ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেনিনজাইটিসে বিশ্বে দিনে গড়ে ১৩৭ রোগী মারা যায়

প্রকাশিত: ০৮:০৬, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

মেনিনজাইটিসে বিশ্বে দিনে গড়ে ১৩৭ রোগী মারা যায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বে মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। মেনিনজাইটিস হচ্ছে জীবাণু দ্বারা বা অন্য কোন উপায়ে সৃষ্ট মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের পদার্থ মেনিনজেসের তীব্র ইনফেকশন। মেনিনজাইটিসের ক্ষেত্রে প্রদাহ মস্তিষ্কের খুব কাছাকাছি হওয়ায় মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। বিনা চিকিৎসায় মেনিনজাইটিসে মৃত্যুহার ৭০ শতাংশের বেশি। বিশ্বে প্রতি মিনিটে একজন রোগী মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয় এবং প্রতি ২৪ ঘণ্টায় মারা যায় ১৩৭ জন। মেনিনজাইটিসের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া প্রতি পাঁচজন রোগীর অন্তত একজনের চিরস্থায়ী অঙ্গহানি বা মস্তিষ্কের সমস্যা বা বধিরতা বা দৃষ্টিশক্তি হারানোর মতো করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়। বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব মেনিনজাইটিস দিবস’ উপলক্ষে ঢাকা শিশু হাসপাতাল এবং বাংলাদেশ সোসাইটি ফর পেডিয়াট্রিক ইনফেকশাস ডিজিজের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক ও বাংলাদেশ সোসাইটি ফর পেডিয়াট্রিক ইনফেকশাস ডিজিজের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মনজুর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে ঢাশিহা ব্যবস্থাপনা বোর্ডের চেয়ারপার্সন, জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ শাহলা খাতুন প্রধান অতিথি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসাইন্স এ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ কাজী দীন মোহাম্মদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একাডেমিক পরিচালক অধ্যাপক এম এ কে আজাদ চৌধুরী, অধ্যাপক সমীর কুমার সাহা, অধ্যাপক এ এস এম নওশাদ উদ্দিন আহম্মেদ প্রমুখ। সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন হেড অব মার্কেটিং মোঃ সুমন মোহসীন, পরিচালক মোঃ রফিকুল আলম ও সৈয়দ এবি তাহমিদ। দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে একটি র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি সকাল সাড়ে আটটায় ঢাকা শিশু হাসপাতাল চত্বর হতে বের হয়ে মানিক মিয়া এ্যাভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশের ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মেনিনজাইটিসের রোগী মারা যায়। তবে সব ক্ষেত্রে এ রকম হয় এমনটি বলা যাবে না। মেনিনজাইটিসের প্রধান লক্ষণগুলো হলো জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, গলার মাংস শক্ত হয়ে যাওয়া, স্মৃতি বিভ্রম, বমি বা বমি বমি ভাব, আলোর দিকে তাকাতে না পারা, অস্বস্তি, শরীরের বিশেষত পায়ের পেছনে ও নিতম্বে ঘায়ের মতো বিশেষ দাগ, অচেতন অবস্থা, তন্দ্রাভাব, শরীরের ভারসাম্য হারানো প্রভৃতি। বয়সভেদে এ উপসর্গগুলোর কিছুটা ভিন্নতা দেখা যেতে পারে। অধ্যাপক ডাঃ মনজুর হোসেন বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেনিনজাইটিসের কারণ হলো বিভিন্ন প্রকারের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস, প্রোটোজোয়া প্রভৃতি। তবে বিভিন্ন ধরনের ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় বা ক্যান্সারের কারণেও মেনিনজাইটিস হতে পারে। বয়সভেদে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ভিন্ন ভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসের জন্য দায়ী। অন্য বক্তারা বলেন, ভাইরাসজনিত মেনিনজাইটিস ব্যাকটেরিয়াজনিত মেনিনজাইটিসের চেয়ে কম ভয়ঙ্কর। কম বয়সী শিশু এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ভাইরাল মেনিনজাইটিস মাম্পস, মিসেলস, পক্স ভাইরাস এবং বিশেষ ধরনের মশাবাহিত ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। রোগ প্রতিরোধকারী ক্ষমতা হ্রাসের ওষুধ সেবনকারী, এইডস বা এইচআইভি আক্রান্ত রোগী ও বয়স্করা ফাংগাল মেনিনজাইটিসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ফাংগাল মেনিনজাইটিসের প্রকোপ আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বেশি এবং তা ২০-২৫ শতাংশ এইডস আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর কারণ। প্যারাসাইটিক মেনিনজাইটিস পরজীবী জীবাণুর প্রভাবে দেখা দিয়ে থাকে। জীবাণুর বাইরেও কিছু কারণে মেনিনজাইটিস হতে পারে। ক্যান্সারের বিস্তৃতি, কিছু বিশেষ ওষুধ সেবন (ব্যথানাশক ওষুধ, ইমিউনোগ্লোবিন), সারকোডিয়াসিস, কানেকটিভ টিস্যুর সমস্যাজনিত রোগ, সিস্টেমিক লুপাস ইরাথেমেটোসাস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কোন কোন ক্ষেত্রে মাইগ্রেন থেকেও মেনিনজাইটিস হতে পারে, যদিও এ হার অনেক কম।
×