ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশ ও ‘সিএসএফ’-এর সহায়তায় দ্রুত স্থান ত্যাগ করে তিনি শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে লিফলেট ;###;বিলি করেন

উত্তরায় ভোট প্রার্থনাকালে খালেদাকে আ’লীগের কালো পতাকা প্রদর্শন

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২০ এপ্রিল ২০১৫

উত্তরায় ভোট প্রার্থনাকালে খালেদাকে আ’লীগের কালো পতাকা প্রদর্শন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেন, যারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না তারাই সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে কথা বলে। দেশের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন চায়। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি, তবে জায়গায় জায়গায় বাধা দেয়া হচ্ছে। আমি নির্বিঘেœ নির্দ্বিধায় সবার কাছে যেতে চাই। রাতে শাহজাদপুরে সুবাস্তু নজরবেলী মার্কেটে নির্বাচনী প্রচার শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমে মানুষের হাতে হাতে লিফলেট বিতরণ করে দ্বিতীয় দিনের মতো ভোট প্রার্থনা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তবে পথে পথে বাধার সম্মুখীন হন তিনি। রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় গুলশানের বাসা থেকে বের হয়ে উত্তরা এলাকায় দলীয় মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালাতে চাইলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী তার গাড়িবহরের সামনে গিয়ে কালো পতাকা প্রদর্শন করে সেøাগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তাদের মুখে সেøাগান ছিল এমন- ‘পাকিস্তানের প্রেতাত্মা পাকিস্তানে ফিরে যা’, ‘পেট্রোলবোমা মেরেছে যারা জনগণের শত্রু তারা’, ‘ছি ছি খালেদা লজ্জায় বাঁচি না’, ‘আমার ভাই মরল কেন খুনী খালেদা জবাব চাই’ ইত্যাদি। তবে খালেদা জিয়া কালো পতাকা এড়িয়ে বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্সের দোকানে দোকানে গিয়ে জনে জনে লিফলেট বিতরণ করে ভোট প্রার্থনা করেন। প্রসঙ্গত. টানা অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা সারাদেশে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায়। পেট্রোলবোমাসহ সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের নাশকতা চালিয়ে তারা প্রায় ১৫০ জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে। তাদের পেট্রোলবোমার আঘাতে দগ্ধ হয়ে এখনও অনেক মানুষ বিভিন্ন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। আর আন্দোলনকারীরা অন্তত ৩ হাজার যানবাহন আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে। ভাঙচুর করেছে আরও কয়েক হাজার যানবাহন। এরই প্রেক্ষিতে আগের দিন এক অনুষ্ঠানে লাগাতার অবরোধে নাশকতার জন্য দায়ী করে খালেদা জিয়া যেখানে যাবেন, সেখানেই তাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রবিবার বিকেল পৌনে ৫টায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিমানবন্দর পেরিয়ে জসিম উদ্দিন হয়ে উত্তরা এক নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর রোডে নেমে বিএনপি দলীয় প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে প্রচার চালাতে চাইলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী সেখানে জড়ো হয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে কালো পতাকা দেখিয়ে বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকেন। এ সময় পুরো এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। তবে পুলিশ ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী ‘সিএসএফ’ সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে কালো পতাকা এড়িয়ে দ্রুত একটু সামনে গিয়ে রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সের পাশে বিপণিবিতান এসবি কমপ্লেক্সের বিভিন্ন দোকানে গিয়ে বাস প্রতীকের প্রার্থী তাবিথের লিফলেট বিতরণ করে ভোট প্রার্থনা করেন খালেদা জিয়া। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা ও খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা ছিলেন। তবে খালেদা জিয়ার আগমনের খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এসে জড়ো হয়। খালেদা জিয়া যখন মানুষের হাতে হাতে তাবিথ আউয়ালের বাস প্রতীক সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করে ভোট প্রার্থনা করতে থাকেন তখন দলের নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানিয়ে সেøাগান দিতে থাকেন। তবে প্রধান সেøাগান ছিল ‘খালেদা জিয়া এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে’। এসবি কমপ্লেক্সের বিভিন্ন দোকানে ঢুকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাতে তাবিথ আউয়ালের লিফলেট তুলে দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা তাবিথকে ভোট দেবেন। আমরা নতুন প্রজন্মের প্রার্থী দিয়েছি। এ সময় কেউ কেউ বলেন, ম্যাডাম আমরা ভোট দেব, আমরাও পরিবর্তন চাই। তবে যারা খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দেয়নি তারা খালেদা জিয়ার কথা শুনেও নীরবতা পালন করেছেন। এসবি কমপ্লেক্স থেকে উত্তরার আমির কমপ্লেক্সে গিয়ে প্রচার চালান। এরপর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া উত্তরা হাউজবিল্ডিং মোড়ে নর্থ টাওয়ারে গিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালান। এ সময় নর্থটাওয়ারের বিপরীত পাশে আবার কালো পতাকা হাতে মিছিল করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরপর খালেদা জিয়া কসমো মার্কেটের সামনে গেলে এক পাশে বিএনপি ও অপর পাশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে পরস্পরবিরোধী সেøাগান দিতে থাকে। এর ফলে আবারও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোড়াছুড়ির ঘটনাও ঘটে। এখান থেকে মিরপুর যাবার কথা থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন খালেদা জিয়া। পরে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের উপস্থিতিতে দলীয় নেতাকর্মীদের অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল বেষ্টিত খালেদা জিয়ার গাড়িবহর উত্তরা থেকে বিমানবন্দর হয়ে খিলক্ষেত এলাকায় এলে আবারও বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে সেøাগান দিতে থাকে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাধার মুখে দ্রুত খিলক্ষেত এলাকা ত্যাগ করে কুড়িল ফ্লাইওভার পেরিয়ে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে গিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালান খালেদা জিয়া। এরপর আরও কয়েকটি স্পটে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে রাতে গুলশানের বাসায় চলে যান তিনি। উল্লেখ্য, আগের দিন শনিবারও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথর আউয়ালের পক্ষে গুলশান, বনানী, বাড্ডা, মহাখালী ও হাতিরঝিল এলাকায় মানুষের হাতে হাতে লিফলেট বিতরণ করে ভোট প্রার্থনা করেন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি হাতিরঝিলে পথকলিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। প্রথম দিনের প্রচারে জনগণের সাড়া পাওয়ায় রবিবার আবারও তিনি প্রচারে নামেন। এর আগে পহেলা বৈশাখে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দলীয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি দলীয় প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন এবং সিটি নির্বাচনে ব্যালটে নীরব বিপ্লব ঘটাতে দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। নির্বাচন কমিশনের বিধি-নিষেধের বেড়াজালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রচার চালানোর সুযোগ না থাকলেও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বেলায় এ বিধি-নিষেধ প্রযোজ্য নয়। তাই তিনি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চারাচ্ছেন। সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে Ñমওদুদ ॥ নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিরপেক্ষতা হারিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। রবিবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতা প্রমাণ ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে সিটি নির্বাচনে অবিলম্বে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
×