ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নগরবাসীর প্রতি ফের খোলা চিঠি দিয়েই প্রচার শেষ করলেন আনিসুল হক

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৭ এপ্রিল ২০১৫

নগরবাসীর প্রতি  ফের খোলা চিঠি দিয়েই প্রচার শেষ করলেন আনিসুল হক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘সমস্যা চিহ্নিত, এবার সমাধান যাত্রা’ নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনে এই স্লোগানকে সামনে রেখে নগরবাসীর প্রতি ফের খোলা চিঠি দিয়েছেন ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক। উল্লেখ্য, নির্বাচনী প্রচারের শুরুর দিন নগরবাসীর প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। শেষও করলেন চিঠির মধ্য দিয়ে। এখন অপেক্ষা চিঠির উত্তরে ভোটারদের পক্ষ থেকে জবাব কি আসে? রবিবার সন্ধ্যায় শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান সংলগ্ন ১০নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। ভোটারদের প্রতি আস্থা থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশাকরি নগরবাসী বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, আজ নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন। আমি আপনাদের মাধ্যমে ঢাকা উত্তরের আমার প্রিয় নগরবাসী, যাদের আমি মনে করি আমার স্বজন, তাদের কাছে প্রচারের শেষ দিনে আরও একটি চিঠি লিখেছি, যেমনটি লিখেছিলাম প্রচারের প্রথম দিন। প্রচারের শেষ দিনের চিঠিটি। ‘প্রিয় স্বজন, ২৮ এপ্রিল অন্য আর দশটি দিনের মতো নয়, নয় কেবল ক্যালেন্ডারের একটি তারিখ। এদিনও সূর্য উঠবে, কিন্তু প্রতিদিনের মতো নয়। এদিনও জেগে উঠবে ঢাকা, ব্যস্ত সমস্ত। কিন্তু প্রতিদিনের ঢাকার মতো নয়। এ দিন আপনার দিন। এ দিন আপনার ক্ষমতা প্রয়োগের দিন। এ দিন ঢাকা আপনার সিদ্ধান্তের মুখোমুখি। আমি ৮ এপ্রিল একটি চিঠি লিখেছিলাম আপনাদের। বলেছিলাম একটি বাড়ির গল্প। এ বাড়ি আমাদের ঢাকা উত্তর। বলেছিলাম সম্পর্কের গল্প। এ সম্পর্ক আমাদের, জীবনের সঙ্গে জীবনের, নগরের সঙ্গে নাগরিকের। কেমন আছে এই নগর, আমাদের বাড়ি, ২৪ লাখ স্বজন, ভেতরে-বাইরে? এ নগর আমার অচেনা নয়। তবুও গত ২০ দিনে আমি আরও চিনেছি, দেখেছি আরও কাছ থেকে। অষ্টপ্রহর ঘুরেছি সদর থেকে রাস্তায়, অলিতে-গলিতে, ঘর থেকে ঘরে। দেখেছি মায়ের মুখ, যে চোখে কান্না, সে চোখেই আবার হাসি। বোনের যে বুকে শঙ্কা, সে বুকেই ভালবাসা-উদ্যম। যেমন দেখেছি ভাইয়ের হতাশা, তেমনই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন-সাহস। দেখেছি চিন্তাক্লিষ্ট বাবার মুখ, চোখে আশীর্বাদ। দেখেছি সমস্যা, শুনেছি অভিযোগ। আর ভেবেছি এ অভিযোগ কার বিরুদ্ধে কার? আর কত কথা সমস্যা নিয়ে? আজ যা কিছু সমস্যা, তা অন্য কারও নয়। এই অপরিচ্ছন্নতা, এই অন্ধকার, এ তো আমাদেরই। তাই এর সমাধানও আমাদেরই হাতে। এ নগরকে করতে হবে গরিব-ধনী-শ্রণী-ধর্ম নির্বিশেষে সবার, নাগরিক মর্যাদার। পরিচ্ছন্ন-সবুজ-নিরাপদ-স্বাস্থ্যকর এবং মানবিক। এমন একটি স্নিগ্ধ, নিরাপদ, ভবিষ্যতমুখী বাড়ির মতো নগর কি সম্ভব? এ দ্বিধা হয়ত অনেকেরই, কারণ আমরা ভাবি, এখানে কিছুই হবে না আর। কিন্তু এই আমি যখন আপনাদের মাঝে হেঁটেছি, তখন মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক কিশোরীকে বলতে শুনেছি, আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে? সে থেকে আমি নিশ্চিত জানি, এ নগরে সকাল আর দূরে নয়। কারণ, এবার সমস্যাগুলো চিহ্নিত। আর সমাধানের রূপরেখাও তৈরি। আমি বিশ্বাস করি, এ নগরে ২৮ এপ্রিল আসছে জেগে ওঠার বার্তা নিয়ে, সমাধানযাত্রার ডাক নিয়ে, প্রতিনিধি নির্বাচনের উৎসব নিয়ে। ভোটের এ উৎসবে অংশ নিন। আপনার একটি মূল্যবান ভোটই কেবল সূচনা করতে পারে নতুন এক সকালের, এগিয়ে নিতে পারে সমাধান যাত্রা। অশেষ সালাম ও শ্রদ্ধায়। ইতি, আনিসুল হক। তিনি বলেন, আমার পক্ষ থেকে ২৪৭ জন তথ্য সংগ্রাহক, ১৬ জন সুপারভাইজার, ৪ জন জরিপ বিশেষজ্ঞ ৭৬৭৩৫ জন নাগরিকের মাঝে জরিপ চালিয়েছে। আমাদের পরিচালিত ডিজিটাল মিডিয়ায় গত কয়েক সপ্তাহে দশ লাখেরও বেশি নাগরিকের মতামত এসেছে, আমাদের প্রবর্তিত হটলাইনে হাজার হাজার মানুষ সমস্যা ও মতামত জানিয়েছেন। এসবের মধ্যে উঠে এসেছে ঢাকা উত্তরের প্রধানতম সমস্যাগুলোর বাস্তবচিত্র। তাই আমার লক্ষ্য পরিষ্কার। নাগরিক সেবাসমূহ, অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্যেই এই নগরকে গড়তে হবে একটি মানবিক নগর হিসেবে। সেই উদ্দেশ্যে আমি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচীও নির্দিষ্ট করেছি। নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ঢাকাকে সচল, গতিশীল করা সম্ভব। সিসিটিভির আওতায় এনে ঢাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। একই সঙ্গে সম্ভব খাবার ও বাজারকে নিরাপদ করা। আবাসন ইস্যুতে দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব। দুর্নীতিরোধ, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও অংশগ্রহণমূলক ঢাকার জন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ওয়ার্ড সভা ও কেন্দ্রীয়ভাবে নগরসভা এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পরামর্শক সভা করা সম্ভব। সম্ভব ঢাকাকে কর্মমুখর করা, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রণোদনা দেয়া। সম্ভব অনেক ক্ষেত্রেই ডিএনসিসিকে স্বনির্ভর করা। তিনি বলেন, আমি মনে করি রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং ঢাকাকে বদলাতে হলে একটি পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। সে জন্য গোটা নির্বাচনী মাঠের রাজনীতিতে যেসব কাদা ছোড়াছুড়ি, অপসংস্কৃতি ও কূটকৌশল থাকে, সেসব থেকে সযতেœ, সচেতনভাবে নিজেকে বিরত রেখেছি। কিন্তু আপনারা দেখেছেন, আমার বিরুদ্ধে নানা সময়ে নানা কূটকৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে, অপপ্রচার করা হয়েছে। নাগরিকদের প্রতি আমার আস্থা আছে, আপনাদের প্রতি আমার আস্থা আছে।
×