ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সন্দেহের তীর স্বামীর দিকে

গৃহবধূকে গলায় গেঞ্জি পেঁচিয়ে হাত বেঁধে তরমুজ ক্ষেতে ফেলে রাখায় তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৯ এপ্রিল ২০১৫

গৃহবধূকে গলায় গেঞ্জি পেঁচিয়ে হাত বেঁধে তরমুজ ক্ষেতে ফেলে রাখায় তোলপাড়

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী, ১৮ এপ্রিল ॥ গলায় গেঞ্জি পেঁচানো, দুই হাত দড়ি দিয়ে বাঁধা। গায়ে কাঁদামাটি মাখা ও পরনের স্যালোয়ার কামিজের বিভিন্ন অংশ ছেঁড়া। বাসা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে তরমুজ ক্ষেতে এভাবে গৃহবধূ তানিয়া বেগমকে(২২) অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে আঁতকে ওঠে কৃষকরা। তাদের চিৎকারে শতশত মানুষ জড়ো হয়। কিন্তু সে জীবিত না মৃত এ আতঙ্কে কেউ তার কাছে যেতে সাহস পায়নি। খবর দেয়া হয় কলাপাড়া থানায়। তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গৃহবধূকে অচেতন মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চম্পাপুর ইউনিয়নের উত্তর মাছুয়াখালী (পাটুয়া) গ্রামে শনিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গোটা এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন। গৃহবধূ তানিয়ার স্বামী ইলিয়াশ মৃধার দাবি, শুক্রবার রাতে তারা চার বছরের শিশু রবিউলকে নিয়ে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত তিনটায় ঘুম ভেঙ্গে গেলে উঠে দেখেন তানিয়া বিছানায় নেই। এরপর শ্বশুরবাড়িসহ বিভিন্নস্থানে তাকে খুঁজেছেন বলে থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের জানান। অথচ তানিয়া নিখোঁজের সংবাদ প্রতিবেশী কেউ জানে না। তানিয়ার স্বামী এ ঘটনার জন্য একই গ্রামের কবির মৃধা ও আউয়াল মিয়াকে দায়ী করেন। তবে কখন-কিভাবে গৃহবধূকে নির্যাতন করা হয়েছে তা জানাতে পারেনি। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ভর্তি হওয়ার চার ঘণ্টায়ও জ্ঞান ফেরেনি তানিয়ার। ডাক্তাররা এগিয়ে এলে চিৎকার করে বলছে আমারে আর মাইরেন না। কিন্তু কি ঘটেছিল ঘটনার রাতে তা জানাতে পারছে না গৃহবধূর স্বজনরা। পুলিশ প্রহরায় তার চিকিৎসা চলছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আনসার গাজী জানান, তানিয়াকে এর আগেও একাধিকবার স্বামী ও ননদ নির্যাতন করেছে। কিন্তু এবার তাকে এভাবে মারধর করে তরমুজ ক্ষেতে ফেলে রাখার কারনণ বুঝতে পারছি না। ঘটনাস্থল থেকে ওই গৃহবধূর বাড়ি প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। তিনি স্থানীয় মাটিকাটা শ্রমিক জামাল হোসেনের বরাত দিয়ে দিয়ে জানান, ফজরের নামাজের সময় তানিয়ার স্বামী ইলিয়াশ মৃধাকে তরমুজ ক্ষেত থেকে যেতে দেখেছেন। তখন তার পায়ে কাঁদা লেগেছিল। তানিয়ার চাচি নিলুফা বেগম জানান, প্রায়ই তাকে নির্যাতন করা হতো। এই নিয়ে দুই মাস আগে একটি মামলাও হয়। পরবর্তীতে তাকে আর নির্যাতন করা হবে না এই শর্তে মামলা প্রত্যাহার করা হয়। গ্রামবাসী জানান, তানিয়াকে যে দড়ি দিয়ে দুইহাত বাঁধা ছিল তা গার্মেন্টসের কাপড়ের গাঁইট বাঁধতে ব্যবহার হয়। তানিয়ার ননদ কাকলী গার্মেন্টসে কাজ করে। আর ঘটনাস্থল থেকে যে জুতা ও গেঞ্জি উদ্ধার করা হয়েছে তা তানিয়ার স্বামীর। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার জানান, তাদের ধারণা গৃহবধূকে হত্যার জন্যই ওই বিলের মধ্যে নেয়া হয়েছিল। ঘাতকরা তাকে মৃত ভেবে ওভাবে ফেলে রেখে গেছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের তিনি বিচার দাবি করেন। কলাপাড়া হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ জেএইচ খান লেলিন জানান, তানিয়ার দুই হাত ও গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে বলে তারা ধারণা করছেন।
×