ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন ২৫ এপ্রিল

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন ২৫ এপ্রিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপিত হবে আগামীকাল ২৫ এপ্রিল। ওই দিন ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী সকল শিশুকে একটি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী সকল শিশুকে একটি লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সারা দেশে প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখেরও অধিক শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানো হবে। এ কর্মসূচী সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এদেশে প্রায় ২৪ ভাগ শিশুমৃত্যু রোধ করা সম্ভব। ওই দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত কেন্দ্র খোলা থাকবে। শিশুদের ভরা পেটে কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। কাঁচি দিয়ে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলের মুখ কেটে এর ভেতরে থাকা তরল ওষুধ চিপে খাওয়ানো হবে। জোর করে বা কান্নারত অবস্থায় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো যাবে না। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশব্যাপী ১ লাখ ২০ হাজার স্থায়ী কেন্দ্রসহ অতিরিক্ত ২০ হাজার ভ্রাম্যমান কেন্দ্রের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, ব্রিজের টোল, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, খেয়াঘাট ইত্যাদি স্থানে অবস্থান করবে। প্রতিটি কেন্দ্রে কমপক্ষে ৩ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী দায়িত্ব পালন করবে। তবে দুর্গম এলাকায় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন সফল করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন পর্যালোচনার জন্য ক্যাম্পেইনের দিন প্রতিটি উপজেলায়, জেলায় ও কেন্দ্রে সর্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে একটি স্বাস্থ্য বার্তাও সকলকে পৌঁছে দেয়া হবেঃ ‘জন্মের পর পূর্ণ ৬ মাস শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য সকলকে বলুন।’ সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের জনস্বাস্থ্য ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। স্বাস্থ্য খাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য সাড়ে ১২ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, অনুর্ধ ৫ বছর বয়সী শিশুর ও ইনফ্যান্টের মৃত্যুহার যথাক্রমে হাজারে ৫৩ ও হাজারে ৪৩ (জীবিত জন্মে) নেমে এসেছে। অপুষ্টির হার কমেছে, খর্বতা ৪৩ শতাংশ থেকে ৪১ শতাংশে এবং কম ওজন ৪১ শতাংশ থেকে ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে। শিশুদের শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার বেড়েছে, যা বর্তমানে শতকরা প্রায় ৬৪ ভাগে উন্নীত হয়েছে। ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ফলে ভিটামিন ‘এ এর অভাবজনিত রাতকানা রোগের হার শতকরা ১ ভাগের নিচে নেমে এসেছে। প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। শুধুমাত্র বছরে ২ বার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ফলে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজনিত রাতকানা রোগের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। ১৯৮২ সালে যেখানে বছরে শতকরা ৩.৭৬ জন শিশু রাতকানা রোগে আক্রান্ত হতো, এখন সেখানে এই হার শতকরা ০.০৪ ভাগে নেমে এসেছে। এটা সম্ভব হয়েছে সরকার পরিচালিত জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন এবং সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কারণে। সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ক্যাম্পেইন দিবসে একটি শিশুও যেন বাদ না পড়ে; সকল শিশুকেই যেন ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। বছরে ২ বার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ফলে শিশুদের আমরা রাতকানা, অন্ধত্ব, অপুষ্টি ও বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারি।
×