ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাক্ষীদের হত্যার হুমকি থানায় অভিযোগ পুলিশ নীরব

হবিগঞ্জের আলোচিত যুদ্ধাপরাধী লিয়াকত পালিয়ে গেছে!

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

হবিগঞ্জের আলোচিত যুদ্ধাপরাধী লিয়াকত পালিয়ে গেছে!

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, হবিগঞ্জ থেকে ॥ ’৭১ সালে হবিগঞ্জের কৃষ্ণপুরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১২৭ জন এবং বি-বাড়ীয়ার ফান্ডাউকে নিরীহ নারী-পুরুষকে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের দায়ে অভিযুক্ত হোতা রাজাকার বাহিনীর প্রধান আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা ও মুড়াকড়ি ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী ভারতে পালিয়ে গেছে এমন খবর হবিগঞ্জের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনার ঝড়। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে তারই অনুগত মুড়াকড়ি ও কৃষ্ণপুর এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই রাজাকারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার স্বাক্ষীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ প্রাণে হত্যার হুমকি দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে জনৈক প্রভাত রায়সহ অন্তত ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে এ নিয়ে চলছে সোমবার জেলার লাখাই থানায় একটি জিডি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থা কর্তৃক রাজাকার লিয়াকত বাহিনীর বিরুদ্ধে ’৭১-এর মানবতাবিরোধী অপকর্ম নিয়ে অনুসন্ধান চালানোর সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যতম সাক্ষী কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা নৃপেন কৃষ্ণ রায়। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন, একই গ্রামের বাসিন্দা রূপক রায়, রাজিব, সেবক রায়, বাপ্পি, সুশীল রায়, হরি রায়, জুয়েল, সনদ রায় ও শরবিন্দু রায়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিগত ২০১০ সালে ওই রাজাকার কমান্ডারের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে জনৈক হরিদাস রায় মামলা করলে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন। আর এই মামলায় অন্যদের সঙ্গে নৃপেন কৃষ্ণ রায়ও একজন সাক্ষী। ফলে লিয়াকতের বিরুদ্ধে সাক্ষী অমল কৃষ্ণ রায় ও নৃপেন কৃষ্ণ রায় দেবে এমনটি বুঝতে পেরেই যুদ্ধাপরাধী গংদেও যোগসাজশে প্রভাত রায় ও তার দলবল সাক্ষী না দিতে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ হত্যার হুমকি দিতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে গেল ২৭ মার্চ সাক্ষীদের নিকট ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, অমল রায়ের ভাই কলকাতা নিবাসী কল্যাণ রায়ের কৃষ্ণপুরস্থ বসতবাড়ি দখল ও আগুন ধরিয়ে দেয় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। পরবর্তীতে এই ঘটনায় মামলা হলে রবিবার আদালত থেকে জামিন নিয়ে একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় ওই রাজাকার লিয়াকতের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত গণহত্যা মামলায় সাক্ষী না দিতে নৃপেন রায়কে হত্যার হুমকি দেয় অভিযুক্ত আসামিরা। এছাড়া নৃপেন রায়ের বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ অব্যাহত রাখাসহ পুরো পরিবারকে দেশ ছাড়া করারও হুমকি দেয় প্রভাত ও তার সহযোগীরা। এছাড়া একই গ্রামের বাসিন্দা ও মামলার সাক্ষী সনদ ও শরবিন্দু রায়ের বাড়িতেও নানা উৎপাত চালানোর অভিযোগ আনা হয়। ফলে সংশ্লিষ্ট মামলার সকল সাক্ষীদের প্রাণরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের কাছে দাবি জানিয়েছেন অত্যাচারের শিকার লোকজন। অথচ এখন পর্যন্ত পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে জানা গেছে। তবে পুলিশ এখনও এই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা তো দূরের কথা ভীতসন্ত্রস্ত সাক্ষীদের রক্ষায় নেয়নি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। সূত্র জানায়, ওই মামলার তদন্ত কার্যক্রম চালাতে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান আইজিপি আব্দুল হান্নান খান পিপিএম এর নেতৃত্বে গেল ২৩ এপ্রিল হবিগঞ্জে আসে ৪ সদস্যের একটি টিম। ২৪ এপ্রিল এই মামলার কার্যক্রম ও ’৭১-এর মানবতা বিরোধী অপরাধ সম্পর্কিত নানা বিষয়াদি নিয়ে জেলার লাখাই উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় আইজিপি আব্দুল হান্নান ঘোষণা দেন, ওই মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে ’৭১-এর অপকর্ম সম্পর্কে সত্যতা পেলে বিচারের সম্মুখীন করা হবে। পরবর্তীতে একই দিন দুপুরে লিয়াকত বাহিনী কর্তৃক অপকর্মের সন্ধানে হবিগঞ্জের কৃষ্ণপুর ও বি-বাড়ীয়া জেলাধীন ফান্ডাউক এলাকায় ব্যাপক অনুসন্ধান চালান তদন্ত সংস্থার এই টিম। সেই সঙ্গে নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন লিয়াকত বাহিনীর ’৭১ সাল ও তার পক্ষে জনৈক প্রভাত রায়ের বর্তমান অত্যাচারের বর্ণনা শুনেন এবং সাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ, ভিডিও ফুটেজ ও স্ক্যাচ ম্যাপ গ্রহণসহ বধ্যভূমিসহ তৎসংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেন তদন্ত টিম। সূত্র জানায়, এই তদন্ত কাজের গুরুত্ব বুঝেই নাকি গ্রেফতার আতঙ্কে একই দিন বিকেলে মুড়াকড়ির তার বাড়ি থেকে অত্যন্ত গোপনে লিয়াকত আলী ভারতের উদ্দেশে সটকে পড়েন।
×