ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টাইগারদের লক্ষ্য এবার পাকিদের বাংলাওয়াশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২১ এপ্রিল ২০১৫

টাইগারদের লক্ষ্য এবার পাকিদের বাংলাওয়াশ

মিথুন আশরাফ ॥ দীর্ঘ ১৬ বছর লেগেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে আরেকটি জয় তুলে নিতে। যেই জয় মিলেছে, ৩ দিনে দুই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ! প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতে গেছে। এখন তো এমন অবস্থা হয়েছে, ৬ দিনে তৃতীয় জয়ের স্বপ্নই দেখা হচ্ছে। বুধবার সিরিজের শেষ ওয়ানডে আছে, সেই ম্যাচে জয় মিলে গেলে আবার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশই করবে টাইগাররা! সেই স্বপ্নই এখন পুরোদমে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তো বলেই ফেলেছেন, ‘ছেলেরা আনন্দিত। তামিম ও মুশফিক তো অসাধারণ খেলছে। তবে সব কাজ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আরও একটি ম্যাচ আছে। সেই ম্যাচেও অনেক চাই।’ চাই মানে মাশরাফি বোঝাতে চেয়েছেন জয় চাই। আরও ব্যাখ্যা করে বললেন, ‘একটা জিনিস হয়ে গেছে। আমরা যখন দেশে খেলি এবং প্রথম ম্যাচ জিতে যাই, তখনই হোয়াইটওয়াশ বা বাংলাওয়াশ নিয়ে কথা ওঠে। আমরা কোন সিরিজ খেলতে নামলে প্রতি ম্যাচই জেতার চেষ্টা করি। তৃতীয় ম্যাচেও নিশ্চয়ই আমরা হারের জন্য নামব না।’ জয়ের জন্য যে নামবেন তা আর বোঝা লাগে///। এখন দলের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস কাজ করছে, তাতে তৃতীয় ম্যাচেও জেতে যাবে বাংলাদেশ বললেও কী খুব ভুল বলা হবে। এ বাংলাদেশ যে অন্য বাংলাদেশ। পাকিস্তান যে এমন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে এর আগে কোনদিন দেখেইনি! শুরুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে ১৩ বছরে ৭ ম্যাচ খেলতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই ২৯ বছর আগে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলা শুরু হয়। সেই থেকে টানা ৬ ম্যাচ হারের পর সপ্তম ম্যাচে এসে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতেছে বাংলাদেশ। তাও আবার বিশ্বকাপের মঞ্চে, ১৯৯৯ সালে। পাকিস্তানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোন টেস্ট খেলুড়ে দলকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই জয় বাংলাদেশকে টেস্ট মর্যাদা এনে দিতেও বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। এরপর টানা ২৫ ওয়ানডে খেলে কোন জয় ধরা দেয়নি। টানা ১৬ বছর খেলে পাকিস্তানকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। এর মধ্যে টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে বাংলাদেশ। বাঘা বাঘা দলকে হারিয়েছে। শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে অনেককে আবার একের অধিকবারও হারিয়েছে। কিন্তু যখনই পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ, তখনই হার হয়েছে। ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে তো জয়ের এত কাছে গিয়েও ২ রানে হেরে ক্রিকেটাররা কেঁদেই ফেলেছিল! কেঁদেছিল পুরো জাতি! চলমান সিরিজটির আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের মাটিতে শেষ ৩ ম্যাচ যে খেলেছে বাংলাদেশ, টানা তিন ম্যাচেই (২০১২ সালের এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে ও ফাইনালে, ২০১৪ সালের এশিয়া কাপে) জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু জয় আর ধরা দেয়নি। এবার যখন জিম্বাবুইয়েকে বাংলাওয়াশের পর বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত খেলে আত্মবিশ্বাস আকাশচুম্বী হয়ে গেছে, সেই আত্মবিশ্বাসেই পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। এবার আর কান্না নয়। শুধুই হাসি আর আনন্দ। সঙ্গে উৎসব তো চলছেই। সেই উৎসবের রং আরও গাঢ় সবুজ ও লাল