ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রধানমন্ত্রী

ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ করুন

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১ মে ২০১৫

ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশী নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রেক্ষাপটে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ ও বিল্ডিং কোড সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হিসেবে আমি আপনাদের ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ এবং কঠোরভাবে বিল্ডিং কোড মেনে চলার বিষয়ে যথোপযুক্ত তদারকির আহ্বান জানাই।’ খবর বাসসর। শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো খুবই প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ। সম্প্রতি নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হয়েছে। এই ভূমিকম্পে বাংলাদেশও কেঁপে উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার এখানে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে টেকসই উন্নয়নের জন্য ‘টেকনিক্যাল এ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন এ্যান্ড ট্রেনিং (টিভিইটি)’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান। ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) এবং কলম্বো প্লান স্টাফ কলেজ (সিপিএসসি), ম্যানিলা যৌথভাবে তিনদিনের এ সম্মেলনের আয়োজন করছে। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সম্মেলনের স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান আইডিইবির সভাপতি একেএম এ হামিদ ও কো-চেয়ারম্যান ছিলেন সিপিএসসির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ নাইন ইয়াকুব এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য-সচিব আইডিইবির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুর রহমান। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রতিক আন্দোলনে নৃশংসতার শিকার ও নেপালের ভূমিকম্পে নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ভূমিকম্প কবলিত মানুষের সহায়তায় আরও ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নেপালে কিছু ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছেÑ যা পর্যাপ্ত নয়। তাদের জন্য আরও ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে হবে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা যাতে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে নেপালে ত্রাণসামগ্রী পরিবহন করতে পারে সেজন্য ইতোমধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানন্দর, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর, সিলেট বিমানবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে নেপালে ত্রাণসামগ্রী পরিবহনে সহায়তা করতে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় একটি উন্নত ও প্রগতিশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য মাঠপর্যায়ে নির্মাণ কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা মাঠপর্যায়ে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে তদারকিতে নিয়োজিত রয়েছেন। প্রায় ৮৫ শতাংশ উন্নয়ন কর্মকা- আপনাদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। এসব কাজের গুণগত মান বজায় রাখা এবং রাষ্ট্রের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নির্ভর করে আপনাদের দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততার ওপর।’ তিনি বলেন, সঠিক মান নিয়ন্ত্রণে কোনভাবেই আপোস করা যাবে না। উন্নয়ন কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হলে তা কেবল জাতীয় ক্ষতি নয়Ñ সে সঙ্গে মানবিক বিপর্যয়ও ডেকে আনতে পারে। আসুন, আমরা সবাই মিলে কাজ করে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরমুক্ত জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি। টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশের সম্পদের যথাযথ ব্যবহার প্রয়োজনÑ এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ছোট এ দেশে প্রায় ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হয়। তিনি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট বা স্থাপনা নির্মাণের ফলে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে। এজন্য এখনই শহর নগরের পাশাপাশি গ্রামগুলোকেও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে জরুরী পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশের জনশক্তিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে মানবসম্পদে পরিণত করতে সরকারী উদ্যোগের সহায়তায় বেসরকারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, দক্ষ মানবসম্পদের চেয়ে কোন সম্পদই বড় নয়। আমরা এজন্য জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করতে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক কর্মসূচী নিয়েছি। তবে শুধু সরকারী উদ্যোগে এ কাজ করা সম্ভব নয়। এজন্য এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’ দেশের সম্পদের যথাযথ ও সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে দারিদ্র্য হ্রাস, মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করাই তার সরকারের লক্ষ্য। শেখ হাসিনা বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়নের ফলে দেশে দেশে অভাবনীয় আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবধান হ্রাসের সুবর্ণ সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে।
×