ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিবিড় পরিচর্যার হাল

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৬ এপ্রিল ২০১৫

নিবিড় পরিচর্যার হাল

সঙ্কটাপন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ে নিবিড় পরিচর্যার। সে কারণে প্রতিটি হাসপাতালেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) থাকা বাঞ্ছনীয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে যে কোন হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট থাকা বাধ্যতামূলক। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী একটি হাসপাতালে মোট বেডের ১০ ভাগ আইসিইউ-এর জন্য বরাদ্দ থাকতে হয়। বাংলাদেশের পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন। এখানে বহু সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে এ সংক্রান্ত কোন বিভাগই নেই। চারভাগের তিনভাগ সরকারী হাসপাতালে এ সুবিধা অনুপস্থিত। ঢাকায় দেশের প্রধান সরকারী হাসপাতালটির অবস্থাও শোচনীয়। ঢাকা মেডিক্যালের ৩ হাজার বেডের বিপরীতে আইসিইউ-এর জন্য ৩০০ বেড থাকা সমীচীন হলেও রয়েছে মাত্র ২০টি। ফলে রোগীদের দুর্দশা সম্পর্কে সহজেই অনুমান করা যায়। এছাড়া বারডেম হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ২০টি করে আইসিইউর সিট রয়েছে। ফলে রাজধানীর এ তিনটি প্রধান হাসপাতালে প্রতিদিনই গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন সঙ্কটাপন্ন রোগী আইসিইউ বেডের অপেক্ষায় থাকেন। এভাবে অপেক্ষায় থেকে অনেকে মারাও যান। এটা ঠিক যে, একটি হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। ১০ বেডের পূর্ণাঙ্গ একটি আইসিইউ চালু করতে কমপক্ষে ২ কোটি টাকা লাগে। আইসিইউতে রোগীকে ওঠানো-নামানো, পাশ ফেরানোসহ বিভিন্ন অবস্থানে রাখার জন্য বিশেষায়িত শয্যা আবশ্যক। প্রত্যেক রোগীর জন্য পৃথক ভেন্টিলেটর (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) ও কার্ডিয়াক মনিটর (হৃদযন্ত্রের অবস্থা, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা, কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনের মাত্রা, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি, রক্তচাপ পরিমাপক), ইনফিউশন পাম্প (স্যালাইনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মাত্রা নির্ধারণ যন্ত্র) দরকার। এছাড়া আইসিইউতে শক মেশিন, সিরিঞ্জ পাম্প, ব্লাড ওয়ার্মারসহ অত্যাবশ্যক কিছু সরঞ্জামের প্রয়োজন পড়ে। পাশাপাশি কিডনি ডায়ালিসিস মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এবিজি মেশিনও থাকতে হয়। দেশের দরিদ্র মানুষের পক্ষে বেসরকারী হাসপাতালে প্রতিদিন ২৫ হাজার থেকে অর্ধ লাখ টাকা আইসিইউতে চিকিৎসার জন্য ব্যয় করা প্রায় অসম্ভব। তাই সরকারী হাসপাতালই এ ক্ষেত্রে বড় ভরসা। তাই বলাবাহুল্য, প্রথমত সরকারী হাসপাতালগুলোতেই আইসিইউ বেডের সংখ্যা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বেসরকারী হাসপাতালগুলোর ক্ষেত্রে আইসিইউ বেডের দৈনন্দিন ফি কমিয়ে আনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন যে, দেশের সকল মেডিক্যালে আইসিইউ স্থাপন করা হবে। এমনকি জেলা সদর হাসপাতালেও এই ইউনিট করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা আশা করব, তার আহ্বানে বিত্তবানরা আইসিইউ স্থাপনে সরকারী হাসপাতালগুলোকে অর্থদানে এগিয়ে এসে সেবার মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।
×