ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকে নিয়ে সতর্ক মিসবাহ

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৮ এপ্রিল ২০১৫

বাংলাদেশকে নিয়ে সতর্ক মিসবাহ

স্পোর্টস রিপোর্টার, খুলনা থেকে ॥ সংবাদ সম্মেলনে যখন কথা বলছেন, মুখে একটুও হাসি নেই পাকিস্তানের টেস্ট দলের অধিনায়ক মিসবাহ উল হকের। হয় বাংলাদেশ টানা জিততে থাকায় হাসি উধাও হয়ে গেছে। নয়ত পাকিস্তান মিডিয়ার মাধ্যমে হাস্যোজ্জ্বল মিসবাহকে দেখলে দেশের জনগণ চটে যেতে পারেন, সমালোচনা আরও তীব্র হতে পারে; তাই হাসছেন না। আরেকটা বিষয়ও হতে পারে। নাকি টেস্ট হারের ভয়ও পাচ্ছেন মিসবাহ? এমন ভাবনার উদয় হওয়ার আগেই মিসবাহ নিজেই বিষয়টি বুঝিয়ে দিলেন। বলে দিলেন, ‘বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা সতর্ক।’ মিসবাহর এ কথাতেই বোঝা যাচ্ছে, টেস্টেও হারের শঙ্কা আঁকড়ে ধরেছে দলটিকে। দলের ক্রিকেটারদের। মিসবাহবাহিনী যত বেশি ভয় পাবে, শঙ্কায় ভুগবে; ততই বাংলাদেশের জন্যই ভাল। ওয়ানডে সিরিজে যেমনটি হয়েছে, সাকিবের ‘বাংলাদেশ ফেবারিট’ তকমা এমন কাজে লেগেছে টানা হারই হচ্ছে পাকিস্তানের। তবে বাংলাদেশকেও যেন একটু সতর্ক করতে চাইলেন মিসবাহ। বললেন, ‘আমাদের টেস্ট সাইডটি অনেক অভিজ্ঞ। এমনকি পারফর্মও করছে। দীর্ঘদিন ধরেই সেই পারফর্ম ধরেও রেখেছে। টেস্ট ভিন্নরকম খেলা। যে ক্রিকেটাররা দলে আছে তারা টেস্টে অনেক ভাল। প্রত্যেকেই সেরা ফর্মেও আছে। কন্ডিশনও আমাদের অনুকূলেই আছে। আবুধাবি এবং দুবাইয়ের মতই কন্ডিশন। আশা করছি এ ফরমেটে ফর্মের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যাবে।’ মিসবাহকে প্রশ্ন করা হলো, এখন সিরিজের রেজাল্ট ৪-০। এটা কী কোন চাপ তৈরি করছে? মিসবাহ বললেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবসময়ই চাপ থাকে। যখন প্রতিপক্ষ ভাল খেলতে থাকে, সেরা সময়ে থাকে তখন চাপ থাকবেই। আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে সতর্ক। সঙ্গে শ্রদ্ধাও আছে। তাদের হোম কন্ডিশনে খেলা। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপ থেকেও আত্মবিশ্বাস নিয়েই খেলছে।’ সঙ্গে বললেন, ‘কিন্তু একই সময়ে আমরাও টেস্টে অনেক ভাল দল। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলেছি। এই শক্তিই এবার বজায় রাখতে চাই।’ বাংলাদেশ দলে এখন একাধিক ম্যাচ উইনার আছেন। ব্যাটিংয়ে তামিম, মুশফিক, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, সাকিব। সঙ্গে বোলিংয়ে সাকিব, রুবেলরা আছেন। ম্যাচের গতি এ ক্রিকেটাররা পরিবর্তন করে দিতে পারেন। নিজ দেশের দিকে খেলা নিতে পারেন। মিসবাহ অবশ্য নিজেদের নিয়েই ভাবছেন। বলেছেন, ‘আমরা নিজেদের নিয়েই ভাবছি। নিজেদের নিয়েই ফোকাস করছি। আমাদের যে শক্তি, তাতেই মনোযোগ দিচ্ছি। যে সাধারণ জিনিসগুলো করে সাফল্য মিলেছে, সেই বেসিকগুলোই বজায় রাখতে চাচ্ছি। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে দেয়া। আমাদের সেরাটা খেলতে এর বিকল্পও নেই।’ বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরানোর আগে মিসবাহকে তো নিজেদের নিয়েই বেশি ভাবতে হচ্ছে। ব্যাটিংয়ে না হয় দুর্দান্ত খেলতে থাকা ইউনুস খান, মোহাম্মদ হাফিজের সঙ্গে নিজেও আছেন। দলের হাল ধরে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু বল হাতে? ওয়াহাব রিয়াজদের মতো পেসাররা খুলনা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে কতটা কী করতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। এ মাঠে যে স্পিনারদের দাপটই দেখা যায়। সেই হিসেবে আছেন সাঈদ আজমল। কিন্তু এ স্পিনার বোলিং এ্যাকশন শুধরে আসার পরত নৈপুণ্য দেখাতেই ভুলে গেছেন। তাই ব্যাটিংয়ে যতটাই শক্তিশালী হোক পাকিস্তান, বোলিংয়ে কিন্তু সেই শক্তি নেই। তবে আজমলকে নিয়ে ভাল কিছুই ভাবতে চান মিসবাহ। বলেছেন, ‘সবাই আজমল সম্পর্কে জানে। অনেকদিন পর সে খেলেছে। কিছুদিন সময় লাগবে।’ পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮ টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। সব হারে। এর মধ্যে মিসবাহ খেলেন ৩ টেস্ট। খুব আহামরি কোন নৈপুণ্য নেই মিসবাহর। রান করেছেন ৩৬.৩৩ গড়ে ১০৯। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১১ সালে যে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ খেলে পাকিস্তান, সেই ২ টেস্টে নেতৃত্ব দেন মিসবাহ। জয়ও ধরা দেয়। তবে এবার প্রথমবারের মতো খুলনায় খেলবে পাকিস্তান। খুলনার উইকেট সম্পর্কে এর মধ্যে ধারণাও হয়ে গেছে। এ উইকেটে যে পেসারদের জন্য কিছুই নেই, তা মিসবাহই বুঝিয়ে দিয়েছেন। এক প্রশ্ন ছিল, ৩ পেসার খেলানোর সম্ভাবনা আছে? মিসবাহ উল্টো যেন প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘এ উইকেটে ৩ পেসার খেলানো সম্ভব।’ তাতেই বোঝা যাচ্ছে, পাকিস্তানও স্পিন নির্ভর দল নিয়েই নামবে। সেই দলে থাকবেন আজমলও। আর সেই আজমল এখন নখদন্তহীন হয়ে পড়েছেন। এখানেই বাংলাদেশ কিছুটা এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু এই এগিয়ে যাওয়া নিয়েই নয়, বাংলাদেশ যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলছে, তাতে মিসবাহ বাংলাদেশকে নিয়ে সতর্ক হয়ে পড়েছেন।
×