ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানববন্ধন, স্মারকলিপি, অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা

জামায়াতপন্থী শিক্ষককে অপসারণের দাবিতে বুয়েট ক্যাম্পাস উত্তপ্ত

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

জামায়াতপন্থী শিক্ষককে অপসারণের দাবিতে বুয়েট ক্যাম্পাস উত্তপ্ত

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বহিষ্কারাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করে দোষী জামায়াতপন্থী শিক্ষককে অপসারণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। অন্যথায় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে দাবি আদায় করা হবে বলে বুধবার সংগঠনের এক বিবৃতিতে জানানো হয়। এদিকে একই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার দুপুরে বুয়েট ক্যাম্পাসে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করে বুয়েট ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শুভ্রজোতি টিকাদার ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ কনককে অন্যায়ভাবে শিক্ষক সমিতির স্বৈরতান্ত্রিক চাপে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বনকারী বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে রক্ষা করার জন্য বুয়েট প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টির অতীত ঐতিহ্য ও প্রগতিশীল চেতনা ম্লান হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদ গোষ্ঠীর অবস্থান আরও শক্ত হয়েছে। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি জানানো হয়। এদিকে বুধবার দুপুরে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পালিত মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানের পর পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী শনিবার দুপুর ১টায় প্রতিবাদ মিছিল এবং রবিবার একই সময়ে মানববন্ধন করা হবে। জামায়াতপন্থী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে দ্রুত অপসারণ করার দাবি জানিয়ে বুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি শুভ্রজোতি টিকাদার জনকণ্ঠকে বলেন, ছাত্রাবস্থায় তিনি ছিলেন বুয়েট শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা। ঘটনার পর থেকে ওই শিক্ষকের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট ডিএক্টিভেট পাওয়া যাচ্ছে। তিনি যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের পক্ষ নিয়ে এই বিচার প্রক্রিয়ার দিকে আঙ্গুলী প্রদর্শন করে কথা বলেছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর কারণ জানতে চাইলে তিনি তাদের ওপর চড়াও হন। অথচ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অজানা কারণে আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করেছে। বুধবার বুয়েটের ক্লাস পরীক্ষা হয়েছে। শিক্ষক সমিতি কিংবা উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনায় বুয়েটের ওই দুই শিক্ষার্থীকে আইনী সহায়তার বিষয়ে সকল তথ্য ও পরামর্শ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই পাঁচ দিন আগে বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ ও ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে’ আঘাতের অভিযোগে ঢাকার সিএমএম ২৮ নম্বর কোর্টে মামলা করেছে বুয়েট শিক্ষার্থী সিয়াম হোসেন। বুয়েট প্রশাসনের এমন হটকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শনিবার আমরা উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করব। একই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুয়েট শিক্ষক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করে যে বিবৃতি দিয়েছে তা অনভিপ্রেত ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে এটা ভাবতেও অবাক লাগে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতাদের বহিষ্কার কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্যের জের ধরে ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাক-বিত-া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ১২ এপ্রিল তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৮ ও ১৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কমিটির জরুরী সভায় বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ মোট চারজনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত মঙ্গলবার বুয়েট প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বুয়েট শিবির ও ‘বাঁশের কেল্লা’ তে পোস্ট দেয়া হয়। ঘটনার দিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে।
×