হবে, হাতে আছে যে সিরিজের এক ওয়ানডে তা জেতে গেলেই হয় এখন। প্রথম ওয়ানডেতে যেমন ৭৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে পাকিস্তান, দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানেই হার হয়েছে। কোনভাবেই বাংলাদেশকে আটকাতে পারছে না পাকিস্তান। আগে বাংলাদেশ ব্যাট করলে ৩০০ রানের উপরে টার্গেট দিয়ে চাপ তৈরি করছে। যে চাপে ধুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের ইনিংস। আবার আগে বোলিং করলে পাকিস্তানকে অল্পতেই বেঁধে রাখছে। তাতেও সহজে জয় মিলছে। যে দল ১৬ বছর ধরে পাকিস্তানকে হারাতে পারেনি, সেই দল ১৭ থেকে ১৯ এপ্রিল তিন দিনের মধ্যেই ২ ম্যাচে হারিয়ে দিয়েছে। তৃতীয় ওয়ানডে হতে আর মাত্র একদিন মাঝখানে থাকছে। গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার খেলায় বিরতি আছে। এ দু’দিন মিলিয়ে হলো ওয়ানডে সিরিজের ৫ দিন। বুধবার ষষ্ঠ দিনে তৃতীয় ওয়ানডে হবে। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে গেলেই ৬ দিনে তিন জয় পেয়ে যাবে। সেই সঙ্গে যে পাকিস্তানের বিপক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল জয় তোলা, সেই পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করে দেবে টাইগাররা। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে জিম্বাবুইয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার পর পাকিস্তানকেও বাংলাওয়াশ করার গৌরব অর্জন করবে বাংলাদেশ। যে অর্জনটি অন্য যে কোন দলকে বাংলাওয়াশ করার চেয়ে অনেক আনন্দেরই হবে। পাকিস্তানের এত করুণ দশা হয়েছে যে বিশ্বকাপে মিসবাহ, আফ্রিদি, ইউনুসদের নিয়েও ধুঁকেছে। এবার অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজেও ধুঁকছে। এ সিরিজের আগে এমন একটি সময় গিয়েছে, যখন পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা মানেই হার এবং হোয়াইটওয়াশ হওয়া নিয়তিই হয়ে পড়েছিল। এখন পুরো উল্টে গেছে চিত্র। পাকিস্তানকেই এখন হোয়াইটওয়াশ হওয়া থেকে কিভাবে বাঁচা যায় সেই পথ খুঁজতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে পাকিস্তান ক্রিকেটারদের সুরও বদলে যাচ্ছে। সিরিজ শুরুর আগে সাকিবের ‘আমরাই ফেবারিট’ কথার জবাব দিতে গিয়ে মোহাম্মদ হাফিজ বলেছিলেন, ‘মাঠেই এর জবাব দেয়া হবে।’ পাকিস্তান অধিনায়ক আজহার আলী বলেছিলেন, ‘তরুণ ক্রিকেটাররাই ভাল কিছু এনে দেবে।’ রবিবার যখন সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে গেছে, তখন আজহার সুর বদলেছেন। বলেছেন, ‘আমরা আবার গড়ে উঠব। আমরা শিখছি। খেলোয়াড়রা আবার কামব্যাক করবে। দলে ইনজুরি সমস্যা ভরা। সেই সঙ্গে অভিজ্ঞরাও নেই। এখন তরুণদের ওপরই ভরসা করছি।’ বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের এসব নিয়ে ভাবার সময়ই নেই। এখন যে তারা বাংলাওয়াশের স্বপ্নে বিভোর। দলে এখন এত ম্যাচ উইনার যে কেউ না কেউ ম্যাচ জেতাবেই, এ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কোন দলকে ছাড় নয়, সেই মজবুত বিশ্বাসও জন্মে গেছে। তামিম তো টানা দুই ম্যাচে শতক করে বুঝিয়েই দিয়েছেন ওয়ানডে সিরিজ শুধুই তার। মাশরাফির ‘রান মেশিন’ মুশফিক তো রান করেই চলেছেন। বল হাতে সবাই অবদান রাখছেন। বিশ্বাসও এখন ক্রিকেটারদের ভেতর এত বেশি হয়ে গেছে, পাকিস্তানের এ দলটিকে কিছুই মনে করছেন না। তাই তো মাঠের ফল বাংলাদেশের দিকেই যাচ্ছে। এ বিশ্বাস নিয়েই মাশরাফি বলেছেন, ‘আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগিয়ে গেছি। প্রথম ওয়ানডেতে জেতার পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জেতার ভাবনা করেছি। জিতেছি। সিরিজও জিতে নিয়েছি। এবার তৃতীয় ওয়ানডে সামনে। যেহেতু ২-০ হয়ে গেছে, তৃতীয় ওয়ানডেতেও জিততে চাই। করতে চাই ৩-০।’ তা হয়ে গেলেই পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করার স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে।
×