ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জনকণ্ঠে প্রকাশিত রিপোর্ট নিয়ে তোলপাড় ॥ এ্যাভিয়েশন চেয়ারম্যানকে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ

বিমানবন্দরে গো আযমের স্ত্রী ও স্বজনদের কেন ভিআইপি মর্যাদা-রুল

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

বিমানবন্দরে গো আযমের স্ত্রী ও স্বজনদের কেন ভিআইপি মর্যাদা-রুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দ-প্রাপ্ত রাজাকার শিরোমণি মরহুম গোলাম আযমের স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনদের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি মর্যাদা দেয়ায় আইন ভঙ্গ হয়েছে মর্মে দোষীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি রুলে আরও বলা হয়েছে, তাদের কিভাবে ভিআইপি মর্যাদা দেয়া হলো, কেন দেয়া হলো? একই সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিমানের সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানকে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী আদেশের জন্য ১২ মে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান উত্তরা জোনের ডিসি, বিমানবন্দর থানার ওসি, বিমানবন্দর পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হোসেন, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখার জাহান ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব দেলেনা বেগমকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। বুধবার সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুনতাসির উদ্দিন আহম্মেদ ৯ এপ্রিল দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত ‘গোলাম আযমের স্ত্রী ও ভাতিজা ফেরত গেল বিমানবন্দর থেকে’ শিরোনামে প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে রুল জারি করে। এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। ব্যারিস্টার মুনতাসির উদ্দিন আহম্মেদ আদালতে জনকণ্ঠের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, জামায়াতের সাবেক আমির, যুদ্ধাপরাধের মামলায় ৯০ বছরের কারাদ-প্রাপ্ত মরহুম গোলাম আযমের স্ত্রী সৈয়দা আফিফা আযম ও তার ভাতিজা লুৎফুল কবিরকে সৌদি আরব যাওয়ার সময় আটকে দেয়া হয়। বুধবার বিকেলে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে ইমিগ্রেশন করানোর সময় তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের মুচলেকা রেখে বিমানবন্দর থেকে বের করে দেয়া হয়। বিষয়টি গোয়েন্দারা যখন নিশ্চিত হন, শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান তাদের পরিচয় গোপন রেখে ভিআইপি মর্যাদার ব্যবস্থা করেন, তখন এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, সৌদি আরব যাওয়ার জন্য বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় বিমানবন্দরের ভিআইপি গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন সৈয়দা আফিফা আযম ও তার ভাতিজা লুৎফুল কবির। সঙ্গে ছিলেন গোলাম আযমের ছেলে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান আযমীর স্ত্রী তাসনীম আঞ্জুম ও অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব দেলেনা বেগম। তাঁরা দ্রুত হেঁটে চলে যান ভিআইপি ইমিগ্রেশন কাউন্টারে। এ সময় তাদের সর্বোচ্চ মর্যাদায় দ্রুততম সময়ে প্রটোকল সম্পন্ন করার কাজে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখারকে ইমিগ্রেশনে পাঠান পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হোসেন। ততক্ষণে লুৎফুল কবিরের ইমিগ্রেশন সিল মারার কাজ শেষ। এরপর যখন আফিফা আযমের পাসপোর্ট হাতে নেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা, তখন সেখানে ছুটে যান প্রভাবশালী গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তাতে এ পাসপোর্ট নিয়ে আর অগ্রসর হয়নি ইমিগ্রেশন। পরে দেখা যায়, আফিফা আযমসহ সব যুদ্ধাপরাধীর স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও নিকটাত্মীয়দের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এদিকে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস জনকণ্ঠকে বলেছেন, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান আমাদের মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। অন্যদিকে বিমানবন্দর পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হোসেন, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখার জাহান ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব দেলেনা বেগমের নামে রুল জারি করা হয়েছে। তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে জবাব দিতে হবে।
×