ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ওবামার ক্ষমা প্রার্থনা

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

ওবামার ক্ষমা প্রার্থনা

বারাক ওবামা যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হন তখন ইরাক ও আফগানিস্তানের দুটি অস্বস্তিকর ও দুরূহ লড়াই চালানোর দায়িত্ব পূর্বসূরীর কাছ থেকে তার ওপর অর্পিত হয় এবং তিনি এগুলোর অবসান ঘটাতে উদ্যোগী হন। কিন্তু তিনি পাকিস্তানে ড্রোন হামলা আরও জোরদার করে এবং ইয়েমেন ও সোমালিয়াতেও ড্রোন হামলা সম্প্রসারিত করে নিজেই তৃতীয় গোপন এক লড়াইয়ের সূচনা করেন। ড্রোনের নির্ভুলভাবে হত্যাকা- চালানোর সামর্থ্য প্রেসিডেন্টের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়। তিনি নতুন প্রযুক্তিতে উৎসাহী ছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে দূরে রাখতে দৃঢ় সংকল্প ছিলেন। সহকারীরা বলেন, গতানুগতিক যুদ্ধে আমেরিকানদের জীবন বিপন্ন বা দীর্ঘস্থায়ী রক্তপাতের ঝুঁকি সৃষ্টি না করে এক সঙ্গে কয়েক বিপজ্জনক সন্ত্রাসীকে নির্মূল করার ধারণা তিনি পছন্দ করেন। তিনি প্রায়ই তার সহকারীদের বলতেন, যারা আমাদের হত্যার চেষ্টা করছে, আসুন আমরা তাদের হত্যা করি। বেশিরভাগ বিবরণ অনুযায়ী, ড্রোন হামলায় আলকায়েদার কয়েকজন বড় নেতাসহ শত শত বিপজ্জনক জঙ্গী বাস্তবেই নিহত হয়। কিন্তু ছয় বছর ধরে কোন কোন হামলার ফল গভীরভাবে অস্বস্তিদায়ক বলে প্রতিপন্ন হয়েছে। ওই সময়ে গোপনীয়তার ভারী ছদ্মাবরণ সময়ে সময়ে উন্মোচন করা হয়েছে। ড্রোন হামলার প্রতিটি স্বতন্ত্র তদন্তেই প্রশাসন কর্মকর্তারাও যত সংখ্যক বলে স্বীকার করেছেন তার চেয়ে বেশি সংখ্যক বেসামরিক লোকজন নিহত হয়েছে। ক্রমশ এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, যখন নেভাডাস্থ অপারেটররা পৃথিবীর অন্য প্রান্তের দূরবর্তী উপজাতীয় এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেন, তখন তারা কাদের হত্যা করেছেন সেটি তারা প্রায়ই জানেন না বরং তারা সাধ্যমতো এক অপূর্ণাঙ্গ আঁচ-অনুমানই করেছেন। জানুয়ারিতে পাকিস্তানে এক মার্কিন ড্রোন হামলায় আলকায়েদার হাতে জিম্মি হিসেবে আটক থাকা এক আমেরিকান ত্রাণকর্মী ও আরেক পশ্চিমা জিম্মি নিহত হয়েছিলেন এবং তাদের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হতে কয়েক সপ্তাহ লেগেছিল বলে প্রেসিডেন্ট বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেন। এতে ভিডিও স্ক্রিন, জয়স্টিক ও কখনও কখনও অপূর্ণাঙ্গ গোয়েন্দা তথ্যের সাহায্যে পরিচালিত এক বহুলাংশে অদৃশ্য দূরবর্তী লড়াইয়ের ঝুঁকিই স্পষ্ট হয়ে উঠে। একটি সন্ত্রাসী দলের এক কম্পাউন্ড ধ্বংস করতে চেয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ওই হামলা চালানোর অনুমতি দেয়। কয়েক শ’ ঘণ্টা নজরদারির পরও সেখানে যে জিম্মিদের আটক রাখা হচ্ছে এমন কোন ধারণা সংস্থাটি পেতে পারেনি, কর্মকর্তারা এ কথা জানান। তারা বলেন, এমন কি হামলার পরও সংস্থাটি প্রথমে এটি বুঝতে পারেনি যে, এটি এমন এক আমেরিকানকে হত্যা করেছে, যাকে উদ্ধার করতে এটি দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে এসেছিল। বেদনাদায়ক খবরটি কেবল পরেই স্পষ্ট হয়। এক আমেরিকানের তার নিজের সরকারের হাতে আকস্মিক নিহত হওয়ার ঘটনা ড্রোন লড়াইয়ের জন্য এক বেদনাদায়ক মুহূর্ত বলে প্রতিপন্ন হয়েছে। ড্রোন হামলাই বিশেষত প্রেসিডেন্ট ওবামা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আলকায়েদার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের ভবিষ্যত নির্ধারণ করেছে। দৃশ্যত বিচলিত অবস্থায় ওবামা ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাইতে হোয়াইট হাউসের ব্রিফিং রুমে আসেন। প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, প্রেসিডেন্ট ও কমান্ডার ইন চীফ হিসেবে আমি আমাদের সব সন্ত্রাস দমন তৎপরতার পূর্ণ দায়-দায়িত্ব নিচ্ছি। যা ঘটেছে তার জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত। মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে আমি পরিবারগুলোর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। কর্মকর্তারা জানান, পাকিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকায় আলকায়েদার এক আস্তানায় ১৫ জানুয়ারি এক ড্রোন হামলায় দুই জিম্মি আমেরিকান নাগরিক ওয়ারেন উইনস্টিন এবং ইতালীয় নাগরিক গিওভানি লো পোর্তা নিহত হন। Ñনিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্ট।
×