ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমিকম্পবিধ্বস্ত নেপালে মৃতের সংখ্যা ২৫শ’ ছাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৭ এপ্রিল ২০১৫

ভূমিকম্পবিধ্বস্ত নেপালে মৃতের সংখ্যা ২৫শ’ ছাড়িয়েছে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ নেপালে শনিবার আঘাত হানা স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা রবিবার বিকেল পর্যন্ত দুই হাজার ৫শ’ ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রত্যন্ত অনেক জায়গার অবস্থা সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এদিকে রবিবার নেপালে ফের আঘাত হেনেছে ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্প। খবর বিবিসি, এনডিটিভি ও ওয়েবসাইটের। বিমানযোগে ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। তবে নেপাল সরকার বলেছে, আরও তাঁবু ও পানীয় প্রয়োজন। মৃতের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে বেড়ে চলেছে। শুধু কাঠমান্ডু শহরেই মারা গেছে ১ হাজারের বেশি মানুষ। শনিবারের পর রবিবারও নেপালে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এই দিনের কম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল নেপালের কোডারি থেকে ১৭ কিলোমিটার দক্ষিণে। রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৬.৭। নতুন করে কম্পন হওয়ায় কাঠমান্ডুতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ বন্ধ রাখা হয়। নেপালের মানুষ আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে খোলা জায়গায় অস্থায়ী শিবির করে রাত কাটাচ্ছেন। কাঠমান্ডুর চিত্রটা পুরো বদলে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে শহরের বুকের ওপর দিয়ে বুলডোজার চালানো হয়েছে। সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে কাষ্ঠম-প, পাঁচতালে বসন্তপুর দরবার, দশাবতার এবং কৃষ্ণমন্দির। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পশুপতিনাথ মন্দিরও। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গোর্খা, ধারিং, রাসুয়া, সিন্ধুপালচক, কাভরেপালানচক এবং ঢোলাকা জেলা। নেপালের আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মতে, আর ক’দিনের মধ্যে দেশটিতে বর্ষা মৌসুম শুরু হচ্ছে। ভারি বর্ষণ শুরু হলে উদ্ধার তৎপরতা স্বাভাবিকভাবেই ব্যাহত হবে, বিষয়টি নিয়ে উদ্ধারকর্মীরা উদ্বিগ্ন। ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, য্ক্তুরাজ্য, চীন, ভারত, পাকিস্তান, নরওয়ে, স্পেন, জার্মানি ও ইসরাইল। ব্রিটিশ রেডক্রসের এক কর্মী বলেছেন, ভূমিকম্পে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র তারা এখনও দেখতে পাচ্ছেন না। রবিবার এভারেস্টের কাছ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দল ১৮ মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছে। ভূমিকম্পের প্রভাবে এভারেস্টের বেজ ক্যাম্পে তুষারধসের নিচে এখনও অনেকে চাপা পড়ে আছেন বলে নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের সময় অন্তত এক হাজার পর্বতারোহী (এদের মধ্যে প্রায় চার শ’ বিদেশী) বেজ ক্যাম্প বা এভারেস্টের চূড়ার পথে ছিলেন। রবিবার ধারাহারা টাওয়ারের ধ্বংসস্তূপ থেকে ২শ’ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে ১৭ পর্বতারোহীর দেহ। এদিন নতুন করে তুষারধস নেমেছে মাউন্ট এভারেস্টে। ধারাহারার আটতলা থেকে দেখা যেত পুরো কাঠমান্ডু শহর। এ জন্য পর্যটকরা ভিড় জমাতেন প্রাচীন এই টাওয়ার দেখতে। শনিবার যখন প্রথম কম্পন শুরু হয়, ততক্ষণে প্রায় দু’শ’ জনের টিকেট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছে টাওয়ার কর্তৃপক্ষ। কম্পনের ধাক্কায় যখন টাওয়ারটি হেলতে শুরু করে তখন ভেতরে আটকা পড়া পর্যটকদের বেরিয়ে আসার কোন উপায় ছিল না। কাঠমান্ডুর বাসিন্দা সুজাতা থাপা টাওয়ার ভেঙ্গে পড়ার দৃশ্যটি দেখতে পান কাঠমান্ডুর টিভি চ্যানেলকে তিনি বলেন, ‘ধারাহারার সামনে দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ দুলুনিটা অনুভব করি। মুহূর্তের মধ্যে দেখলাম আস্তে আস্তে মাটিতে মিশে যাচ্ছে টাওয়ারটি। ভেতর থেকে শুধু কান্না আর চিৎকার কানে আসছিল।’ শনিবারের মতো রবিবারের ভূমিকম্পটিও ভারতের দিল্লী, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্ত প্রদেশ, অসম, রাজস্থান ও পশ্চিমবঙ্গেও ভালভাবেই টের পাওয়া যায়। রবিবার কলকাতাসহ পুরো পশ্চিমবঙ্গে কম্পন অনুভূত হয়। কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে বেহালা, গড়িয়া, লেক টাউন, সল্টলেক, খিদিরপুর, পার্ক স্ট্রিটে কম্পন টের পাওয়া যায়। আতঙ্কিত লোকজন ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয় শহরের মেট্রো পরিষেবা। শনিবারের ভূমিকম্পে শিলিগুড়িতে কয়েকটি বাড়ি ধসে পড়ে। রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা রবিবার শিলিগুড়ি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান। তিনি ভূমিকম্পে নিহতদের পরিবারকে ৪ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহতদের ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ঘোষণা দেন। এই ধরনের আফটার-শক চলতে থাকবে দিল্লী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। এদিকে, চীনের তিব্বতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭। ভারতে বেড়ে হয়েছে ৫৩। আহত প্রায় আড়াই শ’। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার মৃতদের পরিবারকে ৪ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
×