ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মনোভূমি আর্ট স্পেসে ২৯ শিল্পীর যৌথ প্রদর্শনী ‘জলরঙে ছাপচিত্র’

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২১ এপ্রিল ২০১৫

মনোভূমি আর্ট স্পেসে ২৯ শিল্পীর যৌথ প্রদর্শনী ‘জলরঙে ছাপচিত্র’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হালকা সবুজ পটভূমির জমিন থেকে বেরিয়ে এসেছে এক নারীর অবয়ব। বেগুনি বর্ণের পোশাকে আবৃত নারীটির নেই কোন মুখচ্ছবি। নাভিমূল থেকে লতা পেঁচিয়ে উঠে গেছে শরীর ছাড়িয়ে মাথা অবধি। অঙ্গজুড়ে জড়িয়ে আছে গাঢ় সবুজ পত্রপল্লব আর গলায় ঝুলছে পদ্মফুলের কলি। প্রকৃতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হলেও শত প্রতিকূলতার সম্মুখীন নারীর অন্তর্দহনের কথা বলে যায় ছবিটি। স্নিগ্ধা জামানের চিত্রিত ভায়োলেট উইমেন শীর্ষক এই চিত্রকর্মটি ঝুলছে এলিফ্যান্ট রোডের গ্যালারি মনোভূমি আর্টস্পেসে। সমকালীন জীবনধারা, নিসর্গের নান্দনিকতা, নানাবিধ মানবিক অনুভূতি, রাজনীতি, আদিবাসী জীবনের আনন্দময়তাসহ বহুবিধ বিষয়ের চিত্রকর্ম ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনালয়টিতে। এখানে চলছে ২৯ শিল্পীর সৃজিত জলরঙে ছাপচিত্র শীর্ষক যৌথ চিত্রকলা প্রদর্শনী। প্রদর্শনালয়টি আয়োজিত সেরিগ্রাফি ওয়াটারকালার প্রিন্টস বিষয়ক ছাপচিত্র কর্মশালায় চিত্রিত ছবি নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নিরীক্ষাধর্মী প্রদর্শনীটি। বাঁধাইকৃত উনত্রিশটি চিত্রকর্মের সঙ্গে প্রদর্শনীতে দেখা মিলবে প্রত্যেক শিল্পীর পৃথক পৃথক পোর্টফোলিও। ছোট্ট পরিসরের প্রদর্শনালয়টির মেঝের উপর টেবিলে বিছিয়ে রাখা হয়েছে সেসব পোর্টফোলিও। সেখানে রয়েছে আরও দুই শতাধিক ছবি। বাংলার রূপ শিরোনামের চিত্রকর্মে ফুলে ফুলে শোভিত এক বৃক্ষের দেখা মেলে। সেই গাছের ডালে বসে খাদ্য অন্বেষণ করছে কালো পাখা ও হলুদাভ শরীরের এক জোড়া পাখি। ছবিটি এঁকেছেন আদিত্য সুন্দর রায়। আমজাদ আকাশের ছবিতে গাছের গুঁড়ি থেকে বেরিয়ে আসা ছুরির বাটে দেহহীন মানুষের মু-ু বসিয়ে তুলে ধরা হয়েছে রাজনীতির নিষ্ঠুরতাকে। ড্যান্স শীর্ষক চিত্রকর্মে তিন আদিবাসী রমণীর আনন্দময় নাচের দৃশ্যকাব্য এঁকেছেন রেহানা ইয়াসমিন শীলা। প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া শিল্পী মাসুদুর রহমান বলেন, জলরঙ আশ্রিত ছাপচিত্রের এই মাধ্যমটিতে বিষয়বস্তুকে গভীরভাবে উপস্থাপনের অবারিত সুযোগ থাকে। ছাপচিত্রের অন্য মাধ্যমের চেয়ে অনেক ডিটেইলে কাজ করা যায়। আর এই প্রথম জলরঙনির্ভর কোন ছাপচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী অন্য শিল্পীরা হলেনÑ সৈয়দ হাসান মাহমুদ, আতিয়া ইসলাম এ্যানি, শহিদ আহমেদ, জেমরিনা হক, ফারজানা ইসলাম মিল্কি, মুক্তি ভৌমিক, ইসরাত জাহান কাকন, জাহিদ হোসাইন, ফজলুর রহমান, রিফাত আরা, কবির হোসেন, সাদিকুল ইসলাম, মুস্তাকিনা তারিন, উপমা দাশ, অলকানন্দা সুব্রিতা, উম্মে হাবিবা, ইশতিয়াক আকন্দ, মানিক হোসেন, চন্দর কুমার বুলু ঘোষ, সুব্রানা আখতার, ফারিহা তাসকিন, আহতাসুম মাসুক, সীমা রাণী সাহা ও মৌসুমী আক্তার। ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া পক্ষকালব্যাপী প্রদর্শনী শেষ হবে ২৪ এপ্রিল। প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। চয়ন সাহিত্য ক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ॥ আলোচনা, কবিতা পাঠ ও গানের মধ্য দিয়ে চয়ন সাহিত্য ক্লাবের ত্রয়োদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সোমবার বিকেলে। অনুষ্ঠানে ক্লাবের পক্ষ থেকে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য স্বর্ণপদক প্রদান ও চয়ন প্রকাশন হতে প্রকাশিত আজিজা খাতুন হকের ‘জয়িতা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয়। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন নাট্যজন ম. হামিদ। প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। প্রধান আলোচক ছিলেন কথাসাহিত্যিক দিলারা মেসবাহ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্লাবের কর্ণধার কবি লিলি হক। অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে ম. হামিদ বলেন, বরেণ্য কবি লিলি হকের একান্ত চেষ্টা ও ভালবাসার ফসল এই চয়ন সাহিত্য ক্লাব। দীর্ঘ ২৪ বছর পেরিয়ে ‘চয়ন ও ‘দশ দিগন্ত’ সাহিত্য ম্যাাগাজিনটি আজ ২৫ বছরে পা রেখেছে। এটা খুবই গৌরবের বিষয়। কারণ একটা সাহিত্য পত্রিকাকে একার পক্ষে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া অত্যন্ত কঠিন এক বিষয়। আমি এই পত্রিকার দীর্ঘায়ু কামনা করি। ভবিষ্যতে আরও ভাল ভাল লেখনির মাধ্যমে এ পত্রিকাটি নতুনদেরও প্রেরণা যোগাবে। উদ্বোধনী বক্তব্যের পর ‘চোখ ভরা স্বপ্ন সেই তো চয়ন’ শিরোনামের গান পরিবেশন করেন ছড়াশিল্পী ওয়াসীম হক। এরপর ‘জয়িতা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। পরে সাহিত্যিক সেলিনা খালেক, কথাশিল্পী ড. মারুফী খান ও ডা. আব্দুর রহমানকে ‘চয়ন সাহিত্য ক্লাব স্বর্ণপদক ২০১৪’ প্রদান করেন প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি। আলোচনানুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশ এখন সাহিত্যের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে নতুনদের মধ্যে সাহিত্য চর্চা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমন সময়ে লিলি হক নিরলস চেষ্টায় একটি সাহিত্য ম্যাগাজিনসহ সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে অবদান রেখে চলেছেন, যা খুব আশার সঞ্চার করে। বিত্তবানদের দৌরাত্ম্যে মানবতাবোধ হারিয়ে যেতে বসেছে। এ কারণেই আমরা সাহিত্যের দিক থেকে পিছিয়ে যেতে বসেছি। আমরা আশা করি লিলি হকের মতো আরও ব্যক্তিত্ব সাহিত্যের উন্নয়নে এগিয়ে আসবে। তাহলেই আমরা সংস্কৃতিমনস্ক এক নতুন পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারব। অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেনÑ কবি রফিকুল ইসলাম, শেখ সাইদ ফারসী, খন্দকার হাসিনা বেগম, রাবেয়া জব্বার, আনোয়ারুল হক বেলাল, বদরুল আহসান খান, আজহারুল ইসলাম রনি ও হাসিনা আক্তার। সব শেষে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সৈয়দ হোসেন রাজা, বদরুন্নেসা ডালিয়া প্রমুখ।
×