ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইএসের নৃশংসতা

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

আইএসের নৃশংসতা

বিশ্বে এখন অন্যতম সমস্যা হচ্ছে জঙ্গীবাদ। এ জঙ্গীবাদের আধুনিক সংস্করণ ইসলামিক স্টেট বা আইএস। আইএসের নৃশংসতা এখন ছাড়িয়ে গেছে বিশ্ব কাঁপানো আরেক সংগঠন আল কায়েদাকেও। আল কায়েদা মানুষ হত্যা করেছে কিন্তু তারা মানুষ হত্যার ভিডিও সম্প্রচার করেনি। আইএসের নৃশংসতায় যুক্ত হয়েছে মানুষকে পুড়িয়ে এবং ছাদ থেকে ফেলে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা। তারা ভিন্ন ধর্ম এবং মতাবলম্বীদের শিরñেদ ও গুলি করে হত্যা করছে। সম্প্রতি আইএস জঙ্গীরা লিবিয়ায় ৩০জন ইথিওপীয় খ্রিষ্টান নাগরিককে শিরচ্ছেদ ও গুলি করে হত্যা করে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মিশরে ২১ নাগরিককে একইভাবে হত্যা করে তারা। তাই গোটা বিশ্বের দৃষ্টি এখন মধ্যপ্রাচ্যের ঐ এলাকার দিকে। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্য যেন হয়ে উঠেছে জঙ্গীবাদ ও হানাহানির কেন্দ্রবিন্দু। তাদের নৃশংসতার কারণে প্রায় এক বছর যাবত মধ্যপ্রাচ্যে আতঙ্ক ও নৈরাজ্য নিত্যদিনের। তারা ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় চল্লিশ হাজার বর্গকিলোমিটার দখল করে এর নাম দিয়েছে ‘দি ইসলামিক স্টেট’ বা ‘আইএস’। এছাড়া পূর্ব লিবিয়াও এই জঙ্গীদের দখলে। গত বছরের ১০ জুন অনেকটা আকস্মিকভাবে আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত ‘আইএস’ জঙ্গীরা ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী মসুল দখল করে। ২৯ জুন তারা নিজেদের অধিকৃত অঞ্চলে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ‘আইএস’ নিজেদের অধিকৃত অঞ্চলে মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে ধরে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করে। প্রায়শই আইএস জঙ্গীরা সারিবদ্ধভাবে গুলি করে খুন করছে বিভিন্ন বয়সের তরুণ ও যুবকদের। এমনকি হত্যার পর দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে নিজেদের উল্লসিত ছবি সাইবার জগতে ছড়িয়ে দিয়ে শক্তিমত্তার পরিচয় দিচ্ছে। নারীর সঙ্গে তাদের আচরণ খুবই অমানবিক। আফগানিস্তানে তালেবানরা নারী শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যাপারে যে কঠোর মনোভাব দেখাত আইএসও একই নীতি অনুসরণ করছে। তারা নারীদের ক্রীতদাসীর পর্যায়ে গণ্য করে। প্রায় ১৩ হাজার খ্রীস্টানকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। শিয়া ধর্মাবলম্বীদের দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। সেখানে অবস্থানরত বিদেশীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাও ঘটেছে। তারা সাংবাদিক, এনজিও কর্মীসহ বহু মানুষের শিরñেদ করেছে? সম্প্রতি তাদের হাতে অপহৃত ২ বাংলাদেশীকে উদ্ধার করা হয়েছে। আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়। অথচ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে। জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গী মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক ও সিরিয়ায়। এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস। বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েকজনকে। আইএস নামক জঙ্গী সংগঠনটি বিশ্বজুড়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই এগোচ্ছে। তারা মধ্য প্রাচ্যসহ পাকিস্তান, আফগানিস্তানে জঙ্গী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গীরা যে ধর্মের নামেই হোক, তাদের লক্ষ্য একটাই, তা হচ্ছে মানুষ হত্যা ও সম্পদহানি। জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে হলে, শান্তিপ্রিয় সকল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
×