ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদাই উস্কানির বস্তু, ঘরে থাকাই তার জন্য ভাল

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

খালেদাই উস্কানির বস্তু, ঘরে থাকাই তার জন্য ভাল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বলে ঘরের ভেতরে বসে থাকাই তাঁর জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, বেগম জিয়া আগুনযুদ্ধ চালিয়েছেন। তিনি খুনের আসামি। খুনের আসামি হয়ে তাঁর রাস্তাঘাটে সাবধানে চলা উচিত। আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর ফাঁসি হতে পারে। খালেদা জিয়াকে ব্যর্থ শাসক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিকল্প খালেদা জিয়া হতে পারেন না। গণতন্ত্রের জন্য বেগম জিয়া অনুপযুক্ত। সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে কোন উন্নয়ন হয়নি বলে খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিক্রিয়া জানাতে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেন। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। নির্বাচনী প্রচারে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া নিজেই একটি উস্কানির বস্তু। সাম্প্রতিকালে তিনি জঘন্য আগুনযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশে পোড়া মানুষের স্তূপ তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নিজেই উত্তেজনা সৃষ্টিকারী, সুতরাং তাঁর স্থানকালপাত্র জ্ঞান থাকা উচিত। এরকম একটি পরিস্থিতিতে উনাকে দেখলেই মানুষের ক্ষোভ হতে পারে। অসংখ্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, উনার ধৈর্যশীল হওয়া উচিত, ঘরের ভেতর বসে থাকাই মঙ্গলজনক উনার জন্য। সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা নাকচ করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা প্রতিহতের নীতিতে নেই। খালেদা জিয়াকে রাস্তায় প্রতিহত করার কোন বিষয় নেই। বরং আমরা তাঁর নিরাপত্তা দিয়েছি। নিরাপত্তা না দিলে তিনি অক্ষত অবস্থায় ফিরতে পারতেন না। উনি তো মামলার আসামি হয়েছেন, পোড়া মানুষের হিসাব নিতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি, সেটার দিকে নজর দিলেই উনার জন্য মঙ্গলজনক। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলায় ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকরা জড়িত কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সরকার সমর্থকরা এ হামলা করছে না। তবে এটা দুঃখজনক ঘটনা, আমরা নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করছি। নিরাপত্তা দিয়েছি বলেই অক্ষত অবস্থায় হাতিরঝিল দিয়ে দ্রুত তাঁর বাড়িতে চলে গেছেন, নিরাপত্তা না দিলে অক্ষত অবস্থায় যেতেন কিভাবে? যেসব ছেলেমেয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে থাকা লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে তাদের বিষয়টি নিরাপত্তা বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে দেখছে। ভবিষ্যতেও খালেদা জিয়ার বহরে হামলা হওয়ার সম্ভবনা দেখছেন কিনা- জানতে চাইলে ইনু বলেন, আমরা নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করব, চোরাগোপ্তা আক্রমণ হবে কি হবে না তার ভবিষ্যদ্বাণী তো আমি করতে পারি না। উনার রাজনীতিতে থাকা উচিত নয় বলে মনে করি। উনার ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং তাঁর বিচারের ব্যবস্থা করা উচিত। তিনি গণতন্ত্রের জন্য অনুপযুক্ত। