ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিহতদের পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দাবি

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

নিহতদের পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শ্রমিকের জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবি পুনর্ব্যক্ত করার মধ্যদিয়ে রাজধানীসহ দেশজুড়ে পালিত হলো রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দ্বিতীয় বার্ষিকী। ওই দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শুক্রবার ছুটির দিনে বিভিন্ন শ্রমিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নানা কর্মসূচী পালন করেছে। এসব কর্মসূচীর মধ্যে ছিল- সাভারে রানা প্লাজার সামনে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অপর্ণ, ঢাকায় মানববন্ধন, নিহতদের পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবিতে প্রতিবাদী মিছিল, প্রতীকী অবস্থান এবং কার্টুন ও ছবি প্রদর্শনী। নিহতদের স্মরণ করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, পুনর্বাসন, নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দিনটিকে শ্রমিক নিরাপত্তা ও শোক দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবিও উঠেছে। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক কর্মসূচীতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা প্রদানের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য হাজেরা সুলতানা। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দুই বছর পূর্তিতে নিহত শ্রমিকদের সন্তানদের প্রতীকী অবস্থান শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। হাজেরা সুলতানা বলেন, রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রাথমিকভাবে ৪০ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হলেও এখন পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন ডলার ঘাটতি রয়ে গেছে। নিহতদের পরিবার ও আহত শ্রমিকসহ ক্ষতিগ্রস্ত সবার সহায়তায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা উচিত। সংগঠনের সভাপতি আমিরুল হকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য নূর আহমেদ বকুল, যুব মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক সাব্বাহ আলী ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাফিয়া পারভীন। একই স্থানে রানা প্লাজার জমিতে বহুতলবিশিষ্ট শ্রমিক কলোনি নির্মাণ ও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ চার দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ প্রগতিশীল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি রাজিয়া বেগমের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেনÑ গরিবী হটাও আন্দোলনের নেতা নুরুল হক মেহেদী, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এএম ফয়েজ হোসেন, জাতীয় গার্মেন্টস দর্জি সোয়েটার শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোঃ রফিক, প্রগতিশীল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুন নাহার প্রমুখ। বক্তারা বলেন, এখনও অনেক শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের জন্য ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি। হতাহত শ্রমিকদের পোষ্যদের পুনর্বাসনও অনিশ্চিত। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দুই বছরেও বিচারের আওতায় আনা হয়নি। এসব বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এদিকে, সাভারে রানা প্লাজার সামনে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্যদিয়ে নিহত শ্রমিকদের স্মরণ করে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম। সকাল সাড়ে ৯টায় সংগঠনের সভাপতি মোশরেফা মিশুর নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এতে বক্তব্য রাখেনÑ সংগঠনের অর্থ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সবুজ, কেন্দ্রীয় নেতা মমিনুর রহমান, শফিউল আলম আজাদ, দুলাল হোসেন প্রমুখ। বক্তরা অবিলম্বে নিহতদের পোষ্য ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। একই স্থানে সকাল সাড়ে ৮টায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রকাশিত কার্টুন ও ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি। পরে সেখানেই এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সংগঠনের সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার লিমার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতা দীপক রায়, অঞ্জন দাস প্রমুখ। বক্তারা ২৪ এপ্রিলকে শ্রমিক নিরাপত্তা ও শোক দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান। একই স্থানে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রতিবাদী পথসমাবেশ করেছে গণমুক্তির গানের দল। গানে গানে নিহতদের স্মরণ, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান ও দোষী ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানান ওই সংগঠনের কর্মীরা। নিহতদের স্মরণে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে ন্যাশনাল পিপলস শ্রমিক পার্টি। পার্টির ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেনÑ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফিরোজ আহমদ লিটন, সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান হৃদয়, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক শেখ মোঃ হেলাল উদ্দিন প্রমুখ। আর দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারী তহবিলে রক্ষিত ১০৮ কোটি টাকা সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ।
×