ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুবলীগ নেতা এনায়েত কবিরের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

যুবলীগ নেতা এনায়েত কবিরের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর ধানম-ির নিজ বাড়ি থেকে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এনায়েত কবির চঞ্চলের (৪৯) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা হয়েছে নিহতের বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও পাঁচ রাউন্ড তাজা বুলেট। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী ধানম-ি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জনকণ্ঠকে বলেন, এনায়েত কবির চঞ্চল আত্মহত্যা করেছেন। তিনি আত্মহত্যার আগে সুইসাইডাল নোটও লিখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় এবং লাশের ময়নাতদন্ত না করার কথা লিখে গেছেন সুইসাইডাল নোটে। পরিবার ও পুলিশের ধারণা, মা মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি মানসিক রোগে ভুগছিলেন। ঘটনার পেছনে আরও কোন কারণ আছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। বুধবার বেলা এগারোটার দিকে ধানম-ি ১ নম্বর সড়কের ৩৯ নম্বর বহুতল নিজ বাড়ির নিচতলার গাড়ির গ্যারেজের কমন বাথরুমের ভেতর থেকে চঞ্চলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত চঞ্চল ওই বাড়িরই তৃতীয় তলায় বসবাস করতেন। পরিবার ছাড়াও নিচতলায় থাকা গাড়ির চালক ও নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, সকাল দশটার দিকে বাসা থেকে বের হন চঞ্চল। এরপর তিনি হেঁটে বাড়িতে ঢোকেন। নিচতলার বাথরুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেন। এরপর মিনিট পাঁচেক পরেই বাথরুমে গুলির শব্দ হয়। সেই সঙ্গে চিৎকারের শব্দও ভেসে আসে। সঙ্গে সঙ্গে নিচতলায় থাকা নিরাপত্তারক্ষী ও চালকরা বাথরুমের কাছে যান। তাঁরা কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে এনায়েত কবির চঞ্চলের পিতা এনামুল কবিরকে বিষয়টি জানান। সবাই মিলে বাথরুমে ধাক্কাধাক্কি করেন। কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশকে খবর দেন তাঁরা। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ হাজির হয়। পারিবারিক সূত্র জানায়, সকাল দশটার দিকে চঞ্চল হাঁটার জন্য বাইরে যায়। তবে বাইরে যাওয়ার সময় পকেটে নিজের পিস্তল নেয়ার বিষয়টি কেউ জানত না বা কারও চোখে পড়েনি। চঞ্চল রাজধানীর ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ছিলেন। তিনি শেখ জামাল ফুটবল ক্লাবের পরিচালক ছিলেন বলে জানান আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক হাসনাত এ চৌধুরী। ধানম-ি মডেল থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা সুব্রত সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, পুলিশ ওই বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে চঞ্চলকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে। তাঁর মাথার ডানদিকে একটি বুলেটের ক্ষত দেখা যায়। বাথরুম থেকে একটি পয়েন্ট টু টু বোরের পিস্তলের বুলেটের খোসাসহ পিস্তলটি জব্দ করা হয়। ধানম-ি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিকী জনকণ্ঠকে বলেন, নিহত চঞ্চল কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। সম্প্রতি তাঁর মা মারা যান। এরপর থেকেই তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। বাথরুম থেকে জব্দকৃত পিস্তলটি নিহতের নামেই লাইসেন্স করা। নিহতের প্যান্টের পকেট থেকে পয়েন্ট টু টু বোরের পাঁচ রাউন্ড তাজা বুলেট উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বুলেটগুলো জব্দকৃত লাইসেন্স করা চঞ্চলের পিস্তলের। খুব সম্ভবত পিস্তলে একটি বুলেট ভরে ডান হাতে ধরে সরাসরি কানের উপরে মাথায় গুলি করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ধানম-ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, আত্মহত্যার আগে চঞ্চল একটি সুইসাইডাল নোট লিখে গেছেন। তাতে লেখা রয়েছে, তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। তাঁর লাশের ময়নাতদন্ত না করতেও সুইসাইডাল নোটে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন চঞ্চল। নিহতের স্ত্রী ছাড়াও দুই ছেলে রয়েছে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ধানম-ি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিয়াউল কবির জনকণ্ঠকে বলেন, সুইসাইডাল নোটের প্রেক্ষিতে নিহতের পিতা এনামুল কবির ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে নিহতের লাশ হস্তান্তরের আবেদন করেন। বিচারক আবেদন আমলে নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। এমন আদেশের পর নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বুধবার বিকেলে ধানম-ির ৭/এ নম্বরে জানাজা শেষে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। মৃত্যুর আলামত হিসেবে পিস্তল ও বুলেটের খোসা জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত পিস্তলেই চঞ্চলের মৃত্যু হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য পিস্তলটি ও বুলেটের খোসার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হতে পারে। নিহতের বাড়ি নড়াইল জেলার নড়াগাতি থানার ডুমুরিয়া গ্রামে বলে জানা গেছে।
×