ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত

খালেদা-তারেকের কথা না শোনায় হামলার শিকার মাহী

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৮ এপ্রিল ২০১৫

খালেদা-তারেকের কথা না শোনায় হামলার শিকার মাহী

শংকর কুমার দে ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিকল্পধারার মেয়র পদপ্রার্থী মাহী বি চৌধুরী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে লাভবান (বেনিফিশিয়ারি) হতো কারা? আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি? নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ানোর কারণেই যে তার ওপর হামলা হয়েছে তা পরিষ্কার। আর কে লাভবান হতো তা এতই সহজ সরল হিসাব-নিকাশ যে তা সহজেই বোঝা যায়। নির্বাচনের একদিন আগে তার ও তার স্ত্রীর ওপর হামলা করে গুরুতর আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। তার ওপর হামলা করে নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ানোর জন্য প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে বলে মনে করেন তদন্তকারীরা। মাহী বি চৌধুরীর ওপর হামলার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, মাহী বি চৌধুরী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে লাভ হবে বিএনপির। ক্ষতি হবে আওয়ামী লীগের। কারণ ভোটের হিসাব-নিকাশ। মাহী বি চৌধুরী নির্বাচনে থাকলে আর না থাকলে তার ভোট যাবে কোথায়? এই হিসাব-নিকাশ বোঝার জন্য পা-িত্যের দরকার নেই। খুবই সহজ সরল হিসাব-নিকাশ। মাহী নির্বাচনে দাঁড়ানোয় লাভ হয়েছে আওয়ামী লীগের। আর ক্ষতি হয়েছে বিএনপির। কারণ মাহীর প্রার্থিতা নিশ্চিতভাবে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ভোট ব্যাংকে ভাগ আঘাত বসাবে। বিশেষ করে যারা সরকারের বিভিন্ন কর্মকা-ে বিক্ষুব্ধ হয়ে আর আনিসুল হককে ভোট দিতে চাইবেন না তাদের নেগেটিভ ভোটটি যাবে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বাক্সে। তাবিথ আউয়ালের বাক্সেই ভাগ বসাচ্ছে মাহী। এটাই হয়েছে তার জন্য কাল। অতএব, কারা মাহীকে আক্রমণ করবে, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বলবে, তা তো সহজেই অনুমেয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিএনপির প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন মাহী বি চৌধুরী। রাজি হননি খালেদা জিয়া-তারেক রহমান। তারপরও প্রার্থী রয়ে গেছেন মাহী। রাজি না হওয়ার পরও তার প্রার্থী হওয়ার সাধ! একবার মাহীর বাবা বিকল্পধারার সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি ডাঃ বি চৌধুরীকে এমন দৌড় দেয়ানো হয়েছিল যে, রেললাইন দিয়ে দৌড়িয়ে প্রাণ বাঁচাতে হয়েছিল। আগুন দেয়া হয়েছিল তার বাসভবনে। এবার মেয়র প্রার্থী হওয়ার পর হামলা হলো ছেলে মাহীর ওপর। এমনকি তার স্ত্রীও হামলা থেকে রক্ষা পেল না। বিএনপি নেতা খালেদা-তারেকের সঙ্গে অতীতে বেয়াদবি করে কেউ শান্তি না পেয়ে রক্ষা পেয়েছেন এমন নজির খুব একটা নেই। গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, মাহী আমাদের বলেছেন, যারা ২০০৪ সালে একই জায়গায় তার বাবার ওপর যারা হামলা চালিয়েছিল, তারাই এবারও তাকে হত্যার জন্য হামলা চালিয়েছে। ২০০৪ সালের বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ওই বছরের মার্চে বারিধারা থেকে মুক্তাঙ্গন যাওয়ার পথে মহাখালীতে হামলার শিকার হন মাহীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। মনিরুল বলেন, মাহী বি চৌধুরী পুলিশকে বলেছেন, ‘আনিস ভাই এই কাজ করবেন না। এই কাজ করলে তাবিথের ৩টি লাভ হবে। মাহীর বরাত দিয়ে মনিরুল আরও বলেন, ভবিষ্যত জাতীয়তাবাদী রাজনীতি আমিই প্রধান, অন্য কেউ হিসেবে আসবে না। আমি না থাকলে অন্য কেউ এগিয়ে যাবেন, সরকারের ওপর দায় চাপবে আর নির্বাচন পিছিয়ে যাবে, তাতে বিএনপি নির্বাচনের জন্য সময় পাবে, আনিসুল হক পিছিয়ে পড়বেন, আর তাবিথ জিতে যাবে। বিকল্পধারার সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী ‘ঈগল’ প্রতীক নিয়ে এবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালকে ঢাকা উত্তরে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব বদরুদ্দোজার ছেলে মাহী নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন প্রত্যাশা করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিলেও তাতে সাড়া দেয়নি বিএনপি নেতৃত্ব। এটিএন নিউজের ‘ইয়াং নাইট’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বারিধারার বাসায় ফেরার সময় শনিবার রাত ২টার দিকে তেজগাঁওয়ে বিজি প্রেসের কাছে হামলার শিকার হন মাহী। ওই হামলায় মাহী বাঁ হাত ও চোখে আঘাত পান। তার স্ত্রী আশফাহ হক লোপা এবং গাড়িচালক শহীদও আঘাত পেয়েছেন। রাতেই গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন মাহী। তেজগাঁওয়ে হামলার পর অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জনকে দায়ী করে মামলা করেছেন মাহীর ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, মাহী বি চৌধুরী ও তার ঘনিষ্ঠরা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের বলেছেন, গত ক’দিন থেকে বিএনপির তরফ থেকে তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ দেয়া হচ্ছিল। তিনি রাজি না হওয়ায় তার ওপর হামলা হয়েছে। তিনি এও বলেছেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষের দুর্বৃত্তরাই তার ওপর হামলা করেছে। রবিবার বিকেল থেকে পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে একাত্তর টিভির স্ক্রলে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে এটি দেখানো হচ্ছিল! কিন্তু দৈনিক পত্রিকাগুলো খবরটি চেপে গেল কেন? তাবিথ ফেল করবে, এটা ভেবে কি?
×