ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোবাইলে প্রতিদিন লেনদেন ৪০৮ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

মোবাইলে প্রতিদিন লেনদেন ৪০৮ কোটি টাকা

রহিম শেখ ॥ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিনই গ্রাহক বাড়ছে। বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে বা অতিদ্রুত শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুযোগ তৈরি হওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিং দেশের ব্যাংকিং সেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ২০১৫ সালের মার্চ মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকসংখ্যা ২ কোটি ৫২ লাখ ছাড়িয়েছে। গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে ৪০৮ কোটি টাকা। জানা গেছে, কেবল এক স্থান থেকে টাকা আরেক স্থানে পাঠানোই নয়, দেশের অর্থনীতিতেও গতি সঞ্চার করেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এই সেবা। যোগ হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান। এ ছাড়া এই সেবার আওতা ও সুবিধা বেড়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং টাকা আদান-প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং অনেক নতুন নতুন সেবা যুক্ত হয়েছে। প্রাত্যহিক লেনদেন ছাড়াও বিদ্যুত, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিটেন্স বিতরণ, এটিএম ইত্যাদি সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে, যা গত বছর কয়েক আগেও এটা ছিল অকল্পনীয়। অথচ সময় যত গড়াচ্ছে, গতানুগতিক ধারার ব্যাংকিং থেকে বেরিয়ে এখন মোবাইল ব্যাংকিং দেশব্যাপী যে কোন সময়, যে কোন স্থানে আর্থিক সেবার নিশ্চয়তা মিলছে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতেও সাহায্য করছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য এ ব্যাংকিং সেবা চালু করা হলেও জনপ্রিয় হওয়ায় এখন অনেকেই এটি ব্যবহার করছেন। এ কারণে নতুন গ্রাহক যুক্ত হচ্ছেন ও লেনদেন বাড়ছে। তবে মোবাইল ব্যাংকিং যাতে খারাপ কাজের অর্থায়নের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত না হয় সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নজর রাখছে। সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর থেকে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহক। ২০১৩ সালের নবেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকসংখ্যা ১ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করে। গত বছরের মার্চে তা দেড় কোটি ছাড়িয়ে যায়। আর গত সেপ্টেম্বরে ২ কোটি ছাড়ানোর পর ডিসেম্বর মাস শেষে হয় ২ কোটি ৫১ লাখ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, গত মার্চ শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত মোট গ্রাহক হচ্ছে ২ কোটি ৫২ লাখ ৫২ হাজার। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে মোট গ্রাহক ছিল ২ কোটি ৫১ লাখ ৮৬ হাজার। এর মধ্যে সচল আছে ১ কোটি ৮ লাখ ১৪ হাজার। উল্লেখ্য, কোনো হিসাব থেকে টানা তিন মাস লেনদেন না হলে তা নিষ্ক্রিয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই বিবেচনায় মার্চ শেষে মোট হিসাবের অর্ধেকের বেশি বা ১ কোটি ৪৪ লাখ হিসাব নিষ্ক্রিয় রয়েছে। আর মার্চ শেষে সারাদেশে মোট এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৪৮৫। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, মার্চ মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোট ৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকার লেনদেনের বিপরীতে ১২ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা উত্তোলন ও জমা হয়েছে। এতে প্রতিদিন লেনদেনের পরিমাণ ৪০৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ৩৬৫ কোটি ২৮ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্চ মাসে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। গ্রাহক নিজের হিসেবে জমা করেছেন ৫ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। আর উত্তোলন করেছেন ৪ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যের হিসাবে পাঠিয়েছেন ২ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে বেতন পরিশোধ হয়েছে ৭৪ কোটি টাকা। আর সেবা-বিল পরিশোধ হয়েছে ১৩২ কোটি এবং অন্যান্য ১৬৭ কোটি টাকা।
×