ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার গাড়ি বহরে ফের হামলা বাংলামোটরে

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

খালেদার গাড়ি বহরে ফের হামলা বাংলামোটরে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারকালে আবারও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে তৃতীয় দিনের মতো তাঁর গাড়িবহরে হামলা হয়। হামলাকারীদের ইটপাটকেলের আঘাতে খালেদা জিয়ার গাড়ির বাম পাশের পেছনের দিকের কাঁচ ভেঙ্গে গেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ১০জন আহত হয়েছে। এ নিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে পঞ্চম দিনের মতো মাঠে নামলেন খালেদা জিয়া। এর আগে সোমবার কারওরানবাজারে এবং মঙ্গলবার ফকিরাপুলে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা হয়। এদিকে রাতে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের বৈঠক শেষে সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে দলের পক্ষ থেকে গাড়িবহরে হামলার ঘটনার নিন্দা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, খালেদার নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক হোন অন্যথায় পরিণতি ভয়াবহ হবে। তিনি বলেন, যে কোন সময় হাওয়া বদল হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যেই আবারও হামলা চালানো হয়েছে। তবে জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। তাই সিটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা জানতে চাই সরকার গনতন্ত্র রাখবে কি রাখবে না। তবে বাকশাল কিংবা একদলীয় শাসন চাইলে স্পষ্ট করে বলুন। আমরা আমাদের পথ বেছে নেব। এক প্রশ্নের জবাবে এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব বলেন, খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে পর পর তিন দিন হামলার পরও তিনি প্রচার অব্যাহত রাখবেন। যতই ঝড়-ঝঞ্ঝা আসুক না কেন সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে খালেদা জিয়া তাঁর নির্বাচনী প্রচার অব্যাহত রাখবেন। বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার চেষ্টা করবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ, আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ প্রমুখ। বুধবার বিকেল পৌনে ৫টায় গাড়িবহর নিয়ে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে বের হন খালেদা জিয়া। গুলশান থেকে বনানী, মহাখালী ও ফার্মগেট হয়ে বাংলামোটর এসে গাড়িবহর হামলার মুখে পড়ে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সভাপতি নুরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সুলতানা আহমেদ, শামা ওবায়েদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুব আলম ডিউ প্রমুখ। বিকেল সোয়া ৫টা ২০ মিনিটে বাংলামোটর মোড় অতিক্রমকালে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর হামলা হয়। শতাধিক হামলাকারী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেøাগান দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং লাঠিসোটা ও হকিস্টিক নিয়ে গাড়িবহরে হামলা চালায়। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ‘সিএসএফ’ সদস্যরা পাল্টা হামলার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় দুই সিএসএফ সদস্যকে মারধর করে হামলাকারীরা। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের প্রায় ১০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে খালেদা জিয়ার ‘সিএসএফ’ সদস্য লে. কর্নেল (অব) শামিউলের অবস্থা গুরুতর। তার মাথায় আঘাত লেগে রক্ত ঝড়েছে। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এমএ কাইয়ুমও সামান্য আহত হয়েছেন। তাঁকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। হামলায় খালেদা জিয়ার নিশান গাড়ির বাম পাশের পেছনের দিকের কাঁচ ভেঙ্গে গেছে। তিনি গাড়িতে পেছনের সারির আগের সারিতে বসে ছিলেন। তবে খালেদা জিয়ার গাড়ি দ্রুত টান দিলে ধাক্কায় হামলায় অংশ নেয়া ২জন আহত হয়। তবে দ্রুত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ জড়িত বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর দ্রুত হেয়ার রোড ও কাকরাইল হয়ে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে চলে যায়। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অবস্থানকালে খবর পেয়ে দলের অনেক নেতাকর্মী সেখানে গিয়ে জড়ো হয়। পরে ৫টা ৫৬ মিনিটে খালেদা জিয়া নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় নিজ কক্ষে গিয়ে বসেন। দীর্ঘদিন পর খালেদা জিয়া দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ায় নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে ভিড় করেন। এ সময় কার্যালয়ের নিচে দলের কর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা সেøাগান দিতে থাকে ‘খালেদা জিয়ার ওপর হামলা কেন জবাব চাই জবাব চাই’। খবর পেয়ে বিএনপির ক’জন সিনিয়র নেতাও নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। খালেদা জিয়া তাদের সঙ্গে বৈঠক করে হামলার ঘটনাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এমএ কাইয়ুম. আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ। সন্ধ্যায় পল্টন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য় অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এ ঘটনা প্রমাণ করে সিটি নির্বাচনে ২০ দলের অংশগ্রহণে সরকার অখুশী হয়েছে। সরকার চাচ্ছে না এ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার দল অংশগ্রহণ করুক। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কাক্সিক্ষত নয়।
×