ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কিলিং মিশনে জঙ্গী সংগঠনের সিøপার সেল

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৯ এপ্রিল ২০১৫

কিলিং মিশনে জঙ্গী সংগঠনের সিøপার সেল

শংকর কুমার দে ॥ খুবই ভয়ঙ্কর ও দুর্ধর্ষ প্রকৃতির জঙ্গী সংগঠনগুলোর সিøপার সেল। প্রতিটি জঙ্গী সংগঠনে কাজ করে শতাধিক সিøপার সেল। প্রতিটি সেলে কাজ করে ৫-৭ জন সদস্য। সদস্যদের মধ্যে কেউ কাউকে চেনে না। কাটআউট পদ্ধতিতে কাজ করে তারা। কিলিং মিশনে নেমেছে সিøপার সেল। প্রগতিশীল লেখক ও ব্লগারদের নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকাই হচ্ছে সিøপার সেল গঠনের উদ্দেশ্য। হত্যা করা তাদের জন্য ফরজ। বেহেশত পাওয়ার আশায় একের পর এক হত্যা করে চলেছে সিøপার সেল সদস্যরা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানায়, প্রগতিশীল লেখক ও ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যাকারীরা জঙ্গী সংগঠনের সিøপার সদস্য। দু’জন সিøপার সদস্য হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও তাদের সহযোগী হত্যাকারী সিøপার সদস্যদের গ্রেফতার করা সম্ভবপর হচ্ছে না। আর লেখক ও ব্লগার অভিজিত হত্যাকা-ের পর ব্যাপক তৎপরতা সত্ত্বেও গ্রেফতার হয়নি কোন ঘাতক। সিøপার সেল গঠন করে জঙ্গী সংগঠনগুলো কিলিং মিশনে নামায় উদ্বিগ্ন গোয়েন্দারা। একেকটি জঙ্গী সংগঠনে অন্তত শতাধিক সিøপার সেল রয়েছে। সিøপার সেলের একজন সদস্যের সঙ্গে অন্য সদস্যের কোন পরিচয় থাকে না। এমনকি কিলিং মিশনে অংশ নেয়ার আগ পর্যন্ত সিøপার সেলের সদস্যরা একে অপরের কাছে অচেনা থাকে। এ হত্যা তাদের ওপর ‘ফরজ’ বলে নাযিল হয়েছে। বেহেশত পেতে তাদের এ হত্যা করতে হবে। এ কারণে একজন সদস্য অপর সদস্যের ব্যাপারে বিস্তারিত কোন তথ্যই জানে না। সিøপার সেলের প্রধান তাদের নির্দিষ্ট ব্যক্তির ছবি দেখিয়ে দেয়। ওই ব্যক্তির অবস্থান সম্পর্কে রেকি করা হয়। এরপর নির্দিষ্ট সময় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়, এর বেশি কিছুই জানে না ঘাতকরা। মিরপুরে ব্লগার আহমেদ রাজীব, ঢাবি ক্যাম্পাসে লেখক ও ব্লগার অভিজিত রায় হত্যা, রাবি শিক্ষক ড. মোহাম্মদ ইউনুস, ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলন, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, শান্তামারিয়ম ইউনিভার্সিটির ব্লগার নেয়াজ মোর্শেদ বাবু, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আশরাফুল ইসলামকে হত্যা করেছে জঙ্গী সংগঠনের সিøপার সেলের সদস্যরাই। একটি সিøপার সেলের সদস্যরা অন্য সিøপার সেলের সদস্যদের চেনে না। তেজগাঁওয়ে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু খুনের সময় গ্রেফতার হওয়া জিকরুল্লাহ ও আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিøপার সেল সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। উইকিপিডিয়াতে ‘সিøপার সেল’ সম্পর্কে বলা আছে, একদল মানুষ লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে কোন সন্ত্রাসী বা সহিংস কর্মকা- না করা পর্যন্ত তাদের জানা যায় না। এদের ‘সিøপার সেল’ বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যে সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীতে সিøপার সেল গঠন করে অপারেশন চালানোর ঘটনা রয়েছে। ইউরোপের আয়ারল্যান্ডে প্রভিশনাল আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি (পিরা) নামে একটি সংগঠনে সিøপার সেল গঠনের তথ্য জানা যায়। এশিয়া মহাদেশে সর্বপ্রথম ভিয়েতনামে কোন সরকারের বিরুদ্ধে এই সিøপার সেল অপারেশন চালায়। দক্ষিণ ভিয়েতনামের ন্যাশনাল ফ্রন্ট অব লিবারেশন (এনএফএল) নামে একটি সংগঠনে সিøপার সেল গঠন করে অপারেশন চালানো হয়। আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদায় হামলা চালানো হচ্ছে। এরই ধারবাহিকতায় বাংলাদেশে জঙ্গী সংগঠনগুলোর মধ্যে এ ধরনের সিøপার সেল এখন সক্রিয়। গোয়েন্দা শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, জঙ্গী সংগঠনগুলোর মধ্যে সিøপার সেল এ ধরনের হত্যা কার্যক্রম চালাচ্ছে। জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাহরীরসহ বেশ কয়েকটি জঙ্গী সংগঠনের মধ্যে শতাধিক সিøপার সেল সক্রিয়। সিøপার সেলে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ সাতজনের সদস্য মিলে একটি গ্রুপ। এরমধ্যে একজন দলনেতা থাকে। তাদের প্রত্যেককে একে অপরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় মূল পরিকল্পনাকারী। দলনেতাই প্রত্যেক সদস্যকে মিশনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়ে দেয় কাকে, কিভাবে খুন করতে হবে। পরিকল্পনাকারী নিজেই সিøপার সেলের সদস্যদের অস্ত্র সরবরাহ করে। বেশিরভাগ সময় ধারালো চাপাতিসহ ছোরাজাতীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার পাশাপাশি বিশেষ ধরনের ইনজেকশনও ব্যবহার করে সিøপার সেলের সদস্যরা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সিøপার সেলের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যার নির্দেশের ক্ষেত্রে জেএমবি সদস্যরা ব্যবহার করছে গোপন আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ঠিকানা। সিøপার সেলের সদস্যরা ওয়েবসাইটে ঢোকার জন্য প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে। সম্প্রতি ঢাকার মিরপুরের মণিপুর স্কুল ও কলেজের দুই শিক্ষককে হত্যার জন্য সিøপার সেলের সদস্যদের গোপন আইপি ঠিকানাসহ একটি ওয়েবসাইট থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। দুই শিক্ষককে হত্যা করতে গিয়ে এই সিøপার সেলের সদস্য রুবেল গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। এই সিøপার সেলের সদস্যদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের তৎপরতার ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। কিন্ত ঘাতকদের শনাক্তকরণে হিমশিম খাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
×