তৃতীয় অধ্যায় : বাংলাদেশের পরিবার কাঠামো ও সামাজিকীকরণ
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, কেমন আছ? পাঠচর্চার সুবিধার্থে তোমাদের জন্য সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনী কিছু প্রশ্নোত্তর দেওয়া হল। নিজে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবে এবং সম্ভাব্য উত্তর মিলিয়ে নেবে। আশা করি উপকৃত হবে।
সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর :
রুনা ও রাকিব একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তাদের তিন বছরের শিশু রাইমা গৃহপরিচারিকার সাথে সময় কাটায়। বাবা-মায়ের ব্যস্ততার কারণে রাইমা তাদের সান্নিধ্য বঞ্চিত হয়। কিছুদিন পরে রুনা ও রাকিব লক্ষ্য করল রাইমার আচরণ অনেকটা গৃহপরিচারিকার মতো। রাকিব রুনাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলে। তার মতে মা-ই সকল শিশুর জীবনাদর্শ। উত্তরে রুনা জানায়, ‘সন্তানের ক্ষেত্রে পিতা-মাতা উভয়েরই দায়িত্ব সমান।’
প্রশ্ন :
ক) মিথস্ক্রিয়া কাকে বলে? ১
খ) সামাজিকীকরণ একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়াÑ ব্যাখ্যা কর। ২
গ) রাইমার আচরণে গৃহপরিচারিকার প্রভাব বর্ণিত পরিবারটির আলোকে ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ) রুনার বক্তব্যটি অনুচ্ছেদের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ৪
সম্ভাব্য উত্তর :
ক. আচরণগত পারস্পরিক প্রভাবের প্রতিক্রিয়াকে মিথস্ক্রিয়া বলে।
খ. মানব শিশুর জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন ও খাপ-খাওয়ানোর প্রক্রিয়াই সামাজিকীকরণ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে সমাজের নতুন নিয়ম-কানুন, সাথী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পরিবেশে খাপ খাইয়ে চলতে হয় সারাজীবন। তাই বলা হয় সামাজিকীকরণ একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রুনা ও রাকিবের ব্যস্ত সময় কাটে। তাদের সন্তান রাইমা পিতা-মাতার সান্নিধ্য বঞ্চিত হয়ে গৃহপরিচারিকার কাছে লালিত-পালিত হয়। ফলে তার আচরণে গৃহপরিচারিকার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কারণ পরিবার সামাজিকীকরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। মূলত শিশু চরিত্রের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপিত হয় পরিবারের মধ্যেই। শিশুর আচার-আচরণ, চলাফেরা, ভাষার ব্যবহার, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দান করা পরিবারের অন্যতম কাজ। কিন্তু রুনা ও রাকিবের ক্ষেত্রে সময় স্বল্পতার কারণে রাইমা উপরিউক্ত শিক্ষাগুলো হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
অন্যদিকে গৃহপরিচারিকার আচরণের ভাষা, নৈতিক বা ধর্মীয় সেসব ছাপ রাইমার জীবনে পড়ছে। বেশিরভাগ সময় গৃহপরিচারিকার তত্ত্বাবধানে থাকার ফলেই রাইমার আচরণে তার প্রভাবই পরিলক্ষিত হয়।
ঘ. উদ্দীপকে রুনা ও রাকিবের কর্মস্থলে ব্যস্ততার কারণে সন্তান রাইমাকে সময় দিতে পারে না। ফলে রাইমার আচরণ গৃহপরিচারিকার মতো হয়। রাকিবের বক্তব্য হলো মা-ই সকল শিশুর জীবনাদর্শ, সাধারণত শিশুর বেশির ভাগ সময় মায়ের যতেœ তার সান্নিধ্যে কাটে বলে তার আচরণে মায়ের শিক্ষা ও আচরণের প্রভাব পড়ে। তাই রাকিব রুনাকে চাকরি ছেড়ে রাইমাকে সময় দিতে বলে। কিন্তু রুনার মতে, ‘সন্তানের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার দায়িত্ব সমান।’ এ উক্তিটিও যথার্থ। কেননা পিতার জীবনাদর্শ আচরণ, নেতৃত্বের গুণাবলী দায়িত্ববোধ থেকেও সন্তানের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে।
একটি শিশুর জীবনে বাবা-মা দু’জনের ভূমিকাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদের একজনকে বাদ দিয়ে শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ সম্ভব নয়। একজন মা শিশুকে যতœ করে লালন-পালন করেন, অসুস্থ হলে তাকে সুস্থ করে তোলেন। বাবা শিশুকে সঙ্গ দেন, ভাব বিনিময় করেন, বাবা-মায়ের সান্নিধ্যে শিশু নিজেকে নিরাপদ মনে করে। পর্যাপ্ত স্নেহের অভাবে শিশুর শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের ক্ষতি হয়। তাই পিতা-মাতার মধ্যে সুসম্পর্ক ও শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তাই উপরিউক্ত বিশ্লেষণে বলা যায়, শিশুর জীবনে বাবা-মা দু’জনের দায়িত্বই সমান।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: