ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সন্ত্রাসবিহীন সিটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে আজ

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৮ এপ্রিল ২০১৫

সন্ত্রাসবিহীন সিটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে আজ

গাফফার খান চৌধুরী ॥ আজই প্রথমবারের মতো চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসবিহীন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রার্থীদের তরফ থেকেও প্রকাশ্যে বা নীরব চাঁদাবাজিরও অভিযোগ ওঠেনি। পুলিশ ও র‌্যাবের কাছে কোন চাঁদাবাজির অভিযোগ জমা পড়েনি। পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দু’-চারটি হাঙ্গামার অভিযোগ জমা পড়েছে। নির্বাচনপরবর্তীর পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে সারাদেশে যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযান চালানো হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের কঠোর তৎপরতা আর সারাদেশে চলমান যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিবিহীন ভোট হতে যাচ্ছে। যে কোন নির্বাচনে চাঁদাবাজির অভিযোগ বহু পুরনো। এমনকি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কোন কোন সময় চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার একাধিক নজির রয়েছে। নির্বাচন এলেই সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দেশে অবৈধ দেশী-বিদেশী অস্ত্রের মজুদ বাড়তে থাকে। সন্ত্রাসীরা দেশে-বিদেশে অবস্থান করে প্রার্থীদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলেই প্রার্থীকে বা প্রার্থীর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনদের হুমকি-ধমকি দেয়া, বাড়িতে গিয়ে ভাংচুর করা, প্রকাশ্যে বা রাতের আঁধারে গুলি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা, গুলি করে বা কুপিয়ে পঙ্গু করা, কোন কোন ক্ষেত্রে প্রার্থী বা তার পরিবারের কাউকে হত্যা, বাড়িঘরে আগুন দেয়া ও ভাংচুরসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকা- হয়ে থাকে। বিভিন্ন সরকারের আমলে এর ভূরি ভূরি নজির রয়েছে। বিশেষ করে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে যে কোন নির্বাচনে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, কালো টাকার ছড়াছড়ি, খুন, রাহাজানি, লুটপাটসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- হওয়ার বিস্তর ঘটনা ঘটেছে। এবারই প্রথম এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। ঢাকায় খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে তিন দফায় হামলার ঘটনায় পরস্পরকে দোষারোপ করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তরফ থেকে পাল্টাপাল্টি চারটি মামলা দায়ের ছাড়া বড় কোন অভিযোগ ওঠেনি। এ ছাড়া ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী মাহী বি. চৌধুরীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার জন্য অবশ্য মাহী পরোক্ষভাবে জামায়াত-শিবিরকে দোষারোপ করেছেন। এ ছাড়া ঢাকায় নির্বাচনকেন্দ্রিক বড় ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনাই ঘটেনি। চট্টগ্রামেও নির্বাচনকেন্দ্রিক বড় কোন অভিযোগ নেই। এদিকে নির্বাচনে অবৈধ টাকার লেনদেনের ওপর নজর রাখছে গোয়েন্দারা। হাতে হাতে টাকা লেনদেনের চেয়ে বিকাশে লেনদেনে সুবিধা। বিকাশের মাধ্যমেও যাতে অবৈধ টাকা লেনদেন না হয় এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তিন সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন সামনে রেখে সোমবার রাত বারোটা থেকে মঙ্গলবার রাত বারোটা পর্যন্ত মোবাইল ফোনে এক হাজার টাকার বেশি রিচার্জ বা কোন ধরনের আর্থিক লেনদেন না করার নির্দেশ দিয়েছে। সারাদেশেই এমন নিয়ম জারি থাকবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক এএফএম আসাদুজ্জামান জানান। এবারই প্রথম চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও কালো টাকাবিহীন ভোট হতে যাচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আব্দুল জলিল ম-লের তরফ থেকেও বিভিন্ন সময় জানানো হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও কঠোর থাকবে। যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযান চলমান থাকবে। পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে অভিযান শিথিল করা হতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি নিরাপত্তাজনিত কারণে সমাবেশ করার অনুমতি না পেয়ে সারাদেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি। অবরোধের সঙ্গে চলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় খ- খ- হরতাল। অবরোধ আর হরতালের আড়ালে সারাদেশে চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হয়। বেশিরভাগ হামলা হয় জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত জেলাগুলোতে। এজন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং চোরাগোপ্তা হামলা বন্ধ করতে সারাদেশে যৌথবাহিনী বিশেষ অভিযান শুরু করে। অভিযানে নাশকতার সঙ্গে জড়িত, নাশকতায় মদদ, অর্থ সহায়তাসহ নানাভাবে সহায়তাকারী বিএনপি-জামায়াত-শিবির-জঙ্গী-পেশাদার সন্ত্রাসীসহ প্রায় ১৫ হাজার জন গ্রেফতার হয়। দেশে সাঁড়াশি অভিযান আর সীমান্তে কড়া নিরাপত্তার কারণে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীরা আর দেশে ঢুকতে পারেনি। তাদের সহযোগীরাও গা-ঢাকা দেয়। অনেক সন্ত্রাসী আত্মগোপনে চলে যায়। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের আমদানি ও সরবরাহ কমে যায়। সন্ত্রাসীরা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলোতে বিশেষ অভিযান চলমান আছে। চলমান অভিযানের কারণে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পলাতক সন্ত্রাসীরা আর দেশে ঢুকতে পারেনি। আশ্রয়ও নিতে পারেনি। আর অভিযানের কারণে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে আগ্নেয়াস্ত্রও পাচার করতে পারেনি। ফলে দেশের ভেতরে থাকা সন্ত্রাসীরা নতুন করে কোন আগ্নেয়াস্ত্রের মজুদ গড়তে পারেনি। যে কারণে এবার সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিহীন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন পরবর্তী সময়েও যৌথবাহিনীর অভিযান চলবে।
×