশ্য এর প্রধান কারণÑ বিএনপি সমর্থিত মেয়রদের সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা। ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরই কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন মির্জা আব্বাস ও তাবিথ আউয়াল। খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই আর ভোট দিতে যাননি। বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা যায়। কট্টর সমর্থকরা ভোট দিয়েছেন এরপরও। তবে বড় অংশটি আগ্রহ দেখায়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থক ভোটাররাও এড়িয়ে গেছেন ভোট। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে কিছু অনিয়মের ঘটনাও ঘটেছে। এখন অলিগলিতে চলছে সেই নিয়ম অনিয়মের আলোচনা। মিরপুর ১ নম্বরের চা-দোকানি আব্দুস সুবহান যুক্তি তুলে ধরে বললেন, ‘এই কয়ডা দিন আগে ক্যামনে মানুষরে পুড়াইছে খালেদা, মানুষ এইডা ভুইলা যায় নাই। তার তো আগে বিচার হওয়া দরকার। ভোট তো পরে। নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়রদের পরাজয়ের এটি বড় কারণ বলে মনে করেন এই প্রবীণ। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থকদের অভিযোগÑ তাঁদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আদর্শ ঢাকা আন্দোলন নামে মাঠে থাকা বিএনপি নেতারা তো নির্বাচন বাতিল ও সিইসির পদত্যাগ দাবি করেছেন। তবে এ আলোচনায় জাতিসংঘের অংশগ্রহণ সবাইকে ‘তাজ্জব’ বানিয়ে দিয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদ ফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলা হয়, মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে অবগত। অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের আহ্বানও জানানো হয় জাতিসংঘের পক্ষ থেকে। কোন দেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘ কথা বলতে পারেÑ এটি কারও কল্পনায়ও ছিল না। আর তাই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক কৌতুক হচ্ছে বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায়। গ্রীষ্ম এখন। বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই ঢাকায় প্রখর রোদ। সারাদিন মাথার উপর তাপ বিকিরণ করছে সূর্য। ফলে গরম বাড়ছে। বৈশাখের আরেক বৈশিষ্ট্য ঝড়-বৃষ্টি। সেটিরও দেখা মিলছে যখন তখন। গত সপ্তাহের প্রায় পুরোটাই ছিল শুষ্ক। বৃহস্পতিবার দুপুরে হলো এক পশলা বৃষ্টি। কাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়া নগরবাসীকে হঠাৎ বৃষ্টিতে থামতে হয়েছে। কাকভেজা হতে হয়েছে। তবে শুধু বৃষ্টি নয়, এদিন রোদ আর বৃষ্টি একসঙ্গে মাখামাখি করেছিল। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের নিচতলায় দৌড়ে আশ্রয় নেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিরিন বললেন, এ বৃষ্টি ঠিক বৃষ্টি নয়। বর্ষা ঋতু আসছে। সেই বার্তা দিচ্ছে প্রকৃতি। ঢাকার স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েট। দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখে। অথচ এখানেই চর্চা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের। হিযবুত তাহরীরসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের কর্মীও আটক করা হয়েছে বুয়েটের হল থেকে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এরা অনেকটা মিশে থাকে। ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের একটি অংশ একই অভিযোগে অভিযুক্ত। বিভিন্ন সময়ে সেটি প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ সামনে আসেন জাহাঙ্গীর আলম। জামায়াতি এই শিক্ষক অনেক দিন ধরে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার চালাচ্ছিলেন। অতি সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হলে বিশ্রী ভাষায় সরকার ও আদালতকে আক্রমণ করেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে একটি পোস্ট দেন তিনি। জাহাঙ্গীরের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ্র জ্যোতি টিকাদার এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু সাঈদ কনক। এই প্রতিবাদ মেনে নিতে পারেনি বিএনপি-জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বুয়েট প্রশাসন। দুই তরুণের ভবিষ্যত ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছেন যেন তারা। সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে বুয়েট থেকে প্রতিবাদী ছাত্রদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এরপর থেকে চলছে প্রতিবাদ। ফুঁসে উঠেছে বুয়েট। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও শুভ্র-কনকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং জাহাঙ্গীর আলমের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রলীগ। যুদ্ধাপরাধীদের দোসর ও জামায়াতি শিক্ষককে বুয়েটের লজ্জা মন্তব্য করে তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করা হয় সমাবেশ থেকে। দাবি মানা না হলে ৩ মে থেকে কঠোর কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন ছাত্রনেতারা।
×