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উদ্দেশে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, কথায় কথায় বিদেশীদের কাছে ধরনা দেবেন না। তওবা করুন, জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বিচারের জন্য প্রস্তুত হোন। গত তিন মাসের অবরোধ-হরতালে গাড়িতে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগে নিরীহ মানুষের প্রাণহানির কথা তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এতকিছুর পরও যাঁরা খালেদাকে সমর্থন দিচ্ছেন বা খালেদা যাঁদের সমর্থন দিচ্ছেন বা যাঁরা খালেদার সমর্থন নিচ্ছেন, তাঁরা সবাই আগুন সন্ত্রাসী বা আগুন সন্ত্রাসের সমর্থক। খালেদার ভক্ত-সমর্থকরা একেকজন ‘সম্ভাব্য পেট্রোলবোমা’। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে কোন উন্নয়ন হয়নি বলে খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় বলে মন্ত্রী জানান। ওই বক্তব্য দিয়ে বিএনপি নেত্রী মিথ্যাচার করেছেন দাবি করে ইনু বলেন, সিটি নির্বাচনের প্রচারে নেমেই খালেদা জিয়া মিথ্যাচার শুরু করেছেন। মিথ্যাচার খালেদা জিয়ার পুরনো যুদ্ধাস্ত্র, মিথ্যাচারকে তিনি শিল্পে পরিণত করেছেন। তিনি বলেন, বেগম জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনার সময় নাকি ঢাকা-চট্টগ্রামে কোন উন্নয়ন হয়নি। এর চেয়ে বড় মিথ্যাচার আর কী হতে পারে? উন্নয়ন হয়েছে কিনা তা বিচারের ভার দিয়ে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, উনি বা উনার দলের নেতারা কি যাতায়াতের জন্য হাতিরঝিল বা ফ্লাইওভার ব্যবহার করেন না? তাঁর আমলের বিদ্যুতের লোডশেডিং এখন কি আর আছে? ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন- বিদ্যুত, বিশুদ্ধ পানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, যোগাযোগ, আবাসন ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী। নির্বাচনের চার দিন আগে সরকারের মন্ত্রী হয়ে উন্নয়নচিত্র তুলে ধরা নির্বাচনী আচারণবিধি লঙ্ঘন কিনা- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া, যিনি নির্বাচনের প্রার্থী নন, তিনি যে মিথ্যাচার করেছেন তার জবাব দিলাম মাত্র। এমন কোন নির্বাচনী বিধান নেই যে, নির্বাচনের এক মাসের সময়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- সম্পর্কে কথা বলা যাবে না। লিখিত বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসের জঘন্য আগুন সন্ত্রাসের পর বেগম খালেদা জিয়া খোলস, বেশভূষা, ঘোমটা পরার স্টাইল, ভোল পাল্টে নিজেকে আবার রাজনীতিতে হালাল করার যে দুরভিসন্ধি করছেন, সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করতে দু-একটি কথা বলার জন্যই এ আয়োজন। বেগম জিয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও জনগণের বিরুদ্ধে ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে যুদ্ধ করছেন এবং এ যুদ্ধে তিনি বেছে নিয়েছেন ইতিহাসের নির্মমতম অমানবিক, জঘন্য কৌশল। বাংলাদেশের জনগণের ঘৃণা ও প্রত্যাখ্যানের মুখে পরাজিতপ্রায় পলায়নপর খালেদা জিয়া তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে উনার শেষরক্ষার হাতিয়ার, ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ খুঁজছেন, সাপের মতো খোলস পাল্টে, রঙ পাল্টে জনগণের মধ্যে আসার কৌশল নিয়েছেন। কিন্তু উনার বিষদাঁত রয়েই গেছে। উনি শক্তি সঞ্চয় করছেন, দম ফেলার সুযোগ নিচ্ছেন আবার ছোবল হানার জন্য। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে প্রচারাভিযানে নেমেই বেগম জিয়া মিথ্যাচার শুরু করেছেন। আমি ইতোপূর্বেও বলেছি মিথ্যাচার খালেদা জিয়ার পুরনো যুদ্ধাস্ত্র। তিনি মিথ্যাচারকে শিল্পে পরিণত করেছেন। তিনি ব্যবহার করেছেন বর্বরতম আগুন সন্ত্রাস-নাশকতা-অন্তর্ঘাতের কৌশল। তাঁর বর্বরতায় বাংলার বাতাসে এখনও আগুনে পোড়া লাশের গন্ধ। তিনি শুরু করেছেন শেখ হাসিনার সময় নাকি ঢাকা-চট্টগ্রামে কোন উন্নয়ন হয়নি! এর চেয়ে বড় মিথ্যাচার আর কী হতে পারে? উনার এই মিথ্যাচারের জবাবে শুধু বলতে চাই, উনি বা উনার দলের নেতারা কি যাতায়াতের জন্য হাতিরঝিল, কুড়িল ফ্লাইওভারসহ অন্যান্য ফাইওভার ব্যবহার করেন না? নাকি উনি চোখ থাকতে অন্ধ? খালেদা জিয়ার আমলে বিদ্যুতের লোডশেডিং এখন কি আর আছে? যাঁরা ঢাকা বা চট্টগ্রামে বসবাস করেন, তাঁদের শিকড় কিন্তু গ্রামে বা ছোট শহরে। পরিবারের একটি পা কিন্তু রয়ে গেছে সেখানে। তাই ঢাকা ও চট্টগ্রামের উন্নয়নের সুফল যেমন এখানে বসবাসকারীরা পাচ্ছেন, তেমনি তাঁদের স্বজনরাও সে উন্নতির ছোঁয়া পাচ্ছেন। আবার মহানগরের বাইরে যে উন্নয়ন কাজ চলছে, তাতে করে স্থানীয়রা যেমন ভাল থাকছেন, আবার তার সুফল পাচ্ছেন মহানগরবাসীও। এ সামগ্রিক উন্নয়ন সম্পর্কের ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশব্যাপী উন্নয়নের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, মোটা দাগে দু-একটি চিত্র নজরে দেয়ার জন্য বলছি, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও ধারাবাহিক অবরোধ-হরতাল-নাশকতা-অন্তর্ঘাতের মধ্যেও অর্থনীতির জাদুকরী উন্নয়ন উনি না দেখলেও বিশ্ব দেখছে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি-মুদ্রাস্ফীতি ধারাবাহিকতার সহনীয় চাল-আটাসহ নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত রাখার জন্য কি সরকার সামান্য ধন্যবাদ পাবে না? ২০০৯ সালে যেখানে বিদ্যুতকেন্দ্র ছিল ২৭টি, এখন হয়েছে ৯২টি। তখন উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট আর এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াটে। গত পাঁচ বছরে ৪৩ হাজার কিলোমিটার নতুন লাইন বেড়েছে, দেশে একটিও সৌর সেচপাম্প ছিল না, এখন ১৯৩টি সৌর সেচপাম্প আমাদের বিদ্যুত বাঁচাচ্ছে। প্রযুক্তিবান্ধব শেখ হাসিনার সরকারের আমলে এখন ৩২ লাখ ৬০ হাজার গৃহে সৌরবিদ্যুত চলছে। আর ৪৭ শতাংশ থেকে দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় এনেছে সরকার। শিল্প আর রান্নাবান্নার গ্যাসের কথা ভাবছেন? ২৫টি নতুন গ্যাসত্রেক্ষ আবিষ্কৃত হয়েছে গত পাঁচ বছরে। গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ১ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩০৩ মিলিয়ন ঘনফুটে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দিকে তাকালে দেখবেন সবচেয়ে জনবহুল এই রাজধানীতেই ঢাকা ওয়াসা গত পাঁচ বছরে ১২৪টি নতুন গভীর নলকূপ ও ৫০০ কিলোমিটার নতুন পানিরলাইন স্থাপন করেছে, ৪১ হাজার নতুন সংযোগ দিয়েছে। এখন ৩০৩৬ কিলোমিটার পানির লাইনে ৩ লাখ ২৩ হাজারেরও বেশি সংযোগের মাধ্যমে দিনে ২১৭৮ মেগালিটারেও (২১,৭৮০ লাখ লিটার) বেশি বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন নগরবাসী। শিাক্ষা খাতের দিকে তাকালে দেখবেন, বছরের শুরুতে সারাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটি ৪৪ লাখ শিক্ষার্থীর মাঝে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ বই বিনামূল্যে দিয়েই ক্ষান্ত হইনি, সকল বোর্ডের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বই এখন রয়েছে সবার জন্য ওয়েবসাইটেও। গত পাঁচ বছরে ২ হাজার ৮৮০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২৬৪টি মাদ্রাসার নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কাজ চলছে ৯৭৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬৯৬টি মাদ্রাসা এবং ৫৮১টি কলেজের নতুন ভবন নির্মাণ। এরমধ্যে ঢাকা মহানগরীতে চলছে ১১টি নতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬টি নতুন কলেজের কাজ। ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ও এর ১ লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ শিকের চাকরি সরকারীকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় নিয়োগ করা হয়েছে ২২ হাজার শিক্ষক। বিদ্যালয়হীন ১ হাজার ৫০০ গ্রামে গড়ে উঠছে নতুন প্রাথমিক বিদ্যপীঠ। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে পুষ্টি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ফলে দেশের মানুষের গড় আয়ু ২০০৫ সালে ছিল ৬৫ বছর, এখন ৬৯। নারীদের গড় আয়ু ৬৫.৮ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০.৩ বছরে। আর পুরুষদের গড় আয়ু ৬৫.২ বছর থেকে উন্নীত হয়েছে ৬৭.৯ বছরে। ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে ৫০০ শয্যা থেকে ১০০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। ১৮টি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধির জন্য উপজেলা হাসপাতালগুলোর ১৩৬টির শয্যা ৩১ থেকে ৫০ শয্যা করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে ১৩৬টি নতুন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। দেশব্যাপী ১৩ হাজার ৭৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বিগত চার বছরে সরবরাহ করা হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ওষুধ। চিকিৎসা শিক্ষার উন্নয়নে গত পাঁচ বছরে নতুন ১৬টি মেডিক্যাল কলেজ চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিষ্ঠা করেছেন নতুন চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, কিডনি হাসপাতাল, নিউরো ইনস্টিটিউটসহ মুগদার ৫০০ শয্যার হাসপাতাল। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চালু হয়েছে ১০০ শয্যার বার্ন ইউনিট। নতুন ক্যান্সার ইউনিট কম খরচে ক্যান্সার চিকিৎসা দিচ্ছে। এছাড়াও সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাঁচটি ২০ শয্যার পৃথক ট্রমা সেন্টার ছাড়াও আরও ৩৭টি হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। শিশুর উন্নত বিকাশ নিশ্চিত করতে ১০টি হাসপাতালে স্থাপিত হয়েছে শিশু বিকাশ কেন্দ্র। যোগাযোগের দিকে তাকালে দেখবেন, ব্যস্ত যানজট এড়াতে তিন কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ কুড়িল উড়ালসেতু, গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনায় নবনির্মিত ‘মাওনা উড়ালসেতু’র পাশাপাশি সম্পন্ন হয়েছে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান উড়ালসেতুর কাজ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করা, ৩৫ কিলোমিটার নতুন ট্রেনলাইন এবং ৯৬টি নতুন ট্রেন চালুর পাশাপাশি নদী খনন করে ৮৩ কিলোমিটার নদীপথ চালু করা হয়েছে। যানজট নিরসনেও ট্রাফিক পদ্ধতির উদ্ভাবনী উন্নয়ন করা হচ্ছে। রাজধানীর সৌন্দর্যের কথা বলছেন! বেগম জিয়ার রেখে যাওয়া পচাগলা পানির হাতিরঝিল এখন নগরীর এক নান্দনিক সৌন্দর্যের পরিচায়ক। ১৬ কিলোমিটার সড়ক, সাতটি সেতু, দুটি ওভারপাস, ২০ কিলোমিটার হাঁটার রাস্তা এবং ফুটপাত সমন্বয়ে এ নয়নাভিরাম প্রকল্পটি বিমানবন্দর সড়ক, সোনারগাঁও হোটেল, পান্থপথ, তেজগাঁও, ইস্কাটন-মগবাজার, বেগুনবাড়ি-রামপুরা এবং প্রগতি সরণি ও বাংলাদেশ টেলিভিশন এলাকায় যানজট বহুলাংশে কমিয়ে এনেছে। চট্টগ্রাম মহানগরে দেড় কিলোমিটার বহদ্দারহাট ফ্লাইওয়ার ও ৬০০ মিটার দেওয়ানহাট ওভারপাস, পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড, দুই কিলোমিটার কাপাশগোলা রোড, ৪.৭৫ কিলোমিটার পাঠানটুলী রোড, অক্সিজেন থেকে কোয়াইশ পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রোডসহ ১৪.৭০ কিলোমিটার চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং-রোড নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও মুরাদপুর থেকে জিইসি জংশন পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। আবাসন খাতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। উত্তরায় ফ্ল্যাট ও আদর্শ আবাসিক শহর প্রকল্পের তৃতীয় পর্ব, ঝিলমিল প্লট, গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন, মাদানী এ্যাভিনিউ সম্প্রসারণ, বিজয় সরণি থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ওভারপাস ছাড়াও বহুতল কারপার্কিং কাম অফিস ভবন নির্মাণের কাজ চলছে অবিরাম। ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা এখন বিল দিতে পারি মোবাইলের বোতাম টিপে, ব্যাংকের লেনদেনেও সে সুবিধা রয়েছে। যে কোন তথ্যের জন্য জাতীয় তথ্য বাতায়ন খুললেই হলো। তথ্যের কথা যদি বলেন তবে বলব, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও সিনেমা ইনস্টিউটের দিকে তাকান, নতুন প্রাণ ফিরে পাওয়া চলচ্চিত্রের দিকে তাকান, কণ্ঠহীনদের কণ্ঠস্বর কমিউনিটি রেডিওর দিকে তাকান, বেসরকারী টিভি আর এফএম রেডিওর দিকে তাকান, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট ও স্বাধীন সম্প্রচার কমিশনের প্রক্রিয়ার দিকে তাকান, আর সচিবালয়ে আপনাদের জন্য খোলা গণমাধ্যম কেন্দ্রের দিকে তাকান। হরতাল-অবরোধের মধ্যেও নিত্যপণ্যের বাজারে ধারাবাহিক স্থিতিশীলতা ও সুনিশ্চিত সরবরাহ বজায় রাখাকেও কি বেগম খালেদা জিয়া অস্বীকার করবেন? আমাদের পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার ৩শ’ টাকা করাকেও কি অস্বীকার করবেন? ব্যর্থ শাসক বেগম জিয়া তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও বেগম জিয়া ছিলেন দেশ পরিচালনায় চরম ব্যর্থ। বিদ্যুতের অভাবে দেশ অন্ধকারে ডুবেছিল তখন, ছিল খাদ্যাভাব, ছিল না নিরাপদ পানি, গড়ে ওঠেনি কোন অবকাঠামো। তবে দুর্নীতিতে তিনি চ্যাম্পিয়ন। দুর্নীতিকে সিন্ডিকেটের রূপ দিয়ে তিনি উপহার দিয়েছেন হাওয়া ভবন। দিয়েছেন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা জঙ্গীবোমার কারখানা। জঙ্গীবোমাবাজদের মাঠে ছেড়ে দিয়ে তিনি শহীদ মিনার ভাঙ্গা, পীরের মাজার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সিনেমা হলে বোমা হামলা করিয়েছেন। খুনীদের দিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করে গ্রেনেড হামলায় কেড়ে নিয়েছেন বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধাসহ ২১টি প্রাণ। তাঁর খুনীরা আহসান উল্লাহ মাস্টার, শাহ এএমএস কিবরিয়া, হুমায়ূন আজাদসহ কত প্রাণ যে কেড়ে নিয়েছে, তার হিসাব দেশবাসী ভোলেনি। ক্ষমতার বাইরে থেকেও তিনি ঠিক সেই ধারা রক্ষা করেছেন। এবার আগুন সন্ত্রাসীদের দিয়ে পুড়িয়ে মারলেন শত মানুষ। কিন্তু তবুও সফল হলো না তাঁর অবরোধ-হরতাল। বেগম জিয়ার হাতে তাই রক্তের দাগ। পিঠে দুর্নীতির ছাপ। শরীরে পোড়া মানুষের গন্ধ। ইতিহাস বিকৃতি আর মিথ্যাচারের রানী। রাজনীতিতে তিনি থাকবেন কি থাকবেন না, সে সিন্ধান্তের আগে এখন তাকে বলব, কথায় কথায় বিদেশীদের কাছে ধরনা দেবেন না। তওবা করুন, জাতির কাছে মাফ চেয়ে বিচারের জন্য প্রস্তুত হোন। এতকিছুর পরও যাঁরা খালেদাকে সমর্থন দিচ্ছেন বা খালেদা যাঁদের সমর্থন দিচ্ছেন বা যাঁরা খালেদার সমর্থন নিচ্ছেন, তাঁরা সবাই আগুন সন্ত্রাসী বা আগুন সন্ত্রাসের সমর্থক। তাঁরা বাংলাদেশটাকে আগুনে পুড়িয়ে ভস্ম করতে চান। তিনি বলেন, আমি বলব না যে, সরকার সবকিছুই ভাল করছে। শাসন-প্রশাসনে ক্রটি-বিচ্যুতি-ব্যর্থতা থাকতে পারে, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে সমালোচনা-নিন্দা-ক্ষোভও থাকতে পারে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু যাঁরা দেশের ভাল চান, তাঁদের কখনই এটা ভাবা ঠিক না যে, শেখ হাসিনার শাসনের চেয়ে আরও ভাল শাসন উপহার দিতে পারবেন খালেদা জিয়া। ক্ষমতায় থাকাকালে খালেদা ও তাঁর পুত্ররা প্রমাণ করেছে, তারা দুর্নীতিবাজ-লুটেরা, বিদেশে অর্থসম্পদ পাচারকারী, জঙ্গীবাদের আশ্রয়দাতা। বিরোধী দলে থেকেও প্রমাণ করেছে তারা গণতন্ত্রবিরোধী, বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিরোধী, জনগণবিরোধী। তাই শেখ হাসিনার বিকল্প হতে পারে না দুর্নীতিবাজ, জঙ্গী ও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গী আগুন সন্ত্রাসের রানী খালেদা।